|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা |
তিরিশ বছরেও |
অধরা সরণি |
স্বপন দাস |
মাত্র দেড় কিলোমিটারের একটা বাইপাস রাস্তা। কিন্তু তিরিশ বছরেও সেটি পুরো তৈরি হল না। অথচ রাস্তাটি হলে স্বস্তি দিতে পারত এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষকে।
দীর্ঘ দিন ধরেই বাখরাহাট রোডের ঠাকুরপুকুর বাজারের যানজট মানুষের কাছে অসহনীয়। বাজার পেরিয়ে ডায়মন্ড হারবার রোডে পৌঁছতেই লেগে যায় ঘণ্টাখানেক। কলকাতা বা দক্ষিণ অংশ থেকে বিড়লাপুর, বজবজ শিল্পাঞ্চলে যাওয়ার জন্য বাখরাহাট রোডে যেতেও একই অবস্থা হয়।
এই যানজট সমস্যার সমাধানের জন্য আশির দশকের গোড়ায় জোকা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে পরিকল্পনা নেওয়া হয়, হাঁসপুকুর ২ নম্বর পোলের কাছে বাখরাহাট রোড থেকে নয়ানজুলির ও খালের ওপর দিয়ে একটি রাস্তা ইএসআই হাসপাতালের গা ঘেষে ডায়মন্ড পার্কের উল্টো দিকে ডায়মন্ড হারবার রোডে এসে মিশবে। |
|
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, রাস্তাটি হবে ২০ ফুট চওড়া, ছোট গাড়িগুলিকে এই রাস্তায় পাঠানো হবে। সেই মতো পঞ্চায়েতের তরফে পাশে থাকা ব্রতচারী গ্রাম কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে জমিও পাওয়া যায়। কাজ শুরুও হয়। কিন্তু ২০০ মিটারের মতো কাজ হওয়ার পরে বন্ধ হয়ে যায়।
সেই সময়ে ব্রতচারী সমিতির তরফে গ্রামের দায়িত্ব ছিল নরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। তিনি বলেন, “বর্তমানে যে রাস্তাটি রয়েছে সেটি আমাদের ব্রতচারী গ্রামেরই অংশ। আমরা জমিটি দিই। তখন অন্যতম শর্তই ছিল, রাস্তাটির নাম হবে ‘ব্রতচারী সরণি’। আমাদের গ্রাম থেকে মাটি কেটে ওই অংশটি উঁচুও করা হয়। কথা ছিল বহু গাছ লাগানো থাকবে রাস্তার পাশে। কিন্তু কী কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেল জানি না।”
জোকা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান গোপাল সরকার বললেন, “আমরা সেই সময়ে বেশ তোড়জোড় করেই কাজে নেমেছিলাম। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় মানুষ। অনেকে স্বেচ্ছাশ্রমও দিয়েছিলেন। মাটি দিয়ে, রাবিশ ফেলে কিছুটা রাস্তা তৈরি হওয়ার পরে অর্থসঙ্কটে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।”
পরে পঞ্চায়েত প্রধান হন বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
তিনি বলেন, “রাস্তাটি খালের উপর দিয়ে যাওয়ার জন্য খালটিকে মাটির নীচে বড় পাইপের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও হয়েছিল। কিন্তু অর্থাভাবে সে পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি।”
বর্তমান উপপ্রধান শৌভিক দাস বলেন, “ওই রাস্তাটি সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, এই মুহূর্তে আমাদের কোনও পরিকল্পনা নেই ওটি তৈরি করার। কারণ এমনিতেই জোকা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত অর্থসঙ্কটে জর্জরিত। উন্নয়নমূলক কাজ প্রায় স্তব্ধ। ফলে ওটা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার অবকাশ এই মুহূর্তে নেই।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখও জানান, ওই রাস্তা সম্পর্কে কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই।
এখন বহু মানুষ হাঁটাপথ হিসাবে রাস্তাটি ব্যবহার করেন। শ্রীবর্ধনপল্লি, বাবুরবাগান, চেকপোস্ট, ২ নম্বর পোল-এর বাসিন্দারা বিশেষ করে এই পথটিকে ব্যবহার করে ডায়মন্ড হারবার রোডে আসেন। গাড়ি চলাচলের অবস্থায় নেই রাস্তাটি। স্থানীয় বাসিন্দা অরূপ আঢ্য বলেন, “সাংসদ কোটার টাকাতেও তো বহু রাস্তা হচ্ছে। এ রকম একটা জরুরি রাস্তার জন্য অর্থাভাব হবে কেন?”
কিন্তু তিরিশ বছরেও এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|