|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর |
বেহাল হাসপাতাল |
চিকিৎসার সন্ধানে |
দেবাশিস দাস |
ব্যস্ত রাস্তার পাশেই হাসপাতাল। কোনও রকম নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই তারস্বরে হনর্র্ বাজিয়ে দিন-রাত ছুটে চলেছে অজস্র গাড়ি। অথচ, ‘নো হর্ন’ নোটিস চোখেই পড়ে না। শুধু দিনভর গাড়ির আওয়াজই নয়, কুলপি রোডের পাশে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের পরিষেবা এবং পরিকাঠামো নিয়ে রোগী, তাঁদের আত্মীয়-পরিজন এবং বাসিন্দাদের অভিযোগের শেষ নেই।
বারুইপুর শহর এবং গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা মূলত এই হাসপাতালের উপরেই নির্ভরশীল। তবে এলাকার মানুষ এবং রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। রোগীর অবস্থা জটিল হলেই অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। এ ছাড়া, হাসপাতালে ঢোকার মুখেই রয়েছে উন্মুক্ত শৌচাগার ও ভ্যাট। এক এক সময় তা থেকে এমন দুর্গন্ধ ছড়ায় যে হাসপাতাল চত্বরে থাকাই দায় হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ রোগী ও তাঁদের পরিজনদের।
বাসিন্দাদের বক্তব্য, বারুইপুর হাসপাতাল নামেই মহকুমা হাসপাতাল। কারণ, একটি মহকুমা হাসপাতালে যে সমস্ত সুবিধা পাওয়ার কথা, অধিকাংশ সময়েই এখানে তা মেলে না। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসক, নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সংখ্যা এখানে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। প্রায় সাত মাস আগে এক জন সার্জেন অবসর নিলেও তাঁর জায়গায় এখনও নতুন সার্জেন আসেননি। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্র হাসপাতালে এসে পড়ে আছে দু’বছরেরও বেশি। |
|
অথচ, রেডিওলজিস্টের অভাবে তা ব্যবহার করা যায় না। ঠিক একই কারণে এক্স-রে করা হলেও রোগীদের হাতে এক্স-রে রিপোর্ট দেওয়া যায় না। তার বদলে সরাসরি এক্স-রে প্লেট দিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালের নিজস্ব একটি অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও তার চালক অবসর নেওয়ার পরে নতুন কোনও চালক এখনও পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়নি। ফলে রোগীর পরিজনদের বেশি ভাড়া দিয়ে বাইরে থেকে অ্যাম্বুল্যান্স নিতে হয়।
বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়, এখানকার কর্মিসংখ্যা যে কম তা বহু বার স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে, কিন্তু এখনও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে চিকিৎসাজাত নানা বর্জ্য পদার্থ। আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট যে ট্যাঙ্ক রয়েছে, তার মুখ খোলা। কোথাও ভেঙে পড়েছে কার্নিস, কোথাও বা জমিয়ে রাখা হয়েছে হাসপাতালেরই পুরনো ভাঙা খাটের অংশ বিশেষ। এমনকী, হাসপাতালের নিকাশি নর্দমাগুলির জমা জলও সরে না দীর্ঘ দিন।
হাসপাতালের দেওয়ালে রয়েছে ২০০৫ সাল পর্যন্ত অনুমোদিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নোটিস। যদিও বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুব্রত রায়ের দাবি, ২০১১ সাল পর্যন্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমতি নেওয়া রয়েছে। তা পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করা হবে। হাসপাতালের পরিষেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মহকুমা হাসপাতাল হলেও এত দিন ধরে এটি গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে চলত। এরই মধ্যে এই হাসপাতালকে আরও উন্নত করার জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” |
|
কিন্তু হাসপাতালের সামনেই শৌচাগার কেন? বারুইপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের শক্তি রায়চৌধুরী বলেন, “কুলপি রোডের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। তাই এ ক্ষেত্রে পুরসভার কিছুই করার নেই।” যদিও পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, স্থানীয় পুরসভা অনুরোধ না করলে সাধারণত তারা কোথাও ভ্যাট বা শৌচাগার তৈরি করে না। ওই দফতরের আলিপুর ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সৌমিত্র সেন বলেন, ‘‘বিষয়টি সর্ম্পকে সবিস্তার খোঁজ নিতে হবে।”
দীর্ঘ দিন ধরে বারুইপুর হাসপাতাল যে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে রয়েছে এ কথা স্বীকার করেছেন বারুইপুর পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক এবং রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কথায় কথায় কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা বন্ধ করতে চেষ্টা চলছে। হাসপাতালে নতুন ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং কার্ডিয়াক ইউনিট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আগের চেয়ে হাসপাতালের পরিষেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শিখা অধিকারী বলেন, “ওই হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর এরই মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। যে সমস্যাগুলির এখনও সমাধান হয়নি সে সম্পর্কে সবিস্তার খোঁজ নেওয়া হবে।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|