|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর |
জঞ্জাল |
বিটি রোডের ধারে |
বিতান ভট্টাচার্য |
পিচ ঢালা মসৃণ পথের ধারে আবর্জনার স্তূপ। পুরসভার ময়লা ফেলার গাড়ি রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি এখানে শহরের বর্জ্য ফেলে যায়। পরিবেশ নিয়ে গোটা বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন তখন উত্তর শহরতলির বুক চিরে চলে যাওয়া রাজ্য সড়কের ধারে দিনের পর দিন জমছে জঞ্জালের পাহাড়। পশু-পাখির মৃতদেহ আর আবর্জনা পচে বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ। বাতাসে কটূ গন্ধ। উড়ছে নোংরা পলিথিন, ছেঁড়া কাগজ, ময়লা। জমতে জমতে আবর্জনা গ্রাস করছে রাস্তাকে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সবটাই হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়, পুর-প্রশাসনের উদ্যোগে।
বিটি রোড। কলকাতা থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত এই রাস্তার নীচ দিয়ে পলতা থেকে টালা পর্যন্ত পানীয় জলের পাইপ গিয়েছে। বিদ্যুতের লাইন গিয়েছে। টেলিফোনেরও লাইন গিয়েছে। মাঝে মাঝেই গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা খুঁড়ে মেরামতির কাজ চলায় এমনিতেই যান চলাচল ব্যাহত হয়। কিন্তু পথচারীদের কাছে সব থেকে বড় বালাই এখন জঞ্জাল। তাঁদের অভিযোগ, মূলত পানিহাটি পুরসভার জন্য এই দূষণ ছড়াচ্ছে। পড়শি খড়দহ পুর এলাকাতেও এর ছোঁয়া লেগেছে। সিপিএম ও তৃণমূল পরিচালিত দুই পুরসভার মধ্যে কার জঞ্জাল তা নিয়ে চাপান-উতোরও আছে। বাদ যায়নি অন্য পুরসভাগুলিও।
চুপি চুপি রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলার বদ-অভ্যাস কাটাতে পারেননি পুর নাগরিকেরাও। ব্যস্ত রাস্তার ধারে যেখানে দোকান কম, বসতি কম সেখানেই জঞ্জালের ডিপো গজিয়ে উঠেছে। এমনিতেই এই রাস্তায় ফুটপাথ বলে কিছু নেই। নেই কোনও সার্ভিস লেন। ফলে গাড়ি ছাড়াও পথচলতি মানুষের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে প্রতি মুহূর্তে। |
|
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক গুরুপদ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সিপিএমের রাজত্বে রাস্তায় জঞ্জাল জমত। আমরা বার বার প্রতিবাদ আন্দোলন করেছি। এখন আমাদেরই জোট সরকার। বি টি রোডের ধারে জঞ্জাল জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গিয়েছে, কারও হুঁশ নেই।’’ বিটি রোডে বহু জায়গায় আলো থাকা সত্ত্বেও জ্বলে না। দিন কয়েক আগেই নৈহাটির মামুদপুরের এক বাসিন্দা মোসারফ হোসেন মোটরবাইকে করে আসার সময় অন্ধকারে জঞ্জালের স্তূপে ধাক্কা মেরে উল্টে যান। সোদপুরের অনন্ত চট্টোপাধ্যায়ও সাইকেলে যাওয়ার সময় বেপরোয়া গাড়ি থেকে বাঁচতে জঞ্জালের স্তূপে ধাক্কা মারেন।
পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান চারণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের নিজেদের এলাকায় জায়গা নেই। কিন্তু বাইরে কোথাও তো ফেলতে পারি না। সাময়িক ভাবে রাস্তার ধারে ফেলা হয়েছে।’’ পানিহাটিতে জঞ্জাল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হিসাবে রামচন্দ্রপুর ভাগাড়টিকে তৈরি করার কথা হলেও তা বিশ বাঁও জলে। স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে প্রতিরোধ করায় জঞ্জাল ফেলতে বাধা পাচ্ছে পুরসভা। অন্য দিকে, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারেও কিছু দিন আগে জঞ্জাল ফেলে আসছিল পুরসভার গাড়ি। সেখান থেকেও প্রতিবাদ হয়েছে। তার মধ্যেও ফাঁকা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে নিচু জলা জমিগুলি রাতের অন্ধকারে ভরাট হচ্ছে এই জঞ্জাল দিয়েই। |
|
পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘বিটি রোডে জঞ্জালের জন্য দূষণ হচ্ছে। আমরা কিছু করতে পারছি না। শুধু পানিহাটি এলাকাতেই জঞ্জাল সমস্যা এত প্রকট যে পুরসভাও তা নিয়ে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে। রোজ যে পরিমাণ জঞ্জাল এখানে জমে তা কোথায় ফেলা হবে তার জন্য কোনও পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি। উল্টে জনবসতি বেড়েছে। পুরকর্মীরা গাড়ি বোঝাই করে জঞ্জাল ফেলতে গেলে বাসিন্দাদের প্রতিরোধও বেড়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘১৯ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর পানিহাটিতে আসার কথা। এই ভয়ঙ্কর সমস্যা নিয়ে কথা বলব। এটাকে মেটাতেই হবে।’’
বিটি রোডটি পূর্ত দফতরের আওতায়। পূর্ত দফতরের চিফ এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সিদ্ধার্থ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিটি রোডের ধারে যেখানে জনবসতি নেই সেখানে প্রতিবাদ, প্রতিরোধও নেই। ময়লার পাহাড় বানালেই বা কে কী বলবে? পুরসভা ময়লা ফেলে যায় আর আমরা টাকা খরচ করে লোক লাগিয়ে পরিষ্কার করি। আজব ব্যবস্থা। পুজোর আগেই দমদম চিড়িয়ামোড় থেকে ডানলপ পর্যন্ত জঞ্জাল পরিষ্কার করিয়েছি। পুরসভাগুলোকে বহু বার অনুরোধ করা হয়েছে। কোনও ফল হয়নি।’’ |
|
|
|
|
|