পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
নেই ভ্রুক্ষেপ
জগদ্দল
রোদে-জলে বারাসত স্টেডিয়ামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বহু লক্ষ টাকা দিয়ে কেনা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সাতটি রোলার। ফলে রোলারগুলি ভাড়া খাটিয়ে কোনও আয় তো হচ্ছেই না, উপরন্তু এর জন্য পরিষদের প্রচুর অর্থ অপচয় হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তবে এ ক্ষেত্রে কোনও রকম ইতিবাচক পদক্ষেপ করেনি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ।
রাস্তা সারাইয়ের কাজ করতে ১৯৯০ সালে মোট ১৪টি রোলার কেনে জেলা পরিষদ। পরিষদ সূত্রে খবর, দু’টি সংস্থার কাছ থেকে কেনা ওই রোলারগুলির প্রতিটির দাম ছিল প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। জেলা পরিষদ এবং ঠিকাদারদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এই ধরনের এক একটি রোলারের মূল্য ১৫-১৬ লক্ষ টাকা। ওই রোলারগুলির মধ্যে সাতটি রোলার বেশ কিছু দিন কাজেও লাগানো হয়। তবে বেশ কয়েক জন চালক অবসর নেওয়ায় বছর ৫-৭ আগে বসিয়ে দেওয়া হয় ওই রোলারগুলি। সেই থেকে সেগুলির ঠাঁই হয় বারাসত স্টেডিয়ামে। বর্ষার জলকাদায় স্টেডিয়ামের মাটিতে রোলারগুলির চাকা প্রায় পুঁতে যাওয়ায় বর্তমানে সেগুলি কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে। রোলারগুলির চারপাশে গজিয়েছে আগাছা, লতাগুল্ম।
চারটি রোলার এক জন ঠিকাদারকে লিজে দেওয়া হয়েছে। রাস্তা সারাইয়ের যাবতীয় কাজ ঠিকাদারই করায় কাজের অভাবে কার্যত বসিয়ে রাখা হয়েছে আরও দু’টিকে। তবে অভিযোগ উঠেছে, ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রাপ্য লিজের ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এখনও আদায় হয়নি। কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার পক্ষ থেকে জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় ঠিকাদারের কাছ থেকে ওই প্রাপ্য টাকা আদায়ের জন্য প্রস্তাব রাখা হলেও কোনও কাজ হয়নি। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে, রোলারের চালকদের বসিয়ে মাইনে দেওয়া হচ্ছে। জেলা পরিষদের অডিটে এই অভিযোগ লিপিবদ্ধও হয়েছে। তবে এখনও এ ব্যাপারে কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা আলি আহমেদ বলেন, “বহু টাকা দিয়ে কেনা এই রোলারগুলি পড়ে পড়ে মরচে ধরে নষ্ট হচ্ছে। অডিটে এ নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঠিকাদারের কাছে রোলার লিজের দরুন প্রাপ্য ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আদায়ের জন্য প্রস্তাব এনেছিলাম। তখন সিদ্ধান্ত হয়, লিজ বাবদ জেলা পরিষদের প্রাপ্য টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে ৫ শতাংশ বার্ষিক সুদ সমেত কেটে নেওয়া হবে। তবে সেই টাকা আজও আদায় হয়নি। এ ছাড়া, জেলা পরিষদে ৫ জন রোলার চালককে ২০০৭ সাল থেকে কার্যত বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে।”
সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত, খারাপ হয়ে যাওয়া রোলারগুলি মেরামত করে চালকদের দিয়ে কাজ করানো সম্ভব। জানা গিয়েছে, একটি ‘ভায়াব্রেটর রোলার’ও খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, জেলা পরিষদ এ ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন। যদিও উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি সিপিএমের ভরত দাস বলেন, “রোলারের বিষয়ে জেলা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। সেগুলি সারিয়ে ব্যবহার করা সম্ভব না হলে বিক্রি করার কথাও ভাবা হচ্ছে। ঠিকাদারের সঙ্গে লিজের টাকা শোধ করার বিষয়ে কথা হয়েছে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.