এক সঙ্গে স্কুল বাস থেকে নেমে গত কাল বিকেলেও হাসতে হাসতে হাঁটছিল দুই উচ্ছল কিশোর-কিশোরী। এর কয়েক ঘণ্টা বাদে যে তারা দু’জনে বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করবে তা ছিটেফোঁটাও আঁচ করতে পারেনি ওই দু’টি ছেলেমেয়ের স্কুলের সতীর্থরা।
মৃত কিশোরী, সর্বানী দাসের শেষকৃত্য আজ রাঁচিতে সম্পন্ন হয়েছে। আর তার বন্ধু আদিত্য করণ শর্মা এখনও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। কেন দুই কিশোর-কিশোরী হঠাৎ বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিতে গেল, তা নিয়ে স্থানীয় পুলিশ এখনও অন্ধকারে। রাঁচির এসপি (নগর) রঞ্জিতকুমার প্রসাদ বলেন, “আমরা আদিত্যর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছি। আদিত্যর কথা থেকেই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। জানা যাবে, কেন এমনটা ঘটল।” তবে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সর্বানী আর নবম শ্রেণির আদিত্যের মধ্যে কিশোর প্রেমের সম্পর্ক উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। সেই সঙ্গে দু’জনেরই সাম্প্রতিক পরীক্ষার ফল ততটা ভাল হয়নি বলেও পুলিশ জানাচ্ছে। আদিত্যর বাবা নীতীশ শর্মা অবশ্য দাবি করেন, “ওরা দু’জন নিছকই বন্ধু। তবে ওদের পড়াশোনার ফল ইদানীং ভাল হচ্ছিল না। সম্ভবত পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ভয় থেকেই ওরা এমন একটা কাণ্ড করে বসল।”
তবে স্কুলের অন্য পড়ুয়ারা দু’জনকে দেখে আপাত ভাবে কোনও অবসাদ বা হতাশা আঁচ করতে পারেনি। নিবারণপুরেই বাস থেকে নামত ওই দুই পড়ুয়া। আদিত্যের বাড়ি কাছেই। সামান্য এগিয়ে, উড়ালপুল পেরিয়ে, অনন্তপুরে সর্বানীর বাড়ি যেতে হয়।
সর্বানীর বাড়িতে গিয়ে আজ দেখা যায় তাঁর বৃদ্ধ ঠাকুরদা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। পরিবারটি আদতে ওড়িশার। সর্বানীর ঠাকুরদা, ওড়িশা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এসপি এ সি দাস বলছিলেন, “সর্বানী এ বার পরীক্ষা ভালই দিয়েছে বলেছিল। চার দিন আগেও আমি বলি, পরীক্ষার ফল ভাল হলে তোমায় দারুণ উপহার দেব। ও তখনও দিব্যি হাসিখুশি ছিল। কী ভাবে এমনটা ঘটে গেল মাথায় ঢুকছে না।”
সর্বানীর মা-বাবা ছাড়াও চার বছরের ছোট ভাই আছে। বাবা বিমানবন্দরের আধিকারিক। সর্বানীর দেহাবশেষ ইলাহাবাদের গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হবে বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। |