তথ্যের অধিকার আইন সংশোধন নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের মধ্যেই মুখ খুললেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বললেন, আইনটি ভাল করে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। তথ্য আইনকে আরও ‘কার্যকরী’ করে তাঁর সরকার ‘প্রশাসনিক স্বচ্ছতা’ বাড়াতে চাইছে এ কথা বলার পাশাপাশি মনমোহনের বক্তব্য, “এই আইন যাতে সরকারের কাজে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে।”
তথ্যের অধিকার আইন নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের সূত্রপাত, টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে একটি নোট প্রকাশকে কেন্দ্র করে। যে বিতর্কিত নোটে বলা হয়েছিল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম চাইলে স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে অনিয়ম রুখতে পারতেন। ওই নোট প্রকাশের পরেই সরকারের অন্দরমহলে তোলপাড় শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, তথ্য জানার অধিকারে কি দুই মন্ত্রীর মধ্যে গোপন নোটও প্রকাশ করে দিতে হবে? দ্বিতীয়ত, স্পেকট্রাম মামলাটি বিচারাধীন। সুতরাং বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা হবে কি না, তা-ও বিবেচনা করে দেখা দরকার। বীরাপ্পা মইলি অথবা কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদরা প্রকাশ্যেই জানান যে, মন্ত্রিসভার গোপনীয়তা বজায় রাখার প্রয়োজন আছে। বিচারাধীন মামলা নিয়ে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনও রক্ষাকবচ সংশ্লিষ্ট আইনে রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন সলমন।
আজ কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন আয়োজিত তথ্যের অধিকার আইন সংক্রান্ত সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে বিশদে মুখ খুলেন। তাঁর কথায়, “তথ্যের অধিকার আইনটি যে কতটা ফলপ্রসূ এবং কার্যকরী, তা আমরা আজ জানি। কিন্তু এই আইনটিকে খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে উদ্বেগ রয়েছে এবং সততার সঙ্গে তার মোকাবিলা করা প্রয়োজন।” এই ‘ক্ষেত্র’গুলিকে চিহ্নিতও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, জনস্বার্থের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই এমন সব তথ্যের জন্য আবেদনের বন্যা বয়ে গেলে তা প্রশাসনের পক্ষে অত্যন্ত বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি তাঁর মতে, “আরও একটি প্রশ্নও উঠছে। এই আইনের কারণে যেন সৎ কর্মঠ সরকারি চাকুরেরা কুণ্ঠিত হয়ে নিজেদের পূর্ণ মতামত দেওয়া থেকে বিরত না থাকেন। ...সরকারের কাজে বাধা হয়ে যেন না দাঁড়ায় এই আইন।” কোন কোন বিষয় এই আইনের আওতার বাইরে থাকবে, তাঁর মতে সেগুলি পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ভবিষ্যতে সরকার যে এই আইন সংশোধনের পথে হাঁটতে পারে, তার ইঙ্গিত আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট আইন নিয়ে সমস্যা শুধু কেন্দ্রীয় সরকার বা কংগ্রেসের নয়। এখন কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে, পরে বিজেপি-ও ক্ষমতায় আসতে পারে। ফলে সবাইকেই ভাবতে হবে। তবে রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসের পক্ষে সমস্যা হল, সংশোধনের দাবিতে কেবল কংগ্রেস সরব হলে হিতে বিপরীত হবে। বার্তা যাবে যে, সরকারের সব দুর্নীতি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে বলেই আইনের সংশোধন চাইছে কংগ্রেস। লোকপাল বিতর্কে হাত পুড়েছে দলের। তাই বৃহত্তর রাজনৈতিক বিতর্ক হলে, অর্থাৎ বিজেপি, বাম-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে আলোচনা চাইলে কংগ্রেস তাতে যোগ দিতে পারে। সেই আলোচনা সংসদেও হতে পারে। আজকের বক্তৃতায় এই বিতর্কের আহ্বানও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। |