অস্বস্তিতে আডবাণী
দুর্নীতি-বিরোধী যাত্রার প্রচারে সাংবাদিকদের ঘুষ
দুর্নীতির বিরুদ্ধেই নাকি তাঁর রথযাত্রা। যাত্রার পথে প্রতিটি সভায় লালকৃষ্ণ আডবাণী এক লাইনের শপথ নেওয়াচ্ছেন জনতাকে, “কাউকে ঘুষ দেব না, ঘুষ নেবও না!” তাঁর যাত্রাপথে ঘুষ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক ছড়াল।
মধ্যপ্রদেশের সাতনায় তাঁর রথের চাকা গড়ানোর এক দিন আগেই স্থানীয় নেতারা সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন আডবাণীর সবিস্তার যাত্রাপথ ঘোষণা করতে। এই যাত্রার খবর যাতে ভাল প্রচার পায়, সে জন্য সাংবাদিকদের খামে ভর্তি পাঁচশো টাকার নোটও দেওয়া হয়। ক্যামেরাতেও সেই ছবি বন্দি হয়েছে। শুধু তাই নয়, আজ স্থানীয় সাংবাদিকরাও স্বীকার করেছেন, “আডবাণীর যাত্রার খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশের জন্য পাঁচশো টাকা করে দেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে বিজেপির তরফে এমন টাকা বিলি করাই হয়। এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়।”
চুরাশি বছর বয়সে বিজেপির এই প্রবীণ নেতা যখন মনমোহন সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার করতে প্রায় চল্লিশ দিনের জন্য রথে সওয়ার হয়েছেন, সেই সময় তাঁর যাত্রার সঙ্গে দুর্নীতির গন্ধ জড়িয়ে যাওয়ায় আডবাণী শুধু অস্বস্তিতেই রয়েছেন তাই নয়, তিনি খুবই ক্ষুব্ধ। সকালে সাতনায় সাংবাদিক সম্মেলনে এই অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হন আডবাণী। উত্তর দিতে গিয়ে অনেকটাই অসহায় দেখায় তাঁকে। তিনি বলেন, “ঘটনাটি উদ্বেগের। আমি বিষয়টি খোঁজ নেব। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সভাপতি প্রভাত ঝা-কেও বলছি, উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে।” পরে এক একান্ত আলাপচারিতায় আডবাণী জানান, “মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহাণ ও প্রভাত ঝা-কে জানিয়ে দিয়েছি, বিষয়টি আমি মোটেই ভালো চোখে দেখছি না।”
অন্য প্রচার। জন চেতনা যাত্রার মাঝে শিশুদের সঙ্গে কথা আডবাণীর। মাইহারে শুক্রবার। ছবি: পিটিআই
আডবাণী যখন এই মন্তব্য করছেন, সেই সময় তাঁর রথে শিবরাজ ও প্রভাত উভয়েই উপস্থিত ছিলেন। পাশে বসে থাকা দলের প্রধান মুখপাত্র ও আডবাণীর রথের সারথি রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “আডবাণীজি যা বার্তা দেওয়ার দিয়েছেন। দল এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।” রাতে প্রধানত আডবাণীর হস্তক্ষেপেই দল থেকে সাসপেন্ড করা হয় রাজ্য শাখার মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা শ্যাম গুপ্তকে।
সাংবাদিকদের টাকা বিলির ঘটনায় আডবাণী-সহ বিজেপি নেতৃত্বের অস্বস্তি আরও বেড়েছে, কারণ কংগ্রেসও গোটা রথযাত্রাকে আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে গেল। কংগ্রেসের নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “যে আডবাণী রথযাত্রা করে দুর্নীতি মেটানোর কথা বলছেন, তিনি নিজের যাত্রার সময় দুর্নীতি আটকানোর চেষ্টা করুন!” কংগ্রেসের বি কে হরিপ্রসাদ বলেন, “টাকা নেওয়া ও টাকা বিলি করার সংস্কৃতি বিজেপির নতুন নয়। বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্য দিয়েই আডবাণীর রথ যাচ্ছে, যেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ও সরকার দুর্নীতিতে লিপ্ত।”
আডবাণী ঘনিষ্ঠ শিবির এই ঘটনার পিছনে দলেরই কারও ‘দূরভিসন্ধি’র সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তাঁরা মনে করছেন, দলেরই একটি অংশ তাঁর যাত্রা পণ্ড করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। মধ্যপ্রদেশের এক নেতার কথায়, সাতনার স্থানীয় সাংসদ গণেশ সিংহ নিজেই খনির দুর্নীতিতে লিপ্ত। তাঁর বিরুদ্ধে দলেরই একটি গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। সেই গোষ্ঠী আডবাণীর দুর্নীতি-বিরোধী যাত্রা সাতনায় পৌঁছনোর সময়ে সাংসদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার রণনীতি তৈরি করছিল। তাকে ভেস্তে দিতেই সাংবাদিকদের অর্থ দেওয়ার পাল্টা কৌশল নিয়েছিল সাংসদের ঘনিষ্ঠ শিবির। কিন্তু আডবাণীর রথযাত্রার সঙ্গে সেটি জড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টিই অন্য দিকে মোড় নেয়। ক্ষুব্ধ আডবাণী এখন এ ব্যাপারে কাউকে রেয়াত না করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আডবাণীর বক্তব্য, “আমার এই দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান শুধু কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নয়। নিজের দল বিজেপির মধ্যেও দুর্নীতির গন্ধ থাকলে সততার সঙ্গে তা মোকাবিলা করব। সাম্প্রতিক অতীতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বদল হয়েছে।” কিন্তু যে ভাবে এ বারের রথযাত্রা একের পর এক বিতর্কে জড়াচ্ছে, তাতে অস্বস্তিতে আডবাণী শিবির। প্রথমে সংসদের দুই বিরোধী দলনেতার অসুস্থ হয়ে পড়া, তার পর সেতুর ঘষায় রথের কিছুটা ভেঙ্গে যাওয়া, এ বারে যে উদ্দেশ্যে যাত্রা, তার মূলেই আঘাত হানল সাংবাদিকদের ঘুষ দেওয়ার ঘটনা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.