|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
পরিচয় মেলে ভারতীয় নিসর্গ ও জীবনধারার |
সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে অনুষ্ঠিত হল চার্লস ডয়লির প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ। |
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকের ব্রিটিশ শিল্পী চার্লস ডয়লির লিথোগ্রাফে করা একটি চিত্রকলা নিয়ে প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘চার্লস ডয়লিস ক্যালকাটা, আর্লি নাইনটিনথ সেঞ্চুরি’। ভিক্টোরিয়ার নিজস্ব সংগ্রহের এই ছবিগুলি নিয়ে প্রদর্শনীটি পরিকল্পনা বা কিউরেট করেছেন নানক গাঙ্গুলি।
ভারতের বা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে কলকাতার চিত্রকলার যে প্রাক্-ইতিহাস তাতে চার্লস ডয়লির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে অনেক ব্রিটিশ শিল্পী ভাগ্যান্বেষণে আমাদের দেশে আসছিলেন। তাঁদের কাজে তৎকালীন ভারতীয় নিসর্গ ও জীবনধারার বেশ কিছু পরিচয় ধরা পড়েছে। প্রথম এসেছিলেন টিলি কেট্ল। ১৭৬৯ সালে তিনি মাদ্রাজে আসেন। তার পর কলকাতায় আসেন ১৭৭১ সালে। তার পর আসতে থাকেন জন জোফালি (১৭৮৩-৮৯), আর্থার ডেভিস (১৭৮৬-৯৫), জর্জ ফ্যারিংটন, টমাস হিকি, টমাস ও উইলিয়াম ডানিয়েল, ফ্রাঁসেস্কো রিনল্ডি, জর্জ চিনারি (১৮০২-২৫), রবার্ট হোম, জন স্মার্ট (১৭৮৫-৯৫), ওজিয়াস হামফ্রে (১৭৮৫-৮৭), স্যামুয়েল অ্যান্ড্রুজ (১৭৯১-১৮০৭), ডায়না হিল প্রমুখ শিল্পী। কলকাতার চিত্রকলার পরবর্তী বিকাশে তাঁদের যথেষ্ট অবদান আছে।
চার্লস ডয়লির জন্ম ভারতে ১৭ সেপ্টেম্বর ১৭৮১ সালে। তাঁর পিতা ব্যারন স্যার জন হেডলি ডয়লি মুর্শিদাবাদের রাজদরবারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে যুক্ত ছিলেন। চার্লস ১৭৭৫-এ ইংল্যান্ড যান এবং সেখানে শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৭৯৮-এ ভারতে ফিরে আসেন। এর পর তিনি কোম্পানির আমলা হিসাবে নানা জায়গায় নানা পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ভারতের নিসর্গ ও জনজীবন নিয়ে প্রচুর ছবি আঁকেন। এই প্রদর্শনীতে ‘ভিউজ অব ক্যালকাটা: অ্যান্ড ইটস এনভায়রন’ শীর্ষক যে ছবিগুলি দেখছি লিথোগ্রাফের অ্যালবাম হিসাবে সেগুলি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৪৮ সালে লন্ডনের ডিকিনসন অ্যান্ড কোম্পানি থেকে। ১৯৩২ সালে এগুলি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে উপহার দিয়েছিলেন মিসেস জর্জ লিয়েল তাঁর স্বামীর স্মৃতিতে। ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতার নিসর্গ ও জীবন কেমন ছিল, তার অনুপুঙ্খ বর্ণনা আমরা এই ছবিগুলিতে পাই।
তখন ক্যামেরা ছিল না। তাই সেই সময়ের দৃশ্য দলিল হিসেবে এই ছবিগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। ডয়লি-র আঁকার হাতটিও খুব নিপুণ ছিল। অনুপুঙ্খ স্বাভাবিকতায় যে দৃশ্যাবলি তিনি চিত্রপটে লিপিবদ্ধ করেছেন তথ্য ছাড়া তার নান্দনিকতাও খুবই সমৃদ্ধ। এত দিন পরও ছবিগুলির উজ্জ্বলতা খুব বেশি কমেনি। ছবিগুলি দেখতে দেখতে তখনকার কলকাতার সঙ্গে এখনকার কলকাতার তুলনা করলে যে কেউই বিস্মিত হবেন। |
|
শিল্পী: চার্লস ডয়লি |
‘চার্চ এনট্রান্স টু দ্য ধর্মতলা’ ছবিটিতে ধর্মতলা অঞ্চলের পথের দৃশ্য। পথের পাশে একটি বড় চার্চ আকাশচুম্বী চূড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্রিটিশ স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শন। তার দুপাশে এক তলা ও দোতলা বাড়ি। পথের উপর যানবাহন বলতে ঘোড়ার গাড়ি ও ঘোড়া। কয়েকটি গরু ঘুরে বেড়াচ্ছে পথের উপর। স্থানীয় মানুষ নানা কাজে রত। অধিকাংশেরই খালি গা। হাঁটুর উপর পর্যন্ত সাদা কাপড়ে আচ্ছাদিত। অল্প কিছু মানুষ। তার মধ্যেই ব্যস্ততার আভাস। ‘ভিউ নিয়ার দ্য সারকুলার রোড’ ছবিটিতে পথের পাশে ইটে তৈরি দুই স্তরের চার চালা হিন্দু মন্দির। পাশে খড়ের ছাউনির কুঁড়ে ঘর। ওপাশে অজস্র নারকেল গাছ। পথের উপর একটি গরুর গাড়ি । চাকাদুটি লক্ষ্যণীয়। চালকের খালি গা। কিন্তু মাথায় পাগড়ি। তখনকার সাধারণ মানুষ সকলেই মাথাটি আবৃত রাখতেন। ‘গভর্নমেন্ট হাউজ’ ছবিতে সুন্দর স্থাপত্যের সাদা প্রাসাদ। সামনের ময়দানে যানবাহন বলতে পাল্কি ও ঘোড়া। একটি মানুষে টানা রিকশাও রয়েছে। আর আছে মানুষ। সম্ভ্রান্ত ও দরিদ্র বোঝা যায় পোশাকের ব্যবধানে। তখনকার দরিদ্র মানুষ কমই শরীর বস্ত্রাচ্ছাদিত করতেন। শহরের ভিতর তখন গ্রামের একটা আবহ ছিল। ‘গার্ডেন রিচ’ বা ‘টাউন অ্যান্ড পোর্ট অফ ক্যালকাটা’-র ছবির গঙ্গা তীরবর্তী নিসর্গ খুবই মনোগ্রাহী। গঙ্গার উপর নৌকার ও স্টিমারের নানা সমারোহ। তীরে ইংরেজ ও দেশীয় মানুষদের সমাবেশে তখনকার জীবনের দুটি পর্যায়। এরকম অজস্র ছবির ভিতর দিয়ে তৎকালীন কলকাতা ও আশেপাশের অঞ্চলের অতীত স্মৃতিতে পৌঁছে যেতে পারি আমরা। |
|
|
|
|
|