সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার সামান্য কমলেও, চলতি মাসেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফের সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের এক বড় অংশ। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ও শিল্প মহলের আশঙ্কা, এই হারে ক্রমাগত সুদ বাড়লে, বাড়তেই থাকবে মূলধনের খরচ। এবং তাতে ব্যাহত হবে আর্থিক বৃদ্ধির গতি। তাই বর্তমান বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী করতে সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল করছেন তাঁরা। আর্থিক বৃদ্ধি ও সুদ বাড়ানোর এই টানাপোড়েন মেটানোর লক্ষ্যে শনিবারই বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
গত সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯.৭২%। যা অগস্টের ৯.৭৮ শতাংশের তুলনায় সামান্য হলেও কম।
শুধু ভারত নয়। মূল্যবৃদ্ধির কোপে হাঁসফাঁস করছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বহু দেশই সুদ কমিয়ে বৃদ্ধির হার বাড়ানোর কথা ভাবছে। যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন, ইতিমধ্যেই সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। আমেরিকা ও ইউরোপে আর্থিক সঙ্কটের জেরে বিশ্ব জুড়ে ফের মন্দার আশঙ্কাতেই এই সব দেশ বৃদ্ধির হার বজায় রাখতে আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
যারা সুদ কমানোর পক্ষে, স্বাভাবিক ভাবেই তাদের সঙ্গে হাঁটতে পছন্দ করছে শিল্পমহলও। তাদের যুক্তি, মূল্যবৃদ্ধি শুধু আগের মাসের সাপেক্ষেই নীচে নেমে এসেছে, তা নয়। বরং এই হ্রাস ছাপিয়ে গিয়েছে প্রত্যাশাকেও। কারণ, মনে করা হয়েছিল যে, আলোচ্য মাসে এই হার হবে ৯.৭৫%। কিন্তু কিছুটা অবাক করেই তা নেমে এসেছে ৯.৭২ শতাংশে।
তা ছাড়া, পর পর দু’মাসে (জুলাই ও অগস্ট) একেবারে তলানিতে ঠেকেছে শিল্প বৃদ্ধির হার। মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টানা ১২ বার সুদ বৃদ্ধি এর অন্যতম কারণ বলে শিল্প মহলের অভিযোগ। তাদের মতে, এর ফলে শিল্পের জন্য ঋণ নেওয়ার খরচ বৃদ্ধির দরুন পণ্য উৎপাদনের খরচও বাড়ছে। অন্য দিকে, বাজারে নগদের জোগান কমায় চাহিদা কমছে অনেক পণ্যের। তাই অন্তত এই মুহূর্তে সুদ বৃদ্ধির পথ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সরে আসা উচিত বলে মনে করছে তারা।
মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে শুধু সুদ বাড়ানোর পরিবর্তে বিকল্প পথের সন্ধান করার উপর বার বার জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। বেশ কিছু দেশ যে সুদ না বাড়িয়েও মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে সফল, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রকের প্রধান উপদেষ্টা কৌশিক বসুও। আর এ দিন শিল্পমহলও জানিয়েছে, মার্কিন মুলুক ও ইউরোপে আর্থিক সঙ্কটের জেরে ফের দানা বাঁধছে দুনিয়া জোড়া মন্দার আশঙ্কা। ফলে তারা প্রশ্ন তুলছে এখনও চড়া সুদের জমানা বজায় রাখা নিয়ে।
তবে এই সব কিছুর মধ্যেও শীর্ষ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর কে সি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধি ঊর্ধ্বগামী হলে ফের সুদ বাড়াতে বাধ্য হবেন তাঁরা। একে সমর্থন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সি রঙ্গরাজন। ভারতে মূল্যবৃদ্ধি এখন যেখানে, তাতে সুদ বাড়ানোই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মত আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারেরও। এই মতের সমর্থনকারী বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, সেপ্টেম্বরে সামান্য কমলেও এই নিয়ে টানা ১০ মাস ৯ শতাংশের উপরেই রইল সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি। এই সঙ্কট আরও গভীর হয়েছে ডলারে টাকার দাম পড়ায়। কারণ, এতে তেল-সহ বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের দাম এখন চড়া থাকারই সম্ভাবনা। এবং এই সব কারণেই ২৫ অক্টোবর ঋণনীতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফের ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়াবে, মত বিশেষজ্ঞদের এক বড় অংশের। |