তিনি দেখালেন, তাঁর দুনিয়াজোড়া সম্মোহনে এখনও বুঁদ কয়েক হাজার মানুষ।
এবং দেখালেন, ‘মৃত্যু’ নামের একটা নিছক জাগতিক ঘটনায় তাঁকে স্টিভ জোবসকে বেঁধে রাখা যায় না।
আর তাই আবার ভিড় জমে অ্যাপল স্টোরের বাইরে। বরাবর যেমনটা হয়ে এসেছে। কিছু দেশে আজ থেকেই অ্যাপল স্টোরে বিক্রির জন্য চলে এল আইফোনের নতুন সংস্করণ ‘আইফোন ৪এস’। আর প্রথম দিনেই তা হাতে গরম কিনে ফেলতে রাত জেগে লাইনে দাঁড়ালেন অ্যাপল-ভক্তরা। বরাবরের মতোই।
‘জাদুকর’ হয়তো দেখলেন, কিছুই বদলায়নি।
অথচ তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আত্মপ্রকাশ করা এই আইফোন ৪এস ঘিরেই প্রথমে সন্দেহ আর অভিযোগ কম ছিল না। অ্যাপল-ভক্তদের মধ্যেই অনেকে বলেছিলেন, আইফোন ৪এসে তেমন নতুন কিছু নেই। ফোনটা আরও পাতলা হতে পারত। স্ক্রিনটাও হতে পারত একটু বড়। “যেন পুরনো আইফোন ৪-এর গায়ে ‘এস’ স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে” এমন অভিযোগও করেছিলেন এক যন্ত্রপাগল। বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য প্রযুক্তিগত দিক থেকে আইফোন ৪এস-কে পিছিয়ে রাখেননি। কিন্তু সংশয় একটা তৈরি হয়েই গিয়েছিল। অথচ বাস্তবে দেখা গেল, আইফোন ৪এস আত্মপ্রকাশ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইন্টারনেটে তার ১০ লক্ষ বুকিং সারা! এবং আগের সব রেকর্ড ভেঙে। আজ, প্রথম দিনে বিভিন্ন স্টোর থেকে এই ফোন মোট কত বিক্রি হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য অ্যাপল কিছু বলেনি।
কী ভাবে হল এই বাজিমাত? বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ‘সিরি’ নামের একটা নতুন প্রযুক্তিই আইফোন ৪এসের ‘টেক্কা’। এর দৌলতেই আইফোন ৪এসের গ্রাহক তাঁর ফোনটিকে যে কোনও প্রশ্ন করলেই যান্ত্রিক গলায় তৎক্ষণাৎ উত্তর পেয়ে যাবেন। ‘সিরি’ নিয়ে এই ক’দিন টানা লেখালিখিতে অ্যাপলের লাভই হয়েছে। তা ছাড়া নয়া আইফোনে উন্নততর প্রসেসর, আরও ভাল ক্যামেরাও তো রয়েছে।
কিন্তু এ তো যন্ত্রবিশারদের কথা। অন্য যে কারণটা উঠে আসছে তা হল নিখাদ আবেগ। যে আবেগ খুচরো দু’একটা খামতিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। যে আবেগে ভর করে টোকিওয় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো হারুকো শিরাইশি বলছেন, “স্টিভ জোবসকে স্মরণ করার জন্যই আমার কিছু একটা চাই।” |
আইফোন ৪এস কিনতে লাইন। প্যারিসে। ছবি: এএফপি |
আবার সিডনিতে আইফোনের প্রথম ক্রেতা টম মোসকার প্রতিক্রিয়া, “নতুন ফোনটাকে জিজ্ঞেস করব বল তো স্টিভ কোথায়?” অ্যাপল-ভক্তরা নিজেরাই নতুন আইফোনের নামকরণের একটা ব্যাখ্যা খাড়া করে ফেলেছেন। তাতেও সেই আবেগ। ওই ভক্তেরা বলছেন, আইফোন ৪এস মানে হয়তো ‘আইফোন ফর স্টিভ’!
একটা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সিডনিতে আইফোন ৪ এসের প্রত্যেক দশ জন ক্রেতার মধ্যে এমন মাত্র এক জন রয়েছেন, যিনি এই প্রথম আইফোন কিনলেন। অর্থাৎ বাকিরা নির্ভেজাল অ্যাপল-ভক্ত। যাঁরা এত দিন জোবসের ঝুলি থেকে যা যা বেরিয়েছে, নাগাড়ে কিনে এসেছেন। এঁরা সেই গোত্রের মানুষ, যাঁরা ওই যন্ত্রগুলো বাজারে আসার আগের রাতটা ফুটপাথে লাইন দিয়ে কাটিয়েছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার লস গাটোসে এমনই একটা লাইনের একদম প্রথমে চেয়ার পেতে বসে ছিলেন ৬১ বছরের এক বৃদ্ধ। ইচ্ছে করলে স্রেফ একটা ফোন করেই আইফোন ৪এস পেতে পারতেন। কিন্তু তিনি, স্টিভ ওজনিয়াক তা না করে চলে এসেছেন দোকানে। জোবসের সুহৃদ তথা অ্যাপলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ওজনিয়াক এ রকমই। আগেও যখন অ্যাপলের কোনও নতুন যন্ত্র বাজারে এসেছে, ওজনিয়াক সটান দোকানেই চলে এসেছেন। তাঁর কথায়, “নতুন যন্ত্রে কী কী আছে, সেটা কখনওই আমি আগে থেকে জানতে চাই না। একটা কৌতূহল জমিয়ে রাখি।”
কৌতূহল জাদু-যন্ত্রের জন্য!
এই কৌতূহলটাই আরও কিছু দিন ধরে রাখতে হবে কলকাতাকে। জোবসের জীবদ্দশায় আত্মপ্রকাশ করা সর্বশেষ জাদু-যন্ত্রের এই শহরে আসতে এখনও দেরি। কলকাতার অ্যাপল-বিপণি ‘ইম্যাজিন’-এর কর্ণধার সঞ্জয় চোরদিয়া বললেন, “উৎসাহীরা খোঁজ নিচ্ছেন। আশা করছি ডিসেম্বর নাগাদই কলকাতায় এসে যাবে আইফোন ৪এস।” |