পৌঁছনোর কথা ছিল দুপুর দু’টোয়। প্রজাদের ভালবাসায় পৌঁছলেন রাত আটটায়। পুনাখা থেকে থিম্পু ৭১ কিলোমিটার। গাড়িতে ঘণ্টা তিনেকের পথ। সেটাই ১৩ ঘণ্টায় পেরোলেন ভুটানের নববিবাহিত রাজ-দম্পতি। ততক্ষণে রাজধানীতে পৌঁছে গিয়েছেন রাহুল গাঁধী। বন্ধু ভুটান-রাজের বিয়ের উৎসবে সামিল হতে।
একত্রিশ বছরের ওয়াঙচুক অনেক সময়ই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন থিম্পুর পথে। মাঝেমধ্যে চায়ের টেবিলেও ডেকে নেন লোকজনকে। আজ যখন তাঁর ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্যের হাজার পঁচিশ প্রজা অভিনন্দন জানাতে দীর্ঘ পথের দু’ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে, অক্সফোর্ড-ফেরত রাজা তাঁদের পাশ দিয়ে গাড়িতে করে চলে যাবেন! তা হয়নি। বারবারই পথে নেমে প্রজাদের সঙ্গে পা মিলিয়েছেন রাজা, প্রতিনমস্কারে উচ্ছ্বসিত করেছেন সম্ভ্রম আর শুভেচ্ছা মাখা পাহাড়ি মুখগুলিকে। ছোট্ট মেয়ে আদরের চুমু এঁকে দিতে চাইলে, হাসিমুখে গাল বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রজাদের ভালবাসায় দুপুরের খাওয়াটা ফাঁকি পড়লেও বারবার ‘অসংখ্য ধন্যবাদ’ বলেছেন, ছবি-শিকারি বিদেশি সাংবাদিকদের। এমনই ছবি দেখা গিয়েছিল ওয়াংচুকের রাজা হওয়ার সময়েও। আজ রাতের থিম্পুতেও তেমনই উচ্ছ্বাস অপেক্ষা করে ছিল রাজা ও রানি পেমার জন্য। তবে আসল উৎসব কাল। চাংলিংমিথাং ময়দান সেজে রয়েছে তার জন্য। তার আগে কাল ভোরেই রাজারানি যাবেন ভুটানের উত্তর প্রান্তে তাসিছোয়েদজঙের দুর্গে। সেখানে আনুষ্ঠানিক ‘গার্ড অফ অনার’ নেওয়ার পরে স্বর্ণ-রাজদরবারে রাজা-রানিকে বরণের অনুষ্ঠান। দিল্লিতে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে পড়েছেন ওয়াংচুক। রানি পেমাও উচ্চমাধ্যমিক পড়েছেন ভারতে, হিমাচলপ্রদেশের সানাওয়ারের এক স্কুলে। পুনাখায় সপ্তদশ শতকের প্রাসাদে তাঁদের বিয়ের ভোজেও ছিল ভারতীয় ছোঁয়া পুরি, আলুর দম, চিকেন কারি। আগের রাত ১টা থেকে রান্না শুরু করে ১০০ জন রাধুঁনি বানিয়েছিলেন মোট ৫২ রকমের পদ। অভ্যাগতদের যা পরিবেশন করা হয় কাঠের বাসনে। পানীয়ের মধ্যে ছিল ‘আরা’, ‘সুজা’ ও ‘দাচু’। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, প্রাক্তন বিদেশসচিব শ্যাম সারন ও ভারতের রাষ্ট্রদূত পবন কে বর্মারা। |