হলদিয়া মেডিক্যাল
পঞ্চাশ পড়ুয়ার দায় কার, শুরু রাজ্য-এমসিআই টানাপোড়েন
লদিয়ার বিসি রায় মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে এ বার মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হল রাজ্য সরকারের।
হলদিয়ায় সদ্য চালু হওয়া ওই মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিচালন-কর্তৃপক্ষ বিধিভঙ্গ করেছেন বলে গত বুধবার জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এবং বিধি লঙ্ঘনের দায়ে এমসিআই যে সাময়িক ভাবে কলেজটির অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিতে পারে, তেমন ইঙ্গিতও মিলেছে কাউন্সিলের তরফে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, সাড়ে চার লক্ষ টাকা ক্যাপিটেশন ফি দিয়ে বিসি রায় মেডিক্যালের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ৫০ জন ছাত্রছাত্রীর দায়িত্ব কে নেবে?
এই ঘিরেই কার্যত দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে এমসিআই এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে। এ দিকে এমসিআই এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ: বিধিভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা যা-ই নেওয়া হোক না কেন, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এর প্রেক্ষিতে এমসিআই কী ভাবছে?
এমসিআইয়ের সচিব সঙ্গীতা শর্মা বৃহস্পতিবার বলেন, “কোনও রাজ্যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ চালু করার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার একটা শংসাপত্র দিয়ে থাকে। যাতে বলা হয়, কলেজ ঘিরে কোনও সমস্যা হলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব রাজ্য সরকার নেবে।” অর্থাৎ, হলদিয়ার সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালনাধীন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজটির অনুমোদন বাতিল হলে সেখানকার পড়ুয়াদের অন্যত্র ভর্তি করানোর ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেই করতে হবে। সেটা কী ভাবে সম্ভব?
এমসিআই-সচিবের জবাব, “পশ্চিমবঙ্গের অন্য কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ওঁদের ভর্তির সুযোগ করে দিতে হবে।”
কিন্তু ঘটনা হল, সরকারি প্রতিটা মেডিক্যাল কলেজেই আসনসংখ্যা সীমিত। পঠনপাঠনের পরিকাঠামোও সেই অনুযায়ী তৈরি হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের আশঙ্কা, অতিরিক্ত পড়ুয়া ভর্তি হলে পরিকাঠামোগত সমস্যার সৃষ্টি হবে। এর সুরাহা কী?
এমসিআই-সচিবের দাওয়াই, “যে সব কলেজে ওই ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করা হবে, তারা আসন বাড়ানোর জন্য এমসিআইয়ের কাছে নতুন ভাবে অনুমোদনের আবেদন করুক। আমরা যত শীঘ্র সম্ভব অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”
সে ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের একটা বছর মার যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সঙ্গীতাদেবী অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, “ছেলেমেয়েদের বছর নষ্ট হোক, তা আমাদের কাম্য নয়। আমরা খুব অল্প সময়ে ব্যাপারটার নিষ্পত্তি করে ফেলব। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সোমবারই এমসিআই এবং ডিসিআই (ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া) বৈঠকে বসছে। সে দিনই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
তবে এমসিআই যা-ই বলুক, রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তাদের প্রশ্ন: বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের অনিয়মের দায় তাঁদের কেন নিতে হবে? পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্সের সেন্ট্রাল সিলেকশন কমিটি (মেডিক্যাল)-র চেয়ারম্যান উৎপল দত্তের কথায়, “হলদিয়ার মেডিক্যাল কলেজে পরিকাঠামোর গোলমাল আছে জেনেই আমরা জয়েন্টে উত্তীর্ণদের ওখানে পাঠাইনি। যাঁরা ক্যাপিটেশন ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের দায় রাজ্য সরকারের উপরে চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না।”
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তো বলেছে, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ যাতে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না-হয়, তা দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কী ভূমিকা নেবে?
উৎপলবাবু বলেন, “এমসিআই যা নির্দেশ দেবে, আমাদের মানতেই হবে। তবে আমাদের মেডিকাল কলেজগুলোয় বড়জোর দু’টো বা তিনটে আসন বাড়ানোর মতো পরিকাঠামো রয়েছে।”
সরকারি মেডিক্যাল কলেজের যখন এই অবস্থা, তখন বিকল্প হিসেবে অন্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের কথাও ভাবা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে আপাতত একমাত্র বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হল যাদবপুরের কেপিসি। দেখা হচ্ছিল, হলদিয়ার পড়ুয়াদের সেখানে জায়গা দেওয়া যায় কি না। কিন্তু কেপিসি-র তরফে ভাস্কর ঘোষ ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, দেড়শো থেকে আর একটা আসনও বাড়ানোর পরিকাঠামো তাঁদের নেই।
এ হেন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে হলদিয়ার বিসি রায় মেডিক্যালের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের হাল শোচনীয়। উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি চরমে। সোমবার, ১৭ অক্টোবর এমসিআই-ডিসিআই চূড়ান্ত বৈঠকে বসছে। এ দিকে কলেজ পরিচালন সমিতির সম্পাদক আশিস লাহিড়ির আশ্বাস, ১৭ অক্টোবরই ক্লাস শুরু হবে।
কিন্তু কী ভাবে হবে, বুঝতে পারছেন না কেউই। নন্দকুমারের মনীষা সামন্ত এ বছরে বিসি রায়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, “সোমবার কলেজে যাব। তার আগে তো কিছুই বুঝতে পারছি না!” মনীষার বাবা মনোরঞ্জনবাবু বলেন, “অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে মেয়েকে ভর্তি করেছি। বছর নষ্ট যেন না হয়। দরকারে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাব।” আর এক পড়ুয়া শৌনক জানার মন্তব্য, “এক বছর নষ্ট হলে বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে। আশা করছি, এখানেই পড়াশোনা করতে পারব।”
আশায় বুক বাঁধা ছাড়া ওঁদের উপায়ই বা কী?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.