তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পরে এ বার এফসিআইয়ের গুদামে বেসরকারি নিরপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে ‘বেআইনি’ বন্দুক বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পুরুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১২টি ‘বেআইনি’ বন্দুক বাজেয়াপ্ত করে। তারমধ্যে ৬টি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে আদ্রার এফসিআইয়ের গুদাম থেকে। ভুয়ো লাইসেন্স নিয়ে বেআইনি বন্দুক ব্যবহার করার অভিযোগে বেসরকারি সংস্থার দু’জন নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়। রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “বুধবার রাত থেকে এ দিন দুপুর পর্যন্ত মোট ১২টি বেআইনি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” এই নিয়ে গত দুই সপ্তাহে পুলিশ মোট ২২টি বন্দুক উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৯ জন।”
বন্দুকের ভুয়ো লাইসেন্স নিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করার অভিযোগে জাতীয় খাদ্য নিয়ামকের (এফসিআই) গুদামের ৬ জন বেসরকারি রক্ষীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার আদ্রার এফসিআই-এর গুদামে অভিযান চালিয়ে ৬টি বেআইনি বন্দুক উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে ওই নিরাপত্তারক্ষীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে আদ্রার এফসিআই-এর গুদামে অভিযান চালায় সাঁওতালডিহি থানার আইসি অসিত পাণ্ডে ও রঘুনাথপুর থানার ওসি দেবাশিস পাহাড়ি। সেখানে মোট ৬১ জন নিরাপত্তারক্ষীর মধ্যে ১২জন ‘গানম্যান’। পুলিশ আধিকারিকেরা এফসিআই কর্তৃপক্ষের কাছে লাইসেন্স সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখে ৬ জন নিরাপত্তারক্ষীর বন্দুকের লাইসেন্স ভুয়ো বলে জানায়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ওই ৬টি বন্দুক বাজেয়াপ্ত করেন। কিন্তু ওই নিরাপত্তারক্ষীরা সেখানে ছিলেন না। এফসিআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা কলকাতার একটি সংস্থার। লাইসেন্সগুলি যে ভুয়ো তা আগে জানা ছিল না।
একই সঙ্গে এ দিন সাঁওতালডিহি থানার অনন্তপুর ও শ্যামপুর গ্রাম থেকে এবং কাশীপুরের মেখাদা গ্রাম থেকে তিনটি বেআইনি বন্দুক পুলিশ উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অনন্তপুর গ্রামের সুভাষ গরাই ও মেখাদা গ্রামের ঠাকুর দাস মাহাতো নামের দুই ব্যক্তিকে। তবে, শ্যামপুর গ্রামের বেআইনি বন্দুক ব্যবহারকারীকে ধরতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিন জন পাড়া থানার দুবড়াতে একটি হার্ডকোক কারখানায় বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন।
অন্য দিকে, বুধবার রাতে সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ঠিকাদারি সংস্থার গুদাম থেকে আরও তিনটি বেআইনি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের চন্দনকেয়ারি থানার লছমনপুর গ্রামের দুই বাসিন্দা ও পাড়া থানার ভাগাবাঁধ গ্রামের এক বাসিন্দার নামে ওই বন্দুক তিনটির ভুয়ো লাইসেন্স ছিল। তিন জনই বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। তাঁরা পালিয়েছেন।
সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে বন্দুকের ভুয়ো লাইসেন্স নিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজের জাল চক্রের সন্ধান পেয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল দুই বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী। পরে গ্রেফতার হয় ভুয়ো লাইসেন্স চক্রের ‘পাণ্ডা’ পুরুলিয়া শহরের বন্দুক ব্যবসায়ী চণ্ডী কর্মকার। তাঁকে জেরা করে ঝাড়খণ্ডের বোকারো ও পাড়ার থানার রুকনি থেকে গ্রেফতার করা হয় আরও চারজন নিরাপত্তারক্ষীকে।
পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া ১২টি বন্দুকের জাল লাইসেন্স দিয়েছিল পুরুলিয়া শহরের ওই বন্দুক ব্যবসায়ী। বন্দুকগুলিও তাঁর দোকান থেকেই কেনা হয়েছিল। ভুয়ো ঠিকানা দেখিয়ে ওই লাইসেন্সগুলি তৈরি করা হয়েছিল। রঘুনাথপুরের এসডিপিও বলেন, “বেআইনি বন্দুক উদ্ধার ও ভুয়ো লাইসেন্স-এর বিরুদ্ধে তল্লাশি অভিযান চলবে।” |