ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে মিনাখাঁর কুশাংড়া গ্রামে। প্রতিবেশী পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন ওই কিশোরীর বাবা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মাছের কারবারি নজরুল ইসলামের চার সন্তান। বুধবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁর এক মেয়ে লিলুফা খাতুন (১২) শৌচকর্মে যাবে বলে। দিদি নাজমা তাকে নিয়ে বাড়ির পিছনের শৌচালয়ে যায়। বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলেও দুই মেয়ে না ফেরায় মা খায়রুল বিবি শৌচালয়ের দিকে গিয়ে দেখেন, সেখানে কেউ নেই। তাঁর চিৎকারে পাড়ার লোকজন জড়ো হয়ে যায়। খানিক ক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে শৌচালয় থেকে খানিকটা দূরে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নাজমাকে। কাছেই পড়ে ছিল লিলুফার একপাটি জুতো। আরও কিছুটা এগিয়ে ডোবার ধারে আর এক পাটি জুতো মেলে। লিলুফার সঙ্গে থাকা টর্চও পড়ে ছিল। গ্রামবাসীরা দেখেন, ডোবার এক ধারে ওই কিশোরীর দেহ পড়ে আছে। মাথা কাদায় পুঁতে রাখা। দুই বোনকেই নিয়ে যাওয়া হয় মিনাখাঁ হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা লিলুফাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নাজমাকে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ দেহ ময়না-তদন্তে পাঠায়। বৃহস্পতিবার ঘটনার তদন্তে গ্রামে আসেন বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার। বাসিন্দাদের অনুমান, কোনও গোপন ঘটনা দেখে ফেলায় খুন করা হয়েছে লিলুফাকে। নজরুলের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও। |
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে গেল, নাজমা এসেছে বাড়িতে। সে বলে, “বোন বাথরুমে ঢুকেছিল। আমি বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে আমাকে কয়েক জন ধরার চেষ্টা করল। চার-পাঁচ জন ছিল। আমি ভয়ে ছুটে পালাই। সামনেই নালার ধারে পড়ে যাই। তারপর আর কিছু মনে নেই।” পুলিশ জানিয়েছে, আর একটু সুস্থ হলে মেয়েটিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
লিলুফার দেহ যেখানে পড়ে ছিল, তার এক দিকে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মেছোভেড়ি। সুনসান এলাকা। অন্ধকারে কেউ নেশাভাঙ করলে টের পাওয়া মুশকিল। বিকেলের দিকে গ্রামের অনেকেও সেখানে গল্পগুজব করে। বুধবার বিকেলের দিকে দু’টি মেয়েকে সেখানে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। সে সময়ে কয়েক জন যুবক ইতস্তত ঘোরাফেরা করছিল। |
নজরুল বলেন, “অসৎ উদ্দেশে মেয়ে দুটোকে ধরেছিল দুষ্কৃতীরা। মনে হয়, ওদের কাউকে চিনে ফেলায় প্রাণ দিতে হল ছোট মেয়েটাকে। বড় মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় ওরা মনে করেছিল, মারা গিয়েছে। সে জন্যই হয়তো নাজমা প্রাণে বেঁচে গিয়েছে।” মৃতার দাদা কামাল হোসেন, মামা আবদুল খালেক মিস্ত্রি অবশ্য বলেন, “মৃতের গায়ে আঁচড়ের দাগ ছিল। গোপন কিছু একটা দেখে থাকতে পারে ও। সে জন্যই লিলুফাকে খুন করা হয়েছে।” সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
|