ভূগর্ভে গাড়ি রাখার জায়গায় চালকদের বসার কোনও ব্যবস্থা নেই। শৌচাগার নেই। নেই পানীয় জল ও চায়ের ব্যবস্থাও। শুধু তা-ই নয়, উদ্বোধনের দেড় বছর বাদেও মহাকরণ সংলগ্ন পার্কিং প্লাজার অর্ধেকের বেশি জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকে। তাই এ বার সেখানে চালকদের ন্যূনতম সুবিধাগুলি দেওয়ার সঙ্গে প্লাজার ফাঁকা জায়গা ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ভাড়া দিয়ে আয় বাড়াতে চাইছে রাজ্য।
২০০১-এর নভেম্বরে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী অমর চৌধুরী মহাকরণের সামনে গাড়ি রাখার প্রকল্পের প্রস্তাব সরকারি ভাবে জমা দেন। ঠিক হয়, লালদিঘির গা ঘেঁষে প্রথম পর্যায়ে ২০ কোটি টাকায় তৈরি হবে ৭২৬টি গাড়ি রাখার প্লাজা ও দ্বিতীয় পর্যায়ে দিঘির পূর্ব দিকে আট কোটি টাকায় তৈরি হবে ২৬০টি গাড়ি রাখার জায়গা। পরিকল্পনা কিছু বদলে প্রায় ন’বছর বাদে রূপায়িত হয় শুধু প্রথম পর্যায়টি। ২০১০-এর ১৪ এপ্রিল গাড়ি রাখার দ্বিতল প্লাজা উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু এত দিন সেই প্লাজার অর্ধেকের বেশি ফাঁকাই পড়ে থাকত। শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের মন্ত্রী-আমলা ও বিশেষ অফিসারদের গাড়ি থাকত সেখানে।
উদ্বোধনের পরে প্রায় এক বছর পর্যন্ত ভূগর্ভে প্লাজার ভিতরে মোবাইলে যোগাযোগ করা যেত না। তাই অনেকেই সেখানে গাড়ি রাখতে চাইতেন না। সম্প্রতি কিছু যন্ত্রের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান হলেও তেমন লাভ হয়নি। কেন এই অবস্থা? পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধনের কথায়, “ওখানে আরও কিছু কাজ করতে হবে। তার জন্য টাকা দরকার। কয়েকটি ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রীয় সংস্থা টাকা দিয়ে ওখানে গাড়ি রাখতে আগ্রহী। এই বিষয়ে চূড়ান্ত নীতি প্রণয়নও হয়েছে। শীঘ্রই ওঁদের অনুমতি দেওয়া হবে।”
সেই সঙ্গে পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, কোন গাড়ি কখন ঢুকছে-বেরোচ্ছে, নিরাপত্তার স্বার্থে তা চটজলদি জানা আবশ্যক। তাই সেখানে বেতার-তরঙ্গ নির্ধারণের উপযোগী স্টিকার-সহ দু’টি ‘বুম ব্যারিয়র’ বসানো দরকার। প্রতিটির দাম প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। দিল্লি-মুম্বইয়ে এই ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া, প্লাজার দু’টি ফটকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বসাতে হবে। তাতে গাড়ির নম্বর ও প্রয়োজনীয় তথ্য উঠে যাবে। কফি ও পানীয় জল সরবরাহের যন্ত্রও বসানো দরকার।
সরকারি সূত্রের খবর, ওই চত্বরে এখন মাসে গাড়িপিছু জায়গার ভাড়া তিন হাজার টাকা। ঠিক হয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে ৫০টি গাড়ি রাখতে দেওয়া হবে। পূর্তসচিব বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও জায়গা চাইছে। কিন্তু অন্যান্য ব্যাঙ্ক, রেল, কোল ইন্ডিয়া-সহ অনেক সংস্থাই টাকা দিয়ে ওখানে গাড়ি রাখতে চায়। সবাইকে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। তার উপরে, লালবাজারের জন্য বরাদ্দ করতে হবে আরও ৫০টি গাড়ি রাখার জায়গা।”
মহাকরণের আশেপাশে গাড়ি পার্কিংয়ের আর কী ব্যবস্থা করা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে একটি সমীক্ষা করবে পূর্ত দফতর। এখনকার মিনিবাস টার্মিনাসটি উঠে যাবে। তার পরিবর্তে সেখানে তৈরি হবে প্রস্তাবিত জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোর প্রান্তিক স্টেশন। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, শহর ও শহরতলির নানা জায়গা থেকে আসা মিনিবাসগুলি আর দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়াবে না সেখানে। |