রাজা-রানির রূপকথার বিয়েতে মাতল ভুটান
রূপকথার বিয়ে। বইয়ের পাতা থেকে নেমে এল বাস্তবে। আর তার সাক্ষী হয়ে থাকলেন সাত লক্ষ ভুটানবাসী।
পাহাড়ে ঘেরা পুনাখার সবুজ উপত্যকায় শতাব্দীপ্রাচীন বৌদ্ধ দুর্গ-মঠ। তার দু’পাশে বয়ে গিয়েছে দু’টি নদী। ফো চু এবং মো চু। তার পাড়ে হাজির হয়েছিলেন আট থেকে আশি, বাচ্চা-বুড়ো-মহিলা সকলেই। বহু বছর আগে ওই মঠে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন জিগমে ওয়াংচুকের বাবা-মা। সেখানেই চার হাত এক হল ৩১ বছরের জিগমে আর তাঁর থেকে প্রায় ১০ বছরের ছোট জেৎসুন পেমার। ওয়াংচুক রাজবংশের পঞ্চম রাজা জিগমের সঙ্গে পেমার আলাপ মাত্র ১৭ বছর বয়সে। পেমা তখন সাত। পরবর্তী কালে তাঁরই প্রেমে পড়েন জিগমে।
ভোর চারটে নাগাদ শুরু হল বিয়ের অনুষ্ঠান। মঠের সামনে জড়ো হয়ে গিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ, রাজা-রানিকে এক ঝলক দেখার আশায়। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া আর প্রচণ্ড শীতেও তাঁদের উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি।
প্রাচীন ঐতিহ্যের ছোঁয়া ছিল অনুষ্ঠানের পরতে পরতে। বৌদ্ধ মন্ত্র উচ্চারণ, প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। চার দিক থেকে তখন ভেসে আসছে বাজনার আওয়াজ। পেমার পরনে ছিল ভুটানের ঐতিহ্যবাহী রানির পোশাক। সোনালি রঙের ‘কিরা’ (জ্যাকেট) ও ‘তেগো’ (স্কার্ট)। রাজা জিগমে পরেছিলেন রুপোলি পোশাক ‘গো’।
রাজা ও রানি: বিয়ের পর নববধূ জেৎসুন পেমার সঙ্গে ভুটানরাজ
জিগমে খেশর নামগিয়াল ওয়াংচুক। ভুটানের পুনাখায়। ছবি: এ এফ পি
মাথায় প্রকাণ্ড মুকুট। বুদ্ধমূর্তির সামনে বিশাল সিংহাসনে বসে রয়েছেন তিনি। একের পর এক রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠানের পর রাজা সিংহাসন থেকে উঠে কনের মাথায় পরিয়ে দিলেন রানির মুকুট। এর পর দীর্ঘ জীবন ও সুখী দাম্পত্য কামনা করে রাজার হাতে তুলে দেওয়া হল পানীয়। ভুটানে একে বলা হয় ‘অ্যামব্রোসিয়া’। বিবাহিত জীবনে যাতে কোনও বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন না হতে হয়, তার জন্য নবদম্পতিকে নিয়ে শুরু হল বিশেষ অনুষ্ঠান। প্রায় দু’ঘণ্টা ব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে জিগমে ও পেমাকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করলেন ১০০ জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। রানির সম্মানে সম্মানিত করা হল পেমাকে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা রাজা-রানির হাতে তুলে দিলেন সাদা উত্তরীয়। ভুটান পেল তাদের নতুন রানিকে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রাচীন বৌদ্ধ মঠের বাইরে তখন অগুন্তি মানুষের ভিড়। নতুন রাজা-রানিও তাঁদের নিরাশ করেননি একেবারেই। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই তাঁরা উৎসবে মেতে উঠেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। রাজকীয় এই বিয়েতে ছিলেন দেশি-বিদেশি অতিথিরাও। উপস্থিত ছিলেন ভুটানে ভারতের রাষ্ট্রদূত পবন কে বর্মা, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং প্রাক্তন বিদেশ সচিব শ্যাম সারন। বিশ্ব জুড়ে যখন গণতন্ত্রের হাওয়া, তখন ভুটানে রাজতন্ত্রকে সাধারণ মানুষের এই সাদর অভিবাদন ছিল চোখে পড়ার মতো। ভুটানে গণতন্ত্রও যতটা এসেছে, রাজার হাত ধরেই এসেছে। গত কাল থেকেই সেখানে ঘোষণা করা হয়েছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। রাজধানীর রাস্তা ঢেকে গিয়েছে ফুলে ফুলে। ভোর রাত থেকে পায়ে হেঁটে অসংখ্য মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন নববিবাহিত রাজা-রানিকে দেখার আশায়। তাঁদের হাতে জাতীয় পতাকা। মুখে রাজা-রানির ‘জয়গান’। যাঁরা আসতে পারেননি, টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন তাঁরা। “বহু দিন এই দিনটারই অপেক্ষায় ছিল গোটা ভুটান। অবশেষে আমরা রানিকে পেলাম।” ভারী খুশি ভুটানের মানুষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.