টাকা বাকি পড়ে যাওয়ায় বিদুৎ উৎপাদনের কয়লা মিলছে না এ খবর শুনে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর তারই জেরে সমস্যার অন্তত সাময়িক একটা সমাধান হতে চলেছে। রাজ্য সরকারের তরফে শীঘ্র বকেয়া মেটানোর আশ্বাস পেয়ে আজ বুধবার ইসিএল স্বাভাবিক কয়লা সরবরাহ শুরু করছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তারা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় দৈনিক দুই রেক করে কয়লা এলে উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে। আজ প্রথম রেকটি ঢুকছে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
নগদ টাকায় বাড়তি কয়লার সংস্থান করে কোনও মতে পুজো সামাল দেওয়া গেলেও পুজো মিটতেই রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমতে শুরু করেছিল। সোমবার ঘাটতি পৌঁছে যায় ৬৫০ মেগাওয়াটে। সিইএসসি-এলাকাতেও লোডশেডিং করাতে হয়। মঙ্গলবার ঘাটতি ছিল ৫৫০ মেগাওয়াট। অবিলম্বে কয়লার জোগান না-এলে ঘাটতি যে আরও চড়বে, তা জানিয়ে মহাকরণে জরুরি বার্তা পাঠান বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা। এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়, টাকা না-পেলে ইসিএল আর কয়লা দেবে না।
এবং সেই খবর পৌঁছে যায় উত্তরবঙ্গ সফররত মুখ্যমন্ত্রীর কানেও। ক্ষুব্ধ মমতা প্রশাসনকে অবিলম্বে সমস্যার সুরাহা করতে বলেন। সেই মতো অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও বিদ্যুৎমন্ত্রী মনীশ গুপ্ত এ দিন কথা বলেন ইসিএলের চেয়ারম্যান রাকেশ সিংহের সঙ্গে। কয়লার দাম বাবদ বকেয়া যে টাকা না-পাওয়ায় সেপ্টেম্বর থেকে ইসিএল রাজ্যকে কয়লা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, রাজ্য শীঘ্রই তা মেটানোর আশ্বাস দেওয়ায় ইসিএল-ও নমনীয় হয়েছে। সংস্থা-সূত্রের খবর, আজ থেকে স্বাভাবিক কয়লা সরবরাহ শুরু করবে তারা।
মনীশবাবু এ দিন বলেন, “ইসিএল কয়লা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে জেনে অসন্তুষ্ট হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমি মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের কথা ইসিএলের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। বলেছি, টাকা বাকি পড়েছে বলেই কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে রাজ্যবাসীকে বিপদে ফেলার কোনও অধিকার ওঁদের নেই। আমরা শিগগিরই পাওনা মিটিয়ে দেব।” উল্লেখ্য, রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের কাছে ইসিএল একাই পায় দু’শো কোটি টাকা। অন্যান্য কয়লা সংস্থারা আরও চারশো কোটি।
ইসিএল-সূত্রের দাবি: অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও বকেয়া মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সংস্থার চেয়ারম্যান রাকেশ সিংহের কথায়, “অমিতবাবু বলেছেন, টাকা পেতে দেরি হবে না। আমরা এক সপ্তাহ অপেক্ষা করব। যদি টাকা পাই তো ভাল। না-পেলে আবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” রাকেশবাবু জানাচ্ছেন, “ইসিএল আগে নিগমকে রোজ সাড়ে চার মালগাড়ি কয়লা দিত। নিগমই বলেছিল, এত কয়লা কেনার টাকা তাদের নেই। রোজ দু’মালগাড়ি পেলেই চলবে। কিন্তু সে টাকাও তারা ফেলে রাখায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।”
রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, কোল ইন্ডিয়ার অধীনস্থ অন্যান্য কয়লা সংস্থার কাছেও নিগম বকেয়া ফেলে রেখেছে। তবু তারা কয়লা দেওয়া বন্ধ করেনি। শুধু ইসিএল-ই সরবরাহ বন্ধ করল কেন?
রাকেশ বলেন, “ইসিএল এখন বিআইএফআরে। আমাদের পুঞ্জীভূত লোকসান ৫,৮০০ কোটি টাকা। কোল ইন্ডিয়া-র নির্দেশ, চার বছরের মধ্যে ওই লোকসান একেবারে কমিয়ে ফেলতে হবে। তাই ফি বছর আমাদের দেড় হাজার কোটি টাকা লাভ করতেই হবে। সে জন্যই এতটা কড়াকড়ি করতে হচ্ছে।” অন্য দিকে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের অভিযোগ, দ্রুত মুনাফার লোভেই ইসিএল ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেড কয়লার দাম দ্বিগুণ করে দিয়েছে। ফলে নিগমের মতো সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলো বিপদে পড়েছে। মনীশবাবুর আক্ষেপ, “আগে বেসরকারি কয়লা কোম্পানিগুলো যা খুশি তা-ই করত বলেই কয়লাশিল্প সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। কিন্তু ইসিএল বকেয়া আদায় করার জন্য যা করছে, তা অতীতের খনি-মালিকদেরও হার মানায়! আমাদেরই রাজ্যে ওরা ব্যবসা করবে, আর আমাদেরই কয়লা দেওয়া বন্ধ করে দেবে! এটা মেনে নেওয়া যায় না।” |