সরকারি টাকা খরচ করে বানিজ্যিক বিপণন কেন্দ্র তৈরি করেও বিলি না করে ফেলে রেখেছে পঞ্চায়েত সমিতি। এমনই অভিযোগ উঠেছে মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে। পুরনো বাসস্ট্যান্ড, নতুন বাসস্ট্যান্ড, থানার পাশের এলাকা ও দৈনিক সব্জিবাজার এলাকায় তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে চারটি বিপণন কেন্দ্র। বছরের পর বছর এ ভাবে বিলি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার বেকার থেকে ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় বাজারের সম্প্রসারণ ও বেকার যুবকদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ওই বাণিজ্যিক বিপণন কেন্দ্রগুলি গড়ে তোলা হয়েছিল। মানবাজার ব্লক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে একাধিক তহবিল থেকে নির্মিত হওয়া ওই সব বাণিজ্যিক বিপণন কেন্দ্রগুলির জন্য খরচ হয়েছে কমবেশি এক কোটি টাকা। এর মধ্যে মানবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্থও রয়েছে।
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিডিও-র কাছে এই সব বাণিজ্যিক বিপণন কেন্দ্রগুলির তৈরির খরচ, বরাদ্দকারী সংস্থা, বিলিবণ্টন না হওয়ার কারণ ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। মানবাজারের বিধায়ক তৃণমূলের সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, “দীর্ঘকাল ধরে এই সব বিপণন কেন্দ্রগুলির কেন পড়ে রয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। দোকানগুলি দ্রুত বিলি করার জন্য বিডিও-র সঙ্গে আলোচনায় বসব।”
মানবাজারের থানার পাশে আমডলের গলি, সেখানে একটি বিপণন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ দীর্ঘদিন আগে নেওয়া হয়েছিল। সেই কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, পরিকল্পনাহীন ভাবে গড়ে ওঠা বিপণন কেন্দ্রগুলি নিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের আগ্রহ নেই। একে ওই এলাকায় লোকজনের যাতায়াত তুলনামূলক কম। তার উপর ছোট ছোট ঘরে ইচ্ছে মতো ব্যবসা গড়ে তোলা যাবে না। তাঁদের অভিযোগ, “বিলি করার আগে দোকানের দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। শাটার লাগানো হয়নি অনেক কক্ষে।”
পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এখন বাস থাকে না। সেখানে মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বরে মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতি বাণিজ্যিক বিপণন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রায় ১৫টি দোকান ঘর তৈরি করেছে। নিয়মবহির্ভূত ভাবে মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতি স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি প্রকল্পের টাকায় ওই দোকানগুলি নির্মাণ করেছিল বলে অভিযোগ। এ নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা চলছে। ফলে দোকান ঘরগুলি তৈরি হলেও বিলি হয় নি।
আবার, মানবাজার নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রায় ২৫টি দোকান নির্মিত হয়। বছর পাঁচেক আগে তৈরি হওয়া দোকানগুলি পড়ে থাকলেও বিলি করা হয় নি। স্থানীয় দোকানদার, ফল বিক্রেতারা আজও অস্থায়ী ঠেলাগাড়ি করে দোকান চালাচ্ছেন। একই অবস্থা মানবাজারে দৈনিক সব্জি বাজার সংলগ্ন বাণিজ্যিক বিপণন কেন্দ্রটির। সেখানে প্রায় ১৫টি দোকান রয়েছে। বাজারের ভেতর ও রাস্তার ধারে যে সব দোকানগুলি নির্মাণ হয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার মধ্যে অনেকগুলিই বেহাল হয়ে পড়েছে।
মানবাজারের প্রধান সিপিএমের অনুরূপা সেন বলেন, “ওই বিপণন কেন্দ্রগুলি নির্মাণে পঞ্চায়েত সমিতি ও মানবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের টাকা খরচ হয়েছে। শীঘ্রই সব কক্ষে শাটার লাগানো হবে।” সব্জি বিক্রেতা রিঙ্কু দত্ত, ঠেলাগাড়িতে ফল বিক্রেতা সন্তোষ তন্তুবায় বলেন, রোদে-জলে আমাদের মাল বিক্রি করতে হয়। একটা দোকান পেলে তাই আমাদের তো বটেই, ক্রেতাদেরও সুবিধা হত। পঞ্চায়েত সমিতি কিন্তু, দোকানগুলি বিলি করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি।”
মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের নিলিমা মাণ্ডির সাফাই, “আমি সভাপতি হওয়ার আগে ওই বিপণন কেন্দ্রগুলি তৈরি হয়েছে। তাই, কোন তহবিল থেকে দোকানগুলি তৈরি হয়েছে, জানা নেই।” বিলি করেন নি কেন? তাঁর দাবি, “কেউ ভাড়া নিতে চেয়ে দরখাস্ত করেনি। দরখাস্ত পেলে বিলির কথা ভাবা হবে।” তৃণমূল কংগ্রেসের মানবাজার ব্লক যুব সভাপতি মানবেন্দ্র চক্রবর্তীর অভিযোগ, “বিপণন কেন্দ্র নির্মাণের নামে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাটমানি খেয়েছে সিপিএমের নেতারা। কোথায় কতগুলি দোকান তৈরি হয়েছে, কারা দখল করে বসে আছে, ভাড়া আদায় হলে তা সরকারি খাতে জমা পড়ছে কিনা- সে সব বিষয়ে বিডিও’র কাছে বিশদ তথ্য চেয়েছি।”
সিপিএমের মানবাজার জোনাল কমিটির সম্পাদক সৌরীন্দ্রমোহন মিশ্রের দাবি, “কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। কাজ শুরু হওয়ার পর ইমারতি দ্রব্যের বাজার-মূল্য বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প অসমাপ্ত রয়ে গেছে।” মানবাজারের বিডিও কমল চন্দ্র দে বলেন, “বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তারপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |