শহরতলি থেকে খাস কলকাতা। চোরাপথে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে সর্বত্রই। কখনও তা পৌঁছে যাচ্ছে গৃহস্থের ঘরে। কখনও আবার হোটেল-রেস্তোরাঁয়। মঙ্গলবার সকালে গ্যাস সিলিন্ডার পাচারকারীদের এমনই একটি বড় চক্র ধরা পড়ল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের হাতে। যদিও সিলিন্ডার পাচারকারী ওই চক্রের অন্যতম চাঁই এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে। ধৃতদের কাছ থেকে এলপিজি গ্যাস ভর্তি ১০০টি সিলিন্ডার আটক করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে লক্ষাধিক টাকাও।
পুলিশ জানিয়েছে, অষ্টমীর রাতে বারাসতের রোহন্ডায় একটি গ্যাসের গুদাম থেকে ৩৬০টি সিলিন্ডার চুরি যায়। সেগুলির মধ্যে ‘ডোমেস্টিক’ ও ‘কমার্শিয়াল’ দুই ধরনের সিলিন্ডারই ছিল। গুদামের মালিক দেবব্রত পালের চোখে ধুলো দিয়ে ২৬০টি খালি সিলিন্ডার গুদামে রেখে তার বদলে ২৬০টি ভর্তি সিলিন্ডার উঠিয়ে নিয়ে যায় চোরা কারবারীরা। অভিযোগ, গুদামটির কেয়ারটেকার বাপ্পা সরকার ওই সিলিন্ডার চুরির ঘটনায় জড়িত। গুদামের সামনে গাড়িতে সিলিন্ডার ওঠানো-নামানো দেখে প্রথমে কেউ সন্দেহ করেনি। কিন্তু বাপ্পা গুদামের ‘ডেলিভারি ম্যান’দের মাধ্যমে বাকি ১০০টি সিলিন্ডার বিক্রি করতে চেয়েই নিজের বিপদ ডেকে আনে। |
গুদামের মালিক দেবব্রতবাবু বলেন, “আমি প্রথমে কিছুই জানতে পারিনি। অষ্টমীর রাতে এক ডেলিভারি বয় আমায় ফোন করে জানায়, আমার নাম করে বাপ্পা তাকে সিলিন্ডার বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। আমার সন্দেহ হওয়ায় তখনই ছুটে যাই গুদামে। কিন্তু ততক্ষণে গুদাম খালি। বাপ্পার ঘরে গিয়ে দেখি, সে-ও সপরিবার উধাও। তার পরেই বারাসত থানায় অভিযোগ করি।”
দেবব্রতবাবুর অভিযোগ পেয়ে বারাসত থানার পুলিশ উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন থানাকে সতর্ক করে। দশমীর রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে হিঙ্গলগঞ্জ থানার সাহায্য নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ন্যাজাত থেকে বাপ্পাকে গ্রেফতার করে জেরা শুরু করে বারাসত থানার পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে নগদ ১ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা।
পুলিশ জানায়, বাপ্পা সিলিন্ডার পাচারকারী। আর এই চক্রের মূল চাঁই পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা এক দুষ্কৃতী। তার বিরুদ্ধে গ্যাসের গুদামে ডাকাতির অভিযোগও রয়েছে। তার খোঁজ চলছে। বাপ্পাদের মতো পাচারকারীদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার গ্যাসের গুদাম থেকে সিলিন্ডার চুরি করিয়ে কলকাতায় সেগুলি বিক্রির কালোবাজারি-চক্র চালাচ্ছে ওই দুষ্কৃতী। বাপ্পাকে জেরা করে দশমীর পর থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে বারাসত থানার পুলিশ। তার মধ্যে রাজকিশোর বেরাপুরিয়া নামে এক ব্যক্তিও রয়েছে। সে গিরিশ পার্ক এলাকায় চড়া দামে বিভিন্ন গৃহস্থ বাড়ি ও রেস্তোরাঁয় গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করত।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার সকালে আবার নিউ টাউন থানার পুলিশ খবর পায়, ওই এলাকার কদমপুকুরে একটি বাড়িতে প্রচুর চোরাই গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। সেই বাড়িতে হানা দিয়ে পুলিশ রোহন্ডা থেকে চুরি যাওয়া ১০০টি গ্যাস-ভর্তি সিলিন্ডার আটক করে। ওই বাড়ি থেকে সিলিন্ডারগুলি তুলতে এসে রাজকিশোর ধরা পড়েছে বলে জানায় নিউ টাউন থানার পুলিশ। |