বাগান থেকে বাংলা---দুই নতুন কমিটিকে ঘিরে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি।
এক দিকে, মাথার উপর টেকনিক্যাল কমিটি বসানো নিয়ে মোহন-কোচ স্টিভ ডার্বি চূড়ান্ত বিরক্ত। আর তা লুকোচ্ছেনও না। অন্য দিকে, ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট কমিটির নজরদারি শুনে বাংলা কোচ ডব্লিউ ভি রামন প্রবল উত্তেজিত।
মঙ্গলবার যুবভারতী থেকে প্র্যাক্টিস সেরে বেরিয়ে আসার মুখে ডার্বিকে চেপে ধরে প্রচারমাধ্যম। “এ রকম কোনও কমিটির কথা আমাকে ক্লাব থেকে জানানো হয়নি। একজন সাংবাদিকের ই-মেল মারফত আমি খবরটা জেনেছি,” বলে দেন ডার্বি। ক্ষুব্ধ সাহেব কোচের দাবি, এত দিনের কোচিং জীবনে কোনও ক্লাবে এই রকম টেকনিক্যাল কমিটি দেখেননি বা শোনেনি। সরাসরি কিছু না বললেও পরোক্ষে ক্ষোভ জানান ডার্বি। বলে ফেলেন, “আমাকে দিয়ে আপনারা যেটা বলাতে চাইছেন সেটা আমি বলব না। কিন্তু হাবেভাবে নিশ্চয়ই আমার মনোভাবটা বোঝা যাচ্ছে!”
যুবভারতী থেকে ইডেন---লক্ষ্মীপুজোর সকালে চিত্রনাট্যে কোনও রদবদল নেই। ডার্বির মতোই বাংলার কোচ রামনেরও দাবি, ডেভেলপমেন্ট কমিটির নজরদারি নিয়ে কোনও খবর তাঁর কাছে নেই। উল্টে চড়া সুরে বললেন, “প্রতিক্রিয়া চাইছেন? শুনুন, এটা আপনাদের বানানো গল্প। ডেভেলপমেন্ট কমিটির এমন কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানি না। তাই এ নিয়ে একটা শব্দও নয়।” |
যুবভারতীতে মোহনবাগানে টেকনিক্যাল কমিটি কাজ শুরু করেননি। করবে ১৭ তারিখ থেকে। ইডেনে কিন্তু ডেভলপমেন্ট কমিটি শুরু করে দিল কাজ। চলে এসেছিলেন সদস্য প্রণব রায়। সেখানে তখন নতুন নির্বাচক প্রধান দীপ দাশগুপ্ত। বাগানে কোচ এবং কমিটির মাঝামাঝি কেউ নেই। বাংলা দলে আবার কোচ ও কমিটির মাঝে নির্বাচকদের কমিটি। তাই অস্বস্তি আরও বেশি।
ইডেনে তখন প্র্যাক্টিস ম্যাচ চলছে। ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য প্রণব এসেই প্রশ্ন তোলেন, চল্লিশ জন ক্রিকেটার মাঠে কী করছে? নির্বাচক কমিটির প্রধান দীপকে প্রণব বলেন, ক্রিকেটারের সংখ্যা আরও কাটছাঁট করতে। সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন মাঠ এবং উইকেট নিয়েও। প্রণবের উপস্থিতিতে মাঠে তৈরি হয় অস্বস্তিকর পরিবেশ।
কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ইন্ডোরের প্র্যাক্টিস সেরে মাঠে ঢুকে পড়েন ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিছুক্ষণ ম্যাচ দেখা এবং দীপের সঙ্গে সামান্য কথোপকথন। নির্বাচক কমিটির প্রধান দীপ সকালে ইডেনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “ক্রিকেটারদের দায়বদ্ধতা শব্দটা আসছে কেন? দায়বদ্ধতা এমনিই থাকে। আর তা হলে নির্বাচকরা আগে কী করে গেছেন? কার কোনটা কাজ, তা নিয়ে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। যাতে বিভ্রান্তি না হয়।” কোচ-ক্রিকেটারদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভায়। সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করায় সকালে উত্তেজিত হয়ে পড়েন দীপ। বিকেলে জানতে পারেন, প্রশ্ন তুলেছিলেন সৌরভ নিজে। তা জানার পরে নির্বাচক প্রধানের মন্তব্য, “ডেভলপমেন্ট কমিটির উপস্থিতিতে অসুবিধে নেই। ক্রিকেটাররা আরও দায়বদ্ধ হতে পারলে ভাল হবে।”
মোহনবাগানের পরিস্থিতি এতটা অস্বস্তিকর নয়। বরং টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য চুনী গোস্বামী জানাচ্ছেন, তাঁদের কাজ কোচের উপর খবরদারি নয়। “কোচ হচ্ছেন দলের প্রধান। আমরা কোচের কাজে হস্তক্ষেপ করব না। আমরা সাপোর্টিং স্টাফ। বাধাও দেব না। শুধু খেলার উপর নজর রাখব।” বলছিলেন চুনী। আর মোহনবাগানে নতুন বিতর্কের প্রেক্ষাপটে ফুটবলাররা কোন জায়গায়? অধিনায়ক ব্যারেটো এ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। রহিম নবি অবশ্য টেকনিক্যাল কমিটির সুখ্যাতিই করলেন। নবির যুক্তি, “যাঁরা টেকনিক্যাল কমিটিতে আছেন তাঁরা অনেক বড় ফুটবলার। তাঁদের পরামর্শ দলের অবশ্যই কাজে লাগবে।”
মোহনবাগানের নতুন কমিটির প্রধান মুখ চুনী নিজে দু’বার রঞ্জি ফাইনালে খেলেছেন বাংলার হয়ে, এক বার ক্রিকেট। বাংলা রঞ্জি দলে নির্বাচকদের পাশাপাশি অন্য কমিটি নিয়ে তিনি কী বলছেন? চুনী বলে দিলেন, “ডেভেলপমেন্ট কমিটির অনেক বড় দায়িত্ব। তাদের সারা বাংলার ক্রিকেট, পিচ, পরিকাঠামো, কোচ সহ বড় ব্যাপার নিয়ে ভাবা উচিত। নির্বাচক কমিটির দায়িত্ব থাকা উচিত শুধু রঞ্জি দল ঘিরে। ডেভেলপমেন্ট কমিটি নির্বাচকদের প্রশ্ন করতে পারে বাংলা দল নিয়ে। পরামর্শ দিতে পারে।” বিতর্ক কিন্তু থামছে না। ডার্বি ও রামন সব মিলিয়ে নতুন করে চাপে। |