সম্পাদক সমীপেষু ...
জল সংরক্ষণ ছাড়া উদ্ধার মিলবে না
চেক বাঁধ নিয়ে চুক্তি রাজ্য সরকারের, বিশেষজ্ঞরা দু’ভাগ’ (২৯-৯) প্রভাত ঘোষের প্রতিবেদন সম্পর্কে এই চিঠি।
বিগত শতকের মধ্যভাগ থেকে বর্তমান শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত দ্রুত ক্রমবর্ধমান জনগণের পানীয় জল খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য শস্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সেচের জল এবং উন্নততর জীবনযাপনের প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন শিল্প উদ্যোগেও জলের প্রয়োজন। কিন্তু বৃষ্টিপাত এবং হিমবাহ থেকে প্রাপ্তব্য বাৎসরিক জলের পরিমাণ, উষ্ণায়ন এবং তজ্জনিত আবহাওয়া পরিবর্তনের কথা না-ধরলেও মোটামুটি ভাবে স্থিতিশীল। বরঞ্চ ব্যাপক প্রদূষণের কবলে পড়ে সেই পরিমাণেও ঘাটতি হচ্ছে। এই ক্রমবর্ধমান সঙ্কট শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তার অশুভ ছায়া পড়েছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান এই বিপুল জনসংখ্যার কারণে এই সঙ্কট দ্রুত ঘনায়মান।
ভারতের জল সম্পদ উন্নয়নের ইতিহাস সুপ্রাচীন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী কালে এই উন্নয়নের গতি হঠাৎ খুব বেড়ে গেল।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যুগপৎ বিভিন্ন ছোট বড় নদীর উপর বাঁধ তৈরি করে ক্যানেলের মাধ্যমে সেচের এবং অন্যান্য প্রয়োজন মেটাবার জন্য জল সরবরাহের ব্যবস্থা চালু হল। প্রথম দিকে এই সমস্ত প্রকল্পের ইতিবাচক সুফলের প্রেক্ষিতে সেগুলিকে সাদর অভিনন্দন জানানো হল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সে চিত্রটা বদলে গেল। নানা কারণে এই প্রকল্পগুলি কঠিন সমালোচনার মুখে পড়ল। নানা কারণের মধ্যে পরিবেশগত অবনতির ব্যাপারটা বিশেষ ভাবে নজরে এল। তা ছাড়া জলাধারগুলির জলধারণ ক্ষমতা হিসেব বহির্ভূত পলিপতনের ফলে বিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে উঠল। ফলে, এই ধরনের নতুন কোনও প্রকল্প শুরুতেই প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হল। এই প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে ইন্দিরা গাঁধীর সময়ে কেরলের নিস্তব্ধ উপত্যকা প্রকল্প মূলত পরিবেশগত কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে বৃহৎ জলসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণ প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝখানে জলসমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে জলাভাবক্লিষ্ট অঞ্চলে নদীসংযোগ করে জল সঞ্চালনের প্রকল্প রূপায়ণের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টাও খুব সফল হয়নি। তাই এখন জলসঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে জল সংরক্ষণের কথা গভীর ভাবে চিন্তা করা কর্তব্য। অবশ্য জল সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে ভূমি সংরক্ষণও উপরি পাওনা হতে পারে। এই প্রসঙ্গেই ‘চেক বাঁধ’-এর প্রশ্ন আসে।
ছোটনাগপুর মালভূমির অনুপ্রবেশ পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের যে যে জেলায় ঘটেছে, যেমন বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং মেদিনীপুর সে সব অঞ্চলে ভূমি তথা জল সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশেষ ভাবে কার্যকর হতে পারে। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে চেক বাঁধ, নালা বাঁধ, কন্টুর বাঁধ, সিঁড়িভাঙা, এবং অরণ্যায়ন বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রসঙ্গে বর্তমানে ভারতবিখ্যাত অণ্ণা হজারে তাঁর নিজের গ্রাম মহারাষ্ট্রের বালেগাঁও সিদ্ধিতে স্থানীয় অধিবাসীদের অংশগ্রহণে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক এবং অনুকরণীয়।
মহারাষ্ট্রের এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বার্ষিক ৪৫০ মিমি থেকে ৬৫০ মিমি (তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও জেলা ১০০০ মিমির অধিক বৃষ্টিপাত লাভ করে)। এবং স্থানীয় ভূমির উচ্চতার জন্য জল দাঁড়ায় না। ফলে, এখানকার অধিবাসীরা ভাল ভাবে চাষবাস করতে পারত না। এবং ক্রমশ ক্ষুধা, মহাজন এবং সুরার শিকার হয়ে এক অস্থির জীবনযাপন করছিল। স্থানীয় যুবকেরা গ্রামে কাজ না-পেয়ে শহরের দিকে মজুর খাটতে যেত। ফলে, ক্রমশ গ্রামটি একটি পরিত্যক্ত জনপদের চেহারা নিল। অণ্ণা হজারে গ্রামের অধিবাসীদের মিলিত করে প্রধানত জল ও ভূমি সংরক্ষণের কাজে মন দিলেন। আজ সেই গ্রাম আদর্শ গ্রামে পরিণত হয়েছে। নদীতে সারা বছর জল থাকে। নানা রকম চাষ করা সম্ভব। পশুপালনও করা হচ্ছে। ফলে, সে গ্রাম আজ এক সমৃদ্ধ জনপদ। পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলে জল এবং ভূমি সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিলে আমরা সেখানেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আশা করতে পারি।
কিন্তু মনে রাখা দরকার, এই পরিবর্তনের রূপায়ণে উপর থেকে কোনও প্রকল্প চাপিয়ে দেওয়া সফল হবে না। দ্বারকেশ্বর, কংসাবতী, গন্ধেশ্বরী এই সব নদীতে ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্পের পরিবর্তে ছোট ছোট নালা এবং শাখানদীতে বাঁধের অগ্রাধিকার পাওয়া প্রয়োজন। এবং এই সব প্রকল্প রূপায়ণে স্থানীয় অধিবাসীদের পূর্ণ সহযোগিতা এবং স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ একান্ত জরুরি। জল সংরক্ষণ প্রকল্পের মধ্যে অরণ্যায়ন, আঞ্চলিক দিঘি ও পুষ্করিণীগুলির সংস্কারও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
আশা করি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বৃহৎ প্রকল্প ছাড়াও বিশেষ করে জল ও ভূমি সংরক্ষণের এই পরীক্ষিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ এবং রূপায়ণ করে এই অঞ্চলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারবে।
সীমা বিশ্বাস
‘শরীর নিয়ে ছুতমার্গের বেড়া ভেঙে বাংলা ছবিতে আলোড়ন পাওলির’ (৯-৯)। ইন্দ্রনীল রায়ের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, নগ্নতা যদি কোনও অভিনেত্রীর সাহসিকতার পরিচয় হয়, তা হলে আমি প্রথমেই অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাসের নাম উল্লেখ করব। তিনিই প্রথম সম্পূর্ণ নিরাবরণ হয়ে তাঁর শরীরকে শেখর কপূর পরিচালিত ‘ব্যান্ডিট কুইন’-এর একটি দৃশ্যে ক্যামেরার সামনে মেলে ধরেছিলেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.