|
|
|
|
অণ্ণাকে চাপে রাখতে চিঠি খোদ প্রধানমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এই ক’দিন দৌত্য চালিয়েছেন, প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন কংগ্রেসের অন্যান্য নেতা। এ বার আসরে খোদ প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস-বিরোধী প্রচার থেকে অণ্ণা হজারেকে বিরত করতে তাঁকে আজ চিঠি দিলেন মনমোহন সিংহ।
মহারাষ্ট্রের এই গাঁধীবাদী নেতার উদ্দেশে মনমোহনের বক্তব্য, লোকপাল বিল সংসদে পাশ করাতে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার বদ্ধপরিকর। তবে শুধু লোকপাল বিল নয়, সরকারের কর্মসূচির মধ্যে ভূমি সংস্কার ও নির্বাচনী সংস্কারের মতো বিষয়ও রয়েছে। আর সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের মতো বিষয়ে রাজনৈতিক সর্বসম্মতি প্রয়োজন। সেটাই গণতন্ত্রের রীতি।
ক’দিন আগে মহারাষ্ট্রের রালেগণসিদ্ধিতে বসে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ার করে অণ্ণা জানিয়েছিলেন, সরকার সংসদে লোকপাল বিল পাশ না করালে তাঁরা সরাসরি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচারে নামবেন। এর পর সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের অপেক্ষা না করেই সে কাজ তাঁরা শুরু করে দিয়েছেন হিসার লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভজন লালের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ওই আসনের উপনির্বাচনে কংগ্রেসকে হারের মুখ দেখাতে কোমর বেঁধেছেন টিম অণ্ণা। ফলে অণ্ণার বিরুদ্ধে এখন পাল্টা রাজনৈতিক কৌশল নিতে হচ্ছে কংগ্রেসকেও। হিসার লোকসভা আসনের উপনির্বাচন থেকে বিজেপি বা অণ্ণারা যাতে জাতীয় রাজনীতিতে ফায়দা লুটতে না পারেন, সে জন্য কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব কৌশলে বিতর্কে জড়াতে চাইছেন তাঁদের। তাই প্রধানমন্ত্রী আজ যেমন অণ্ণাকে চিঠি লিখেছেন, তেমনই কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহও এ দিন অণ্ণার উদ্দেশে খোলা চিঠি দিয়েছেন। যে চিঠির মূল উদ্দেশ্য দু’টি। এক, অণ্ণা ও তাঁরই সহযোগীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে তাঁদের শিবিরে ফাটল ধরানো। দুই, বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলা। যে কারণে দিগ্বিজয়ের চিঠিতে আজ প্রশ্ন তোলা হয়েছে, অণ্ণারা কেন এক বারের জন্যও বিজেপি বা এনডিএ-শাসিত রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে সরব হননি? কেন্দ্রে কঠোর লোকপাল বিল আনার জন্য অণ্ণা অনশন করলেন, অথচ গুজরাতে গত ৯ বছরে লোকায়ুক্ত নিয়োগ না করা নিয়েও কেন টুঁ শব্দ করেননি তাঁরা। এর উত্তরও রয়েছে ওই চিঠিতেই। তা হল, বরাবরের কংগ্রেস-বিরোধী কিছু লোক ঘিরে রেখেছেন অণ্ণাকে। বিজেপি ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল, প্রশান্তভূষণ-সহ এই সহযোগীরাই ভুল বোঝাচ্ছেন তাঁকে।
একই সঙ্গে বিজেপিকে চাপে ফেলতে দিগ্বিজয় লিখেছেন, “জল্পনা হল বিজেপি আপনাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করতে চাইছে। কিন্তু সতর্ক থাকবেন এ রকম বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষকে বরাবর বিপদের দিকেই ঠেলে দিয়েছে বিজেপি।”
হিসার লোকসভা আসনে উপনির্বাচন পরশু। হিসেব মতো আজ সন্ধেয় শেষ হল ভোটের প্রচার। এ দিনও অণ্ণা সহযোগীরা এলাকায় কংগ্রেসকে ভোট না দেওয়ার আবেদেন জানিয়ে প্রচারপত্র বিলিয়েছেন। সভা করেছেন কিরণ বেদী, মণীশ শিশোদিয়া, অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা। তবে এরই সঙ্গে আজ দিনভরই দিগ্বজয়ের আনা অভিযোগগুলি খণ্ডনের চেষ্টা চালিয়েছেন অণ্ণার সহযোগীরা। অণ্ণার সহযোগী অরবিন্দ কেজরিওয়াল যুক্তি দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে জন লোকপাল বিল না আনাতেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই প্রচার। আজ যদি ওই বিল সংসদে পেশ হয় তবে এ দিনই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রচার তাঁরা প্রত্যাহার করে নেবেন। একই সঙ্গে অরবিন্দের সাফাই, তাঁদের প্রচার কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে। তাতে যদি বিরোধী পক্ষের কিছু সুবিধা হয়, তার দায় তাঁদের নয়। অণ্ণাকে রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী করার টোপ দেওয়ার কথাও এ দিন উড়িয়ে দিয়েছে অণ্ণা শিবির। কিন্তু বিপাকে পড়েছে বিজেপি। অণ্ণার জনপ্রিয়তা এখন যথেষ্ট। পাছে তাঁরা চটেন, তাই দিগ্বিজয় ও সামগ্রিক ভাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ কলেও রাষ্ট্রপতি পদে অণ্ণাকে প্রার্থী করা নিয়ে সরাসরি কিছু বলছে না বিজেপি।
কার্যত অণ্ণা শিবির ও বিজেপিকে বিতর্কে জড়ানোর উদ্দেশ্যে এ দিন সফলই হয়েছেন কংগ্রেস। দলীয় সূত্রে খোলা চিঠিকে দিগ্বিজয়ের ‘মাস্টার স্ট্রোক’ বলেই মনে করা হচ্ছে। অণ্ণার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন কংগ্রেস নেতা বি কে হরিপ্রসাদও। তাঁর কথায়, “টিম অণ্ণা এক বিপজ্জনক শক্তি। আসলে তাঁদের লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে নয়, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।”
সাম্প্রতিক কালে যত বারই দিগ্বিজয় কোনও বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন, তত বারই কংগ্রেস সেটি তাঁর ব্যক্তিগত মত বলে এড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজ তা হয়নি। বরং সমান্তরাল ভাবে অণ্ণাকে চাপে ফেলতে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও। কংগ্রেসের তরফে দলীয় মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি আজ বলেন, “খোলা চিঠির জবাবে অণ্ণা কী বলেন, তার জন্য কংগ্রেস অপেক্ষায় রয়েছে। কারণ অণ্ণাকেও এখন ব্যাখ্যা দিতে হবে যে, হিসারে তিনি যখন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানুষকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন, তখন সেখানে কাকে সমর্থন করছেন? দুর্নীতির অভিযোগ তো নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাকি দুই দলের বিরুদ্ধেও রয়েছে।” |
|
|
|
|
|