জমি খোঁজার নয়া যাত্রা শুরু আডবাণীর
হিন্দুত্বের রাজনীতি দূরে সরিয়ে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের মুখ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টায় আজ রথে চড়লেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। আর এর মাধ্যমেই অণ্ণা হজারেদের থেকে কংগ্রেস বিরোধিতার রাশ কেড়ে নিজের হাতে নিয়ে এনডিএ-র মধ্যেও গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে দিলেন তিনি।
যাত্রার শুরুটাও হল তেমনই। এক দিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সফল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার যাত্রার সূচনা করলেন। অন্য দিকে হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’ গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই যাত্রার তুমুল প্রশংসা করলেন। অবশ্য মোদীর প্রশংসার মধ্যে একটু প্যাঁচও মিশে রইল। সঙ্ঘের আপত্তি সত্ত্বেও আডবাণী নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর লড়াইয়ে রাখার ইঙ্গিত দিলেও মোদী এই রথযাত্রা কোনও পদের জন্য নয় বলে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন।
কিন্তু আজকের দিনে অন্তত সে সব বিতর্ক নিয়ে মাথা ঘামানোর ইঙ্গিতই দিলেন না আশি পেরনো লালকৃষ্ণ আডবাণী। বিহারের কাঠফাটা রোদ্দুরে যখন সুষমা স্বরাজ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, অরুণ জেটলিও ক্লান্ত, তখন একটি হাইটেক বাসে মেয়ে প্রতিভাকে সঙ্গে নিয়ে রথ ছোটালেন চুরাশি বছরের প্রবীণ নেতা! গোটা যাত্রায় আধ ডজন পথসভাও করলেন। জয়প্রকাশ নায়ারণ যে ভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দিল্লিতে কংগ্রেসের মসনদ টলিয়ে দিয়েছিলেন, আজ তাঁর জন্মভিটে সিতাবদিয়ারাতে নীতীশ কুমারকে দিয়ে যাত্রার সূচনা করিয়ে আডবাণী সেই রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। এনডিএ-র শরিকদের সমর্থন জুটিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর দৌড়ে টিকে থাকতে হলে তাঁকে যে হিন্দুত্বের রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং এনডিএ শরিকদের সমর্থন জোটাতে হবে, সে কথা বিলক্ষণ জানেন আডবাণী। তাই দু’দশক আগে রথে চড়ে দেশ জুড়ে যে উগ্র হিন্দুত্বের হাওয়া তুলেছিলেন তিনি, তা এ দিন সযত্নে বর্জন করলেন। তারই নিদর্শন হিসেবে এ দিন রাতে পটনায় পৌঁছে তাঁর এ বারের রথযাত্রার সঙ্গে রামরথের তুলনা টানতেও ছাড়লেন না আডবাণী।
প্রবীণ বিজেপি নেতার এই চেষ্টা খানিকটা কাজেও এল। যে নীতীশ কিছু দিন আগে নরেন্দ্র মোদীর অনশন বয়কট করেছেন, আজ তিনিই আডবাণীর যাত্রার সূচনা করলেন! একই সঙ্গে বললেন, “আডবাণীর আগের যাত্রা যা-ই হোক, এ বারের যাত্রা বিশুদ্ধ দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সে কারণে আমি তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমি অনুরোধ করছি, দেশজুড়ে যাত্রার সাফল্যের পরেও আডবাণী যেন আর একবার সিতাবদিয়ারাতে আসেন।”
সফর-সঙ্গী। বিহারের সিতাবদিয়ারায় আডবাণী ও নীতীশ কুমার। ছবি: পিটিআই।
রথযাত্রা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সংঘাতের পরেই গুজরাতের বদলে নীতীশের বিহার থেকে যাত্রা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন আডবাণী। অবশ্য যাত্রা শুরুর আগে নিজের ব্লগে আডবাণীর তারিফ করে মোদী বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সেই সংঘাতের কথা নেহাতই ‘গুজব’। কিন্তু বিজেপির অনেক নেতা মনে করছেন, সেই সাফাই দিতে গিয়ে অহেতুক বিতর্ক বাড়াতে চেয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, সেখানে প্রশংসার মোড়কেও মোদী লিখেছেন, আডবাণী তাঁর রাজনৈতিক জীবনের নব্বই শতাংশই বিরোধী নেতা হিসেবে কাটিয়েছেন। অর্থাৎ, ক্ষমতায় আসতে পারেননি। আর আডবাণীর যাত্রা কোনও পদের প্রত্যাশায় নয়। বিজেপির একাংশের বক্তব্য, গুজরাত মুখ্যমন্ত্রীর এই দু’টি বক্তব্যই আসলে আডবাণীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর দৌড়ের বাইরে রাখার ইঙ্গিত। মোদী এ দিন খোঁচা দিয়েছেন আডবাণীর বয়স নিয়েও। আরও একটা কাজ করেছেন তিনি। ‘বন্ধু’ নীতীশের প্রশংসা করে আসলে তাঁর অস্বস্তিই বাড়াতে চেয়েছেন।
কিন্তু আডবাণী শিবির মনে করছে, এতে খুব বেশি অসুবিধার কিছু নেই। আডবাণী এখন হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়ে’র থেকে সুকৌশলে দূরত্ব বজায় রাখারই চেষ্টা করছেন। তাতে নীতীশ কুমার-সহ ভবিষ্যতে এনডিএর ছাতার তলায় আরও যাঁরা আসতে পারেন, তাঁদের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হওয়া সম্ভব হবে। আপাতত দুর্নীতি বিরোধিতার অস্ত্রে ভর করে অণ্ণা হজারের মতো অরাজনৈতিক ব্যক্তির হাত থেকে কংগ্রেস বিরোধিতার রাশ নিজের হাতে তুলে সেই সমর্থন হাসিল করাই আডবাণীর লক্ষ্য। তিনি বলেন, “আমি শুধু কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সরব হব না, আমাদের দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সততার সঙ্গে মোকাবিলাও আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।” সুষমা স্বরাজ বলেন, “শুধু কেন্দ্রে ক্ষমতার পরিবর্তন করাই এই যাত্রার লক্ষ্য নয়, গোটা ব্যবস্থারও বদল দরকার।” বিহারের নীতীশ-রাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “যদি বিহারের বেহাল দশা নীতীশের হাত দিয়ে শোধরাতে পারে, তা হলে কেন্দ্রের বেহাল দশারও পরিবর্তন সম্ভব।” দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহকেও এ দিন আক্রমণ করেন সুষমা ও অরুণ জেটলি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.