|
|
|
|
গ্রেফতারির আগেই চার্জশিট |
রাম না জন্মাতেই রামায়ণ, পুলিশকে ভর্ৎসনা কোর্টের |
শ্যামল মুখোপাধ্যায় |
গ্রেফতারের আগেই তদন্ত শেষ! এমনকী, জমা পড়ে গেল চার্জশিটও!
এ তো রাম জন্মানোর আগেই রামায়ণ লেখা!
বস্তুত ঠিক এই ভাষাতেই কলকাতার কড়েয়া থানার পুলিশকে ভর্ৎসনা করলেন আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) সিএইচ করিম। ঘটনার কেন্দ্রে পাকিস্তানের এক নাগরিক। কী করেছেন তিনি?
বিদেশি বিতাড়ন আইনে (ফরেনার্স অ্যাক্ট) সৈয়দ আহমেদ মহম্মদ দেশাই নামে ওই প্রৌঢ়কে কড়েয়া থানা এলাকায় গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ২০০৮-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়। কিন্তু নথিপত্র যাচাই করে বিচারক দেখেন, তার দু’দিন আগেই মামলার তদন্ত সেরে পুলিশ আদালতে চার্জশিটও জমা দিয়েছে! শুধু তা-ই নয়। দেখা যাচ্ছে, দেশাইকে একই আইনে পুণের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ১৯৯৯ সালে। এবং পুণের সিজেএম তাঁকে মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠাতে বলেছিলেন। তা তো হয়ইনি, উপরন্তু একই অভিযোগে তাঁকে ফের গ্রেফতার করাটা মানবাধিকার লঙ্ঘনেরই সামিল বলে মনে করছেআদালত।
আর এই পরিস্থিতিতে আলিপুরের সিজেএম তাঁর সাম্প্রতিক রায়ে ‘রাম না জন্মাতেই রামায়ণ লেখার’ কথা বলে জানিয়েছেন, সৈয়দ আহমেদ মহম্মদ দেশাইয়ের বিরুদ্ধে কড়েয়া থানার পুলিশের সব অভিযোগ অবিশ্বাস্য ও মিথ্যে। ওই ব্যক্তিকে অবিলম্বে তাঁর দেশে ফেরানোর নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।
বাহান্ন বছরের দেশাই আপাতত আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। এত দিন তাঁকে নিয়ে কারা প্রশাসনের বিন্দুমাত্র হেলদোল ছিল না। কিন্তু আদালতের রায়ের পরেই তাঁকে ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছে। দেশাইকে প্রথমে দিল্লির তিহাড় জেলে পাঠাতে হবে। সেখান থেকে তাঁকে পৌঁছে দেওয়া হবে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে। আলিপুর জেলের সুপার চিত্তরঞ্জন ঘড়াই মঙ্গলবার বলেন, “আদালতের নির্দেশের পরে আর দেরি করা যাবে না। তাই ওঁকে দিল্লি পাঠানোর জন্য পুলিশি ব্যবস্থা করতে পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ জানিয়ে জরুরি চিঠি লিখেছি।” রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, “আদালতের নির্দেশ এখনও আমার হাতে আসেনি। তবে নির্দেশ যথাযথ ভাবেই পালন করা হবে।”
কোর্ট-সূত্রের খবর: দেশাই আদতে করাচির লোক। তাঁর স্ত্রী বিবি জোহরা মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের বাসিন্দা। বিয়ের পরে জোহরাও পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেন। ব্যবসার কারণে ১৯৮০ থেকে দেশাইয়ের ভারতে আনাগোনা শুরু। তারই মধ্যে ’৯৯-এ পুণেতে গ্রেফতার হওয়া। সেই পুণে-মামলার উল্লেখ করে আলিপুরের সিজেএমের মন্তব্য: এক বার পুণের পুলিশ ওঁকে ধরল। ফের একই অভিযোগে ওঁকে গ্রেফতার করল কলকাতার পুলিশ!
এ হেন কাজের জন্য পুলিশকে ভর্ৎসনা করে বিচারক লিখেছেন, দেশাইয়ের ক্ষেত্রে মানবাধিকারও লঙ্ঘিত হয়েছে মারাত্মক রকম। |
|
|
|
|
|