রাজস্থানের পাথরপরিখা জঙ্গলেই রাজকীয় মধুচন্দ্রিমা। রণথম্ভোরের আকাশ ছোঁওয়া কেল্লা আর উদয়পুরের দুধপুকুর। সকলে মিলে তৈরি হচ্ছে রাজা-রানির ভালবাসার সাক্ষী থাকার জন্য!
রাজা? জিগমে খেশর নামগিয়াল ওয়াংচুক। ভুটানের বৌদ্ধমন্দিরে ঘিয়ের বাতি জ্বালিয়ে বিবাহ অনুষ্ঠানের পর এক পাত্র থেকে স্থানীয় ছাং ফো মদ পান করে আগামী ১৩ তারিখ যাঁর রানি হবেন দীর্ঘাঙ্গী জেৎসুন পেমা। তার কয়েক দিন পরই নবদম্পতি চলে আসবেন দিল্লিতে। না, কূটনৈতিক কোনও রাষ্ট্রীয় সফরে নয়। ভুটানের রাজার বিবাহে ভারতের উপহারমধুচন্দ্রিমার আতিথ্য বহন। রাজস্থানের প্রতি বিশেষ অনুরাগ রয়েছে জিগমে-র। সেই অনুযায়ী সব ব্যবস্থা করছে ভারত সরকার। ভুটানের রাজা-রানি দিল্লি থেকে সোজা চলে যাবেন জয়পুর। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ‘প্যালেস অন হুইলস’-এর মতো রাজকীয় ট্রেন আলাদা করে তৈরি রাখা হচ্ছে রাজদম্পতির জন্য। |
|
|
জিগমে ওয়াংচুক |
জেৎসুন পেমা |
|
এমনিতে বিদেশি তারকাদের মধুচন্দ্রিমায় একেবারেই অনভ্যস্ত নয় রাজস্থান। ঠিক এক বছর আগে ব্রিটিশ কৌতুকাভিনেতা রাসেল ব্র্যান্ড এবং পপ গায়ক কেটি পেরির হেলিকপ্টার এসে নেমেছিল রণথম্ভোর ন্যাশনাল পার্কের কাছে। তখন তাঁদের বিবাহের বয়স এক সপ্তাহ। সেই স্মৃতি অবশ্য সুখের হয়নি। বিয়ের আগে এক মাস ঘোষিত যৌন উপবাসে থাকার পরে ওই দম্পতি রাজস্থানে এসে উঠেছিলেন দৈনিক ৮ হাজার ডলারের বিলাসবহুল আমন-এ-খাস রিসর্টে। কিন্তু প্রথম রাতেই মাকড়সার কামড়ে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা হয় কেটির! ফিরে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার গ্রাজিয়া পত্রিকায় সেই দুঃখের কথা জানিয়ে লিখেছিলেন, আবার রাজস্থানে আসতে চান তিনি। ধনকুবের অরুণ নায়ার এবং লিজ হার্লে তো খাঁটি ভারতীয় মতে বিয়েই সেরেছিলেন খোদ যোধপুরের উমেদ ভবন প্রাসাদে। তবে সেই বিয়ে কিন্তু টেঁকেনি। সে সব অবশ্য এখন ইতিহাস। প্রেমিকা এবং বিবাহ নিয়ে যথেষ্টই প্রত্যয়ী ভুটানের রাজা! সংসদে যিনি তাঁর হবু স্ত্রী সম্পর্কে বলেছেন, “জানি না, সাধারণ মানুষের তাঁকে কেমন লাগবে। কিন্তু আমার কাছে পেমা-ই এক এবং একমাত্র। সে যুবতী। দরাজ এবং উষ্ণ হৃদয়ের অধিকারিণী। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানও বাড়বে। দেশের কাজেও যোগ দিতে পারবে সে।”
জেৎসুন পেমা এমনিতে নিছকই সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা মেয়ে। ভারতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও অল্প বয়স থেকেই। ২০ বছর বয়সী পেমা হিমাচলের সানোয়ারে লরেন্স স্কুলে পড়েছেন ২০০৮ পর্যন্ত। সেখান থেকেই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা পাশ করেছেন। সেই স্কুলের এক শিক্ষকের স্মৃতিচারণায়, “ভুটানের রাজার সঙ্গে ওর বিয়ে হচ্ছে এতে আমরা একই সঙ্গে গর্বিত এবং বিস্মিত। হিন্দি এবং ইংরেজি দু’টি ভাষাতেই তুখোড় পেমা। পটু বাস্কেটবল খেলাতেও।”
সিংহাসনে বসেই জিগমে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন ভারতের প্রতি তাঁর আস্থা ও ভালবাসার কথা। আসন্ন মধুচন্দ্রিমা দু’দেশের সম্পর্কেও গভীর ছাপ ফেলবে বলে মনে করছেন তিনি। দিল্লি ও ভুটানের আস্থা অর্জন করতেই চাইছে। অতীতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিল ভুটান। ভারতের জলবিদ্যুৎ শক্তির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসও বটে। আগামী এক দশকে ভুটানে ১০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদুৎ প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা করছে সাউথ ব্লক।
চিনের উপর চাপ বাড়ানোর জন্যও ভুটানের তাস অনেক সময়ই খেলে এসেছে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, রাজস্থানে তাঁদের দাম্পত্য শুরু করার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী হবু রাজা-রানি। মধুচন্দ্রিমার কূটনীতি অতএব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন করে সুবাতাস বইয়ে দেবে বলেই আশা করছে দু’পক্ষ। |