|
|
|
|
পুজোর কাঁটা আগুন বাজার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি |
এক ইঞ্চি মাপের শুকনো পদ্মের কুড়ি ১০ টাকা। সাইজে আরও একটু বড় হলে দামও বেশি। বড় কুড়ির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা। শালুক ফুল ১০ টাকা। অন্য সময় যা ফেলে দেওয়া হয়, ঘটে দেওয়ার সেই ডাবের কুড়িও এক একটি ১৫ থেকে ২০ টাকা। আড়াই ফুট লম্বা গাঁদা ফুলের মালা ১০ টাকা। পুজোর উপকরণের মধ্যে অন্যতম কলার গাছের ডোঙা দিয়ে তৈরি নৌকো ৩৫-৪০ টাকা। ধানের ছড়া ৬ টাকা জোড়া। শিলিগুড়ি বিধান মার্কেটে লক্ষ্মী পুজোর সামগ্রীর দাম এমনই আকাশ ছোঁয়া। তা সত্ত্বেও লাগোয়া শিবমন্দির, একতিয়াশালের মতো এলাকার বাসিন্দারা বাজার করতে আসছেন শহরের ওই বাজারেই। কারণ শহরতলিতে পুজোর ওই সমস্ত উপকরণের দাম আরও চড়া। পাশের শহর জলপাইগুড়িতে পুজোর সামগ্রী, ফল, সব্জির দাম শিলিগুড়ির তুলনায় আরও বেশি। যেমন শিবমন্দিরের সত্যেন বসু রোডের বাসিন্দা নিভা বসুর কথাই ধরা যাক। শিবমন্দির বাজার থেকে তিনি পুজোর করছেন না। নিভাদেবীর কথায়, “আমাদের ওখানকার বাজারে দাম বেশি। সেই জন্য বিধান মার্কেট থেকেই পুজোর বাজার করছি।” একতিয়াশাল থেকে বিধান মার্কেটে পুজোর বাজার করতে এসেছেন গৃহবধূ পূর্ণিমা বসু। তিনি বলেন, “এখানে এলে ভাল জিনিস পাওয়া যায়। দামেও কিছুটা সস্তা পরে।” প্রধাননগরের বাসিন্দা দেবদাস সাহাও এসেছেন। বাড়ির কাছে নিবেদিতা মার্কেট রয়েছে। তবু পুজোর বাজার সারছেন বিধান মার্কেটে। তিনি বলেন, “বাড়ির পুজো করতেই হবে। বিধান মার্কেটে বেছে, দরদাম করে একটু সস্তায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই এখানেই বাজার করতে এসেছি।” এদিন বিধান মার্কেটে এক একটি নারকেল ২৫ টাকা করে, আপেল ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, পেয়ারা ৭০ টাকা, ন্যাসপাতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে এই বাজারে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কিলোগ্রাম জলসিঙারার দাম কমপক্ষে ৬০ টাকা। ২০০ গ্রাম ধানের প্যাকেট ২০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। হাতের চেটোয় ধরা যায় বাঁশের তৈরি লক্ষ্মীর ডালি ২৫ টাকা। আর একটু বড় ডালির দাম ৩৫ টাকা। ফুলকপির দাম প্রতি কিলোগ্রাম ৮০ টাকা। পালং শাক ৫০ টাকা, মুলোশাক ৩০ টাকা কিলোগ্রাম। উত্তরে অনাবৃষ্টি আর দক্ষিণে বন্যা, দুইয়ের যাতাকলে পড়েই লক্ষীপুজোর বাজারের এমন হাল বলে জানিয়েছে কৃষি দফতর। জলপাইগুড়ি শহরের স্টেশন বাজার থেকে দিনবাজার, পান্ডাপাড়া থেকে বয়েলখানা বাজারের সর্বত্রই পদ্ম ফুলের হাহাকার। ফ্রিজে রাখা, কিছুটা পচে যাওয়া পদ্মের কুঁড়িই বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা করে। ঘটে বসানোর ডাবের কুঁড়ি সারা বাজার খুঁজে ১৫ টাকার কমে মিলবে না। ফুলকপির প্রতি কিলোগ্রাম ১২৫ টাকা। একজোড়া ধানের শিসের ন্যুনতম দাম ১০ টাকা। জলপাইগুড়ি জেলার অতিরিক্ত কৃষি আধিকারিক নবেন্দু বসাক বলেন, “বছরের শুরু থেকেই অনাবৃষ্টির প্রকোপ শুরু হয়েছে। অগস্ট মাসের মাঝামাঝি এবং পুজোর আগে দু’তিন দিন বৃষ্টিতে শাকসব্জির ক্ষতি হয়েছে।” দিনবাজারে একটি মাঝারি আকারের নারকেলের দাম ৪০ টাকা, একটি আখের দাম ১৫ টাকা, আপেল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। উত্তরবঙ্গে পদ্মফুলের জোগান আসে দক্ষিণবঙ্গ থেকে। দক্ষিণে বন্যা পরিস্থিতির কারণে এবার পদ্মসঙ্কট দুর্গা পুজোর আগে থেকেই। কদমতলার ফুল ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “পদ্ম ফুল তো আসছেই না। আগে এক একটা পদ্মফুল যেখানে তিন থেকে পাঁচ টাকায় কিনতাম এখন তার দাম ১০-১৫ টাকা। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|