ট্রেন যত চালাতে হয়, রেক তার তুলনায় নগণ্য।
ফলে ভিড়ের চাপে শহরতলির লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের দুর্দশা চরমে। গত পাঁচ বছরে শহরতলির ইএমএউ ট্রেনে যাত্রী বেড়েছে কয়েক কোটি। সেই চাপ সামলাতে ন’কামরার ট্রেনগুলোকে বারো কামরায় রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা হয়েছিল বটে, কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। কবে হবে, সে সম্পর্কেও রেল-কর্তারা অন্ধকারে।
অতএব, হাওড়া, শিয়ালদহ, খড়্গপুর সব রুটেই ব্যস্ত সময়ে সব ট্রেনে বাদুড়ঝোলা ভিড়। সওয়ারিদের ভোগান্তি নিত্যনৈমিত্তিক।
ট্রেন ও রেকের তুলনামূলক খতিয়ানেই যাত্রী-দুর্ভোগের ছবিটা পরিষ্কার। পূর্ব রেল-সূত্রের তথ্য বলছে, হাওড়া ডিভিশনে ৫৫টি রেক দিয়ে চালানো হয় বিভিন্ন দূরত্বের ৩৮৫টি ট্রেন। তার মধ্যে ১২ কামরার রেক ২৪টি।
আর শিয়ালদহ ডিভিশনে? ৮৫৯টি ট্রেন চালানো হয় মাত্র ১০০টা রেক দিয়ে, যার মধ্যে সাকুল্যে ১৪টি হল বারো কামরার! শিয়ালদহ দক্ষিণে বারো কামরার ট্রেন চলে ১৪৩টি। শিয়ালদহ মেন লাইনে মাত্র সাতটা। দক্ষিণ পূর্ব রেলে হাওড়া-খড়্গপুর-মেদিনীপুর শাখায় ২৭টি রেক দিয়ে চালানো হয় ১৫৩টি ট্রেন। বারো কামরার রেক মাত্র পাঁচটা। তা দিয়ে ২৯টি ট্রেন চালানো হয়।
এই সমস্যার নিরসনেই সংখ্যা বাড়ানোর বদলে ট্রেনের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর কথা ভাবা হয়েছিল। রেল-কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, ‘‘এখানে লাইন আর রুটের যা হাল, তাতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়লে তা চালানোর সমস্যা। নতুন ট্রেনের জন্য সময় বার করাই কঠিন। তার চেয়ে বরং ট্রেনগুলোকে বারো কামরার করতে পারলে এক সঙ্গে অনেক যাত্রী বহন করা যাবে।’’
কিন্তু রেল বোর্ডের সেই পরিকল্পনা এত দিনেও সর্বত্র বাস্তবায়িত হল না কেন?
কামরার অভাব একটা বড় কারণ। রেল বোর্ডের কর্তারা গত চার-পাঁচ বছর ধরে যে কারণ দর্শিয়ে আসছেন। ওঁদের যুক্তি, ট্রেনের কামরা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। তা বরাত দিয়ে তৈরি করাতে হয়। কিন্তু কত কামরার বরাত দেওয়া হয়েছে? আর দেওয়া হয়ে থাকলে সেগুলো হাতে পাওয়া যাবে কবে?
এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। উপরন্তু শহরতলিতে বারো কামরার লোকাল ট্রেন চালু করতে গেলে প্রতিটা স্টেশনের প্লাটফর্মগুলো অনেক লম্বা করতে হবে। কারণ, প্ল্যাটফর্ম লম্বা না-করলে বারো কামরার ট্রেন দাঁড় করানো মুশকিল। কিন্তু রেল-কর্তারা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন জায়গা বেদখল হয়ে যাওয়ায় এই কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তা ছাড়া বারো কামরার ট্রেনের জন্য নতুন যে কারশেড করতে হবে, তার জমি অধিগ্রহণেও নানা সমস্যা বলে অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। তবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা জানিয়েছেন, একটা নতুন কারশেডের জন্য দরপত্র ডাকা হবে শিগগিরই। পাশাপাশি
বারো কামরার লোকালের জন্য ঢেলে সাজতে হবে সিগন্যাল ব্যবস্থা।
|
টানাটানির ট্রেন |
 |
ডিভিশন |
ট্রেন |
রেক |
বারো কামরা |
হাওড়া |
৩৮৫ |
৫৫ |
২৪ |
শিয়ালদহ |
৮৫৯ |
১০০ |
১৪ |
খড়্গপুর |
১৫৩ |
২৭ |
৫ |
|
এ দিকে রেল-সূত্রের খবর: কিছু দিনের মধ্যে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব, দুই রেলেই নতুন কিছু ইএমইউ রেক আসবে। যদিও তাতেও সমস্যার আশু সুরাহার সম্ভাবনা দেখছেন না রেল-কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, যাত্রী পরিষেবা উন্নত করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটা সুসংহত পরিকল্পনা, যা অতি শীঘ্র বাস্তবায়িত করতে হবে। এক প্রাক্তন কর্তার কথায় “খাস শিয়ালদহ স্টেশনের অধিকাংশ প্ল্যাটফর্ম দিয়ে যাতে বারো কামরার লোকাল চালানো যায়, সবার আগে তার ব্যবস্থা করা জরুরি। সে জন্য শিয়ালদহ স্টেশনকেও ঢেলে সাজতে হবে।” তা না-হওয়া ইস্তক বাদুড়ঝোলা দশা কাটবে না। |