পুজো মিটেছে বৃহস্পতিবার। তার তিন দিন না-কাটতেই, সোমবার রাজ্য জুড়ে ফের শুরু হয়ে গেল লোডশেডিং।
এবং বিদ্যুৎকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, এ শুধু এক দিনের বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়। এখন রোজই বিদ্যুৎ ছাঁটাই চলবে। এক দিকে অর্থাভাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম কয়লা কিনতে পারছে না, অন্য দিকে ভিন রাজ্য থেকে বিদ্যুৎ কেনার টাকা নেই বণ্টন কোম্পানির। অতএব লোডশেডিং অবশ্যম্ভাবী বলে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা মনে করছেন। তাঁদের পূর্বাভাস: দিনে একটু কম হলেও সন্ধ্যায় ঘাটতি হবে পাঁচশো মেগাওয়াট।
পুজোর ছুটিতে পশ্চিমবঙ্গে লোডশেডিংও ছুটি নিয়েছিল। কল-কারখানা, অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা এমনিতেই কমে গিয়েছিল। উপরন্তু পুজোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে নগদ ৭০ কোটি টাকায় ইসিএলের থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টন কয়লা কিনেছিল নিগম। সেই বাড়তি কয়লা দিয়ে পুজোর সপ্তাহটা সামাল দেওয়া গেলেও এখন ফের সেই আগের দশা। হাতে টাকা নেই, কয়লাও নেই। কয়লা বাবদ ইতিমধ্যেই নিগমের কাছে ইসিএলের বকেয়া পাওনা দাঁড়িয়েছে তিনশো কোটি টাকায়। ইসিএল তাই সাফ বলে দিয়েছে, নগদে দাম না-পেলে নিগমকে আর কয়লা দেওয়া হবে না।
ফল যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে।
সোমবার সকাল ন’টা থেকে রাজ্যে বিদ্যুৎ ছাঁটাই শুরু হয়ে যায়। সন্ধ্যায় ঘাটতি বাড়তে বাড়তে দাঁড়ায় ৫৫০ মেগাওয়াটে। বণ্টন কোম্পানির তরফে জানানো হয়, এখন দিনে ১৪ ঘণ্টাই ঘাটতি। তার মধ্যে এক-এক এলাকায় দিনে চার বার লোডশেডিং করা হয়েছে। প্রতি বার গড়ে দেড় ঘণ্টা। অর্থাৎ সারা দিনে অন্তত ছ’ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থেকেছে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল। সিইএসসি-এলাকায় এ দিন সকালে ঘণ্টাখানেক লোডশেডিংয়ের পরে ফের বিদ্যুৎ ছাঁটাই শুরু হয় দুপুর তিনটেয়। সন্ধ্যার মুখে ঘাটতি ছিল ১০০ মেগাওয়াট। পরে তা ক্রমশ কমে যায়। সিইএসসি-র দাবি, বণ্টন কোম্পানির সরবরাহে টান পড়াতেই এই ঘাটতি। সব মিলিয়ে গোটা রাজ্যে মোট ঘাটতি ৬৬০ মেগাওয়াট।
সঙ্কটের ছবিটা শিগগির কাটবে, এমন ভরসাও দিতে পারছেন না কর্তারা। কারণ, নিগমের কয়লার ভাঁড়ার শোচনীয়। সাগরদিঘি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা রয়েছে ১১ হাজার টন, মানে এক দিন চালানোর মতো। কোলাঘাটে ২০ হাজার টন ও বক্রেশ্বরের ১৬ হাজার টন কয়লার মজুত শুধু এক দিনের প্রয়োজন মেটাতে পারবে। ব্যান্ডেলে যে ২৪ হাজার টন কয়লা রয়েছে, তা দিয়ে তিন দিনের উৎপাদন চলতে পারে। তবে ব্যান্ডেলের উৎপাদনক্ষমতা বেশি নয়। আর সাঁওতালডিহিতে কয়লা রয়েছে ৩০ হাজার টন। সাশ্রয়ের খাতিরে সেখানে আড়াইশো মেগাওয়াটের দু’টো ইউনিটের একটা বন্ধ রাখা হয়েছে। মজুত কয়লায় একটা ইউনিট দিন সাতেক চলতে পারে।
রাজ্যকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ জোগাতে হলে রোজ দরকার অন্তত ১৬ মালগাড়ি বা ৫০ হাজার টন কয়লা। পুজোর মধ্যে নিগম দিনে পেয়েছে দশ মালগাড়ি। রবিবার পেয়েছে বারো মালগাড়ি। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় ২৫%-৩০% কম। ও দিকে কয়লার অভাবে ডিপিএল-ও নাস্তানাবুদ। এ দিন সেখানে উৎপাদন ১০০ মেগাওয়াটেরও নীচে নেমে যায়। শুধু দু’টো মাত্র ছোট ইউনিট চালু রেখে ৩০০ ও ১১০ মেগাওয়াটের বড় ইউনিট দু’টো বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। |