রাজ্যে ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে বার বার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে কোনও ‘ফল’ হয়নি। মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে মিছিল ও জমায়েত করেও তেমন ‘লাভ’ হয়নি। তাই এ বার আইন অমান্যের পথে যাচ্ছে রাজ্য বামফ্রন্ট। আলিমুদ্দিনে সোমবার বামফ্রন্টের বৈঠকে এক গুচ্ছ আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। নভেম্বর মাসে জেলায় জেলায় আইন অমান্যের পরে ২৯ নভেম্বর কলকাতায় একই কর্মসূচি পালন করবেন বামফ্রন্টের নেতারা। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছেন, রাজ্য বামফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা তো বটেই, তিনি নিজেও ওই আইন অমান্যে অংশ নেবেন। অন্য একটি কর্মসূচিতে ১৮ নভেম্বর কলকাতায় আইন অমান্যে অংশ নেওয়ার কথা ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ নেতা অশোক ঘোষের। তার পরেই বিমানবাবুরাও একই রাস্তায় হাঁটবেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি, রাজ্যে সন্ত্রাস বা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রচার-আন্দোলনে রাজ্যের সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক ভাবে সাড়া না-দেওয়ায় বাম নেতারা কিছুটা ‘হতাশ’। রাজ্য প্রশাসন তথা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এ বার আইন অমান্যের পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামফ্রন্ট। আগামী মাসে সিপিআই এবং সিপিএমের সম্মেলন প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে। কিন্তু আইন অমান্য কর্মসূচি পালন করার জন্য প্রয়োজনে লোকাল বা জোনাল স্তরে সম্মেলনের দিন পরিবর্তন করতে হবে বলে বিমানবাবু এ দিন জানান। কেন তাঁরা এ ভাবে জেলায় জেলায় আইন অমান্যের পথে যাচ্ছেন? বিমানবাবু বলেন, “বার বার বলা সত্ত্বেও বাম নেতা-কর্মীদের উপরে সন্ত্রাস বন্ধ হয়নি। উল্টে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে! বলা হচ্ছে, কোথায় সন্ত্রাস? জিনিসপত্রের দাম কমা তো দূরের কথা উল্টে আরও বেড়েছে। আজ, মঙ্গলবার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। তার আগে বাজারে আগুন লেগেছে! এই পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানাতেই আইন অমান্য কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।”
বাম, বিজেপি ও কংগ্রেসের ট্রেড ইউনিয়নগুলির আয়োজনে আগামী ৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় ভাবে ‘জেল ভরো’র কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিমানবাবু বলেন, “এই আন্দোলনকে সফল করতে ১-৬ নভেম্বর প্রচার করা হবে।” এ ছাড়া, ১১-২৯ নভেম্বর জেলায় জেলায় মহকুমাশাসক, জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ, আইন অমান্য কর্মসূচি পালন করা হবে। জেলায় জেলায় প্রচার-জাঠাও বার করা হবে। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রচারে মানুষের কাছে কী বলা হবে, তা নিয়ে একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করা হবে।
সিপিআইয়ের উদ্যোগ: দলীয় মুখপত্রের ৪৫ বছর উপলক্ষে আগামী শনিবার সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব মৌলালি যুব কেন্দ্রে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন। ওই সভায় রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র ছাড়াও সব বামপন্থী দলের মুখপত্রের সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বামফ্রন্ট-বহির্ভূত পিডিএস, এসইউসি, সিপিআই (এমএল)-সহ বিভিন্ন নকশালপন্থী সংগঠনের নেতারা আলোচনায় যোগ দেবেন বলে সিপিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার বলেন, “সন্তোষ রানা, অসীম চট্টোপাধ্যায়দের পাশাপাশি পিডিএসের সমীর পুততুণ্ডদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের স্বার্থের দাবিতে আন্দোলনে আমরা সমস্ত বামপন্থী সংগঠনকে একটি মঞ্চে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।” |