উন্নয়নই যে জঙ্গলমহলের মানুষের সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ, হিংসা বা রক্তপাত নয়, সেই বার্তা দিতেই শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুনির্দিষ্ট সময় বাঁধা কর্মসূচি নিয়ে ঝাড়গ্রাম যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার খসড়া চূড়াম্ত করতে সোমবার মুখ্যসচিব সমর ঘোষ সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবদের নিয়ে মহাকরণে বৈঠক করেন। সেখানেই বিভিন্ন দফতরের সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনার রূপরেখা ঠিক করা হয়। পরে মুখ্যসচিব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার এই ব্যাপারে চূড়াম্ত অনুমোদন দেবেন।”
জুলাই মাসে জঙ্গলমহলে গিয়ে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মাওবাদী অধ্যুষিত ২৩ ব্লকের সার্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিন মাস পরে আবার যে তিনি জঙ্গলমহলে আসবেন, সেই কথাও জানিয়ে এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো তার পরেই সেখানকার সার্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি তৈরির কাজে হাত দেয় রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলে।
মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরের আগে সোমবারের বৈঠকটিও ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী শুক্রবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর যাবেন। পর দিন সকালে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকেও সংশ্লিষ্ট দফতরের কয়েক জন সচিবেরও থাকার কথা।
এক সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আগামী শনিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ঝাড়গ্রামে গিয়ে জঙ্গলমহলের উন্নয়ন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।” সেই কর্মসূচির মধ্যে থাকছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আদিবাসী উন্নয়ন এবং গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প। ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রী নয়াগ্রামের সুবর্ণরেখা নদীর উপর ভসরাঘাটের কাছে নতুন সেতুর শিলান্যাস করবেন। এক কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এই সেতুটি তৈরি হলে বেলদা, কেশিয়ারি, নয়াগ্রাম রোড প্রভৃতি এলাকার সঙ্গে গোপীবল্লভপুরের যোগসূত্র তৈরি হবে। ফলে সেতুর দুই পারের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও দ্রুত ও সহজ হবে। এই সেতুর জন্য ১৩০ কোটি টাকা খরচ হবে। এই সেতু তৈরির জন্য ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে রাজ্য সরকারকে।
সরকারি মুখপাত্রের কথায়, “সরকারের জমি নীতি অনুযায়ী সড়ক সেতুর জন্য এই জমি অধিগ্রহণে কোনও বাধা নেই। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জনস্বার্থে সরকার এই কাজ করবে।” মুখ্যসচিব বলেন, “শনিবার ভসরাঘাটের ওই সেতুর শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী।” এ ছাড়াও কোন প্রকল্প কত দিনের মধ্যে শেষ হবে, সেই ঘোষণাও মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের মানুষকে জানাবেন।
রাজ্যে স্বাস্থ্যের বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। সেই মতো ঝাড়গ্রামের মহকুমা হাসপাতালকে তিনি জেলা হাসপাতালে উন্নীত করতে চাইছেন। সেই মতো রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবকে এ দিন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে দ্রুত এর পরিকাঠামো গড়ো তোলা যায়।
এ ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি, গোপীবল্লভপুর এবং ঝাড়গ্রামে তিনটি নতুন ডিগ্রি কলেজ করা হবে। ঝাড়গ্রামের কলেজটি গড়ে তোলা হবে মেয়েদের জন্য। বিভিন্ন স্কুলকে উন্নীত করা হবে পরবর্তী স্তরে। বেশ কিছু স্কুলকে মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত করা হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়, এমন স্কুলকেও উন্নীত করা হবে মাধ্যমিক স্তরে। হবে আরও নতুন স্কুল ও হস্টেল। |