সাহিত্য-পত্রিকা প্রকাশের জন্য বাঙালির বৃহত্তম উৎসব দুর্গাপুজোকে বহু দিন ধরেই বেছে নিয়েছে বনগা।ঁ এ বছরেও একাধিক পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। ক্লাবের স্যুভেনিয়রেও জায়গা করে নিয়েছে উঁচু মানের সাহিত্য। নতুন কয়েকটি পত্রিকাও প্রকাশিত হয়েছে পুজোয়। সব মিলিয়ে প্রতি বারের মতোই দুর্গাপুজোয় জমজমাট বনগাঁর সাহিত্য-পরিবেশ।
অভিযান সঙ্ঘের স্যুভেনিয়র ‘স্মরণিকা অভিযান’, ঐক্য সম্মিলনীর ‘ঐকান্তিক’, পশ্চিমপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের ‘স্বীকৃতি’, ১২-র পল্লি স্পোর্টিং ক্লাবের ‘বোধন’, এগিয়ে চলো সঙ্ঘের ‘মধুকর’, বিদ্যায়তন ক্লাবের ‘ঝিনুক’ রামনগর স্পোর্টিং ক্লাবের ‘সহমত’, তালতলা অ্যাথলেটিক ক্লাবের ‘ডালি’, আমলাপাড়া অ্যাথলেটিক ক্লাবের ‘সৈকত’, গাঁধীপল্লি স্পোর্টিং ক্লাবের ‘একতা’, এ বার মেজাজের দিক থেকে অনেকটাই লিট্ল ম্যাগাজিন হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবের ‘চন্দ্রবিন্দু’ এবং মুস্তাফিপাড়া যুবগোষ্ঠীর ‘সংহতি’ও সাহিত্যের উপাদানে সমৃদ্ধ। কয়েকটি স্মরণিকায় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের গল্প, কবিতা, প্রবন্ধের পাশাপাশি ছোটদের জন্য আলাদা পাতা রাখা হয়েছে। |
কয়েক বছর আগেও ক্লাব-স্মরণিকাগুলি থাকত বিজ্ঞাপনে ঠাসা। সাহিত্য সেখানে গৌন। গোটাটাই কেবল পুজোর খরচ তোলার প্রয়োজনে। কেন এই পরিবর্তন? বিভিন্ন ক্লাব, পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিজ্ঞাপন-ভর্তি থাকলে পত্রিকার পাতা কেউ উল্টেও দেখতেন না। বিজ্ঞাপনদাতাদের একাংশও তাতে অখুশি ছিলেন। প্রয়োজনীয় কিছু কপি বিলির পরে বেশির ভাগ বই ক্লাব ঘরেই পড়ে থাকত। কিন্তু সাহিত্যের উপাদান থাকলে এই বইও পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে বলে অনুধাবন করতে শুরু করেন ক্লাব কমিটির লোকজন। এলাকায় যাঁরা লেখালিখি করেন, তাঁদের কাছেও এই বই একটা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে পারে বলে বুঝতে শুরু করেন। তা ছাড়া, শারদোৎসবে বনগাঁয় পত্রিকা প্রকাশের চল ছিলই। তার সঙ্গে একাত্ম্য হওয়ার তাগিদও অনুভূত হতে থাকে। বিদ্যায়তন ক্লাবের সভাপতি শঙ্কর ধর যেমন বলেন, “আমরা গুরুত্ব দিয়ে স্মরণিকাটি প্রকাশ করি। কারণ, এলাকার অনেকেই লেখালিখি করেন। অনেকে বড় জায়গায় লেখা প্রকাশের সুযোগ পান না। এলাকার মানুষকে সুযোগ করে দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ।”
ক্লাবগুলির এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন কবি-সাহিত্যিকেরাও। কবি বিভাস চৌধুরী বলেন, “বনগাঁর সাহিত্য প্রচারের ক্ষেত্রে এটা ভাল বলেই মনে হয়।” কবি মলয় গোস্বামীর কথায়, “ভালই তো, এটা সুস্থতার লক্ষণ।” তবে তাঁর বক্তব্য, অর্থ না হোক, ক্লাব কমিটির তরফে কিছু সম্মান কবি-সাহিত্যকদের দেখানো উচিত লেখা ছাপার বিনিময়ে।
নতুন সাহিত্য পত্রিকার মধ্যে এ বার উল্লেখযোগ্য ‘উষার আভা’, ‘দাঁড়’, ‘আমাদের লোকালয়’। নবম শ্রেণির ছাত্র রুদ্রপ্রসাদ ঘোষ ‘উষার আভা’ পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছে। তার কথায়, “লিট্ল ম্যাগাজিন প্রকাশ বনগাঁর ঐতিহ্য। আমরা সেই পরম্পরায় সামিল হতে চেয়েছি।” ‘আমাদের লোকালয়’-এ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রথম সারির লেখকদের পাশাপাশি স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বনগাঁর যে সব পত্রিকা ধারাবাহিক ভাবে ভাল শারদসংখ্যা বের করছে, তারা হল ‘কবিতা আশ্রম’, ‘শিস’, ‘এবং অন্যকথা’, ‘রোপণ’, ‘দৈনন্দিন’, ‘অণ্বেষা’, ‘বাল্মীকি’, ‘পার্থিব’, ‘বনলতা’, ‘সাঁঝবেলা’, ‘প্রতিভা’, ‘সুচেতনা’, ‘প্রতিবিম্ব’, ‘প্রিয় মেঘদূত’, ‘ঋ’, ‘উজাগর’, কাশফুল প্রভৃতি। ‘পার্থিব’ এ বার পা দিল দশ বছরে। বিগত ন’বছরের কবিতার একটি সংকলন প্রকাশ করেছে তারা। |