রাজ্যের জমি আইনেই ক্ষতিপূরণ দাবি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে
৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ফের আন্দোলনে নামলেন উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার চাষী ও ব্যবসায়ীরা। সোমবার কয়েক হাজার মানুষ আমডাঙার বিডিও অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। প্রতিবাদ সভাও করা হয়। পরে আন্দোলনকারীরা বিডিও নাভেদ আখতারের কাছে তাঁদের দাবিগুলি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, পুরনো জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত জমিনীতি অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ করতে হবে। এ দিন বিডিও-র মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও তাঁদের বিভিন্ন দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিডিও বলেন, “আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে স্মারকলিপি পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
আমডাঙায় এই জমি আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ভূমি ও ব্যবসায়ী রক্ষা কমিটি (আমডাঙা)। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের আওতায় যাঁদের জমি পড়ছে সেই সব সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে তৈরি হয় এই কমিটি। তার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে নানা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে কমিটি। এক সময় এই আন্দোলনের সমর্থনে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এ বার সেই তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকারের কাছেই ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন এই এলাকার চাষি-ব্যবসায়ীরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের জন্য আমডাঙা এলাকায় প্রায় ১০ হাজার বাড়ি, দোকানঘর ও জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এর ফলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত ঘোষ বলেন, “আমরা রাস্তার বিরোধী নই। তবে রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষিত জমিনীতি অনুযায়ী আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা ছাড়া জমির প্রকৃত মূল্য ঠিক করতে পৃথক কমিটিও তৈরি করতে হবে। সেই কমিটিতে আমাদের কমিটির চারজন সদস্যকে নিতে হবে।” এর পাশপাশি কমিটির তরফে আরও কিছু দাবি জানানো হয়েছে। যেমন
১) বর্তমান জমির মূল্যের চারগুণ বেশি দাম দিতে হবে।
২) যাঁদের জমি বা দোকানঘর অধিগৃহীত হবে সেইসব পরিবারপিছু একজনকে চাকরি দিতে হবে।
৩) যে সব পরিবারে চাকরি করার মতো কেউ নেই সেই সব পরিবারের একজন সদস্যের ২০ বছরের পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শুধু তাই নয়, পূর্ত দফতরের জমিতে যে সব ভাড়াটিয়া আছেন তাঁদেরও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে
গত সেপ্টেম্বর মাসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে তাঁদের নিয়ে এক শুনানির ব্যবস্থা হয়। ওই শুনানির বিরোধিতা করে কমিটির দাবি, বিজ্ঞাপনে যাঁদের নাম ছাপা হয়েছে, তার মধ্যে প্রকৃত জমির মালিক এমন বহু মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। কমিটির অভিযোগ, পুরনো জমি আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য প্রশাসনের তরফে বহু জমির মালিককে নির্দিষ্ট ফর্মে সই করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। যদিও অনেকে তাতে সই করেননি। আন্দোলনকারীদের দাবি, জমি নিয়ে যাবতীয় শুনানির কাজ বিডিওর দফতরে করতে হবে এবং জেলাশাসকের দফতরে হওয়া আগের শুনানি বাতিল করতে হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ইতিমধ্যেই কিছু এলাকায় পিলার ফেলা হয়েছে। যদিও আন্দোলনকারীরা হুমকি দিয়েছেন, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের চেক না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা কোনওরকম কাজ করতে দেবেন না। এ ব্যাপারে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকেই শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। তবে সকলে এসেছিলেন কিনা বলতে পারব না। শুনানির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রকল্পের ১৭ কিলোমিটার এলাকার জমি, ঘরবাড়ি সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “জমি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের পরে আগামী দিনে জমি অধিগ্রহণ আইনে পরিবর্তন আসছে। আমডাঙার চাষি এবং ব্যবসায়ীদের উচিত ওই আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করা। যেহেতু এর সঙ্গে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে তাই সকলকেই সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.