ধনলক্ষ্মীকে বরণ করতে চড়া বাজারেও মানুষের ঢল
জ লক্ষ্মীপুজো। ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে উঠবে বাঙালি। আর এই পুজোর মরসুমে বাজারে বাজারে কাঁচা শাক-সব্জি এবং ফল-ফুলের দামে যেন আগুন লেগেছে। চড়া দরে বিকোচ্ছে পালং শাক থেকে ফুলকপি, বেগুন, টমেটো থেকে বাঁধাকপি বা ক্যাপসিকাম। ফলের বাজারে একই অবস্থা। আপেল হোক বা ন্যাসপাতি, বাতাবি লেবুই হোক বা নারকেলসবেরই দাম বেশ চড়া।
সব মিলিয়ে লক্ষ্মীর আরাধনা করতে গিয়ে অগ্নিমূল্যে হাত পোড়াতেই হচ্ছে আম বাঙালিকে। কিন্তু উপায় কী? দৈনন্দিন বাজারই হোক বা পুজোর নৈবেদ্যকোথাও সমঝোতা করার উপায় নেই। ফলে গৃহস্থের হেঁসেলের বাজেট বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে।
লক্ষ্মীপুজোর বাজার সারতে রবিবার ও সোমবার ক্রেতাদের ঢল নেমেছিল দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন বাজারে। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, গাইঘাটা, বসিরহাট, নৈহাটি, শ্যামনগরের মতো মফসস্ল শহরগুলির বাজারে ছিল উপচে পড়া ভিড়। একই ছবি চোখে পড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। বারুইপুর থেকে ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার থেকে কাকদ্বীপ সর্বত্র বিকিকিনি হয়েছে যথেষ্ট। দিনের শেষে বিক্রেতারা খুশি।
ডায়মন্ড হারবারে লক্ষ্মীপুজোর বাজার।
মনের মতো জিনিসপত্র পেয়ে সন্তুষ্ট ক্রেতারাও। শুধু জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম হলে তাঁরা আরও খুশি হতেন বলে জানিয়েছেন। এক ফুটের মাটির প্রতিমা ব্যারাকপুরের বাজারে বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়। খুব দরাদরি করে কেউ কেউ তা নামালেন ১৮০ টাকায়। প্রতি কেজি আপেল বিক্রি হয়েছে ১০০-১৫০ টাকায়, ন্যাসপাতি ৮০-১২০ টাকা, আঙুর ১০০-১৩০ টাকা, পেয়ারা ৫০-৬৫ টাকা, তরমুজ ৪০-৬০ টাকা, পানিফল ৪০-৫০ টাকা, শশা ৪০-৫৫ টাকা। আনারস প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়। নারকেল বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা পিস। পাটকাঠির মতো সরু আখের টুকরো ১০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এই দামের কিছুটা হেরফের রয়েছে জেলার অন্যান্য বাজারে।
সব্জি এবং ফলের বাজার অগ্নিমূল্য হওয়ার পিছনে এই মরসুমের চাষের ক্ষতিকেই কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যারাকপুর চন্দনপুকুর বাজারের ফল ব্যবসায়ী অনিমেষ দাস বলেন, “লক্ষ্মীপুজোর বাজারে আমরাই কিনছি বেশি দামে। পুজোর ফল ভাল না হলে বিক্রি হয় না। তাই খুব লাভ রেখে িবিক্রি করতে পারছি না।”
আগুন লেগেছে ফুলের বাজারেও। রাজ্যের অন্যতম ফুলের বাজার রয়েছে এই জেলারই ঠাকুরনগরে। ঠাকুরনগর ফুল বাজার সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার এক কেজি গাঁদা বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকায়, রজনীগন্ধা ১৯০-২০০ টাকা, এক হাজার জবা ফুলের দাম পড়েছে ৯০-১০০ টাকা। কেজিপ্রতি দোপাটি বিক্রি হয়েছে ৮০-৯- টাকায়। এক হাজার পদ্মের দাম দিতে হয়েছে ৭০০ টাকা। খোলা বাজারে এই দাম আরও কিছুটা বেশি। সমিতির সম্পাদক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, “অন্য বছর লক্ষ্মীপুজোর আগে ফুলের দর কিছুটা কম থাকে। গত অগস্ট মাসের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহু খেতে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ফুল চাষ নষ্ট হয়েছে। সে কারণেই এ বার দাম বেশি।”
তবে অগ্নিমূল্য হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্মীপুজোর বাজারে নতুনত্বও এসেছে। নারকেল নাড়ু, তিলের নাড়ু, তক্তি, এমনকী ধান, দুর্বাও এখন প্যাকেটে করে বিক্রি হচ্ছে। দশকর্মার দোকানের জিনিসপত্রেরও দাম বেড়েছে। ডায়মন্ড হারবার স্টেশন বাজারে সোমবার দুপুর থেকে ফল ও ফুলের দোকানে উপচে পড়ছিল ভিড়। সেই সঙ্গে প্রতিমাও বিক্রি হয়েছে দেদার। একই ছবি দেখা গিয়েছে, ক্যানিং, মগরাহাট, কাকদ্বীপ বা জেলার অন্য বাজারেও।
উলুবেড়িয়া বাজারে ২ ফুটের লক্ষ্মীপ্রতিমা সোমবার বিকিয়েছে ৩০০ টাকায়। বড় ঘট ৮০ টাকা, মাঝারি ঘট ৫০ টাকা এবং ছোট ঘট বিকিয়েছে ১০ টাকায়। ফলের মধ্যে শশা ৩০ টাকা কেজি, পানিফল ৪০ টাকা কেজি, এক ডজন কাঁঠালি কলা কিনতে সাধারণ মানুষকে দিতে হয়েছে ৩০ টাকা। প্রতিটি ডাবের দাম পড়েছে। ২০ টাকা।
নাতিকে নিয়ে ফলের বাজারে ঘুরে আনাজের বাজারে ঢুকে পদে পদে নাকাল হচ্ছিলেন প্রবীণ বিশ্বনাথ দত্তরায়। বাড়িতে প্রতি বছর জাঁকজমক করে লক্ষ্মীপুজো করেন। কিন্তু এ বার দাম শুনে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। তাঁর কথায়, “সব কিছুরই অস্বাভাবিক দাম। সব কিছুই অল্প অল্প করে কিনতে হল। পুজোটা তো আর বন্ধ রাখা যায় না। বাড়িতে ইতিমধ্যেই লোকজন এসে গিয়েছে।”
বাড়িতে পুজোর জন্য ২ ফুটের লক্ষ্মীপ্রতিমা খুঁজছিলেন কালীনগরের মৌসুমি দাশগুপ্ত। কিন্তু দাম শুনে তিনি অবকা। সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না কী করবেন। তাঁর কথায়, “গতবার ৩০০ টাকায় প্রতিমা, বাজার সবই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার বাজেট অনেক বেড়ে গিয়েছে।” জেলার অন্যান্য বাজারগুলিতেও প্রতিমা ও জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমবেশি।
দামবৃদ্ধির আঁচ পেয়েছেন হুগলির জেলার ক্রেতারাও। আরামবাগে আপেল বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি, ন্যাসপাতি ৭০ টাকা কেজি, একটি মুসম্বি লেবু ৬ টাকা, শশা ৩০ টাকা কেজি, নারকেল এক পিস ১৫ টাকা, কাঁঠালি কলা ৬ টাকা জোড়া, আঙুর ২০০ টাকা কেজি, আখ ১০ টাকা পিস। জেলার অন্যান্য বাজারেও এই দামের খুব একটা হেরফের ছিল না। শ্রীরামপুর ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন বাজারে এক-একটি লক্ষ্মীসরা বিকিয়েছে ৩০-৪০ টাকায়। এক দম ছোট লক্ষ্মীপ্রতিমা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। এর পর ধাপে ধাপে দাম বেড়েছে।
বাজার যতই অগ্নিমূল্য হোক, আজ মঙ্গলবার লক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে উঠবে দুই জেলাই।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.