ধনদেবীর পুজোর আয়োজন করতে গিয়ে রীতিমত ভাঁড়ারে টান পড়ছে আম বাঙালির। তাই মনে মনে ‘এসো মা লক্ষ্মী’ বললেও দেবীকে বসানোর আয়োজন করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কোজাগরীর আগের দিন বাজারে সরা থেকে সব্জি, ফল থেকে দশকর্মা, লক্ষ্মীর ঝাঁপি থেকে মুদিখানার জিনিস পত্র সবই অগ্নিমূল্য। মালা, চাঁদমালা কিংবা শাঁখার মত দশকর্মার জিনিসের দাম গতবারের তুলনায় দেড় গুণ বেড়েছে। করিমপুরের মুদিখানা ও দশকর্মা ব্যবসায়ী মলয় সাহা বলেন, ‘‘কাঁচামালের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় জিনিসের দাম বেড়েছে। মাস কয়েক আগে থেকেই বেড়েছে মুদিখানার জিনিসের দামও।’’ এক কেজি মুগডালের দাম এখন ১১০ টাকা, সর্ষের তেল ৮৫ টাকা, গোবিন্দভোগ চালের দাম ৪০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকায়।
এ দিন ফলের বাজারে ঢুকেও দাম শুনে চমকে উঠতে হচ্ছে কৃষ্ণনগর, চাপড়ার বাসিন্দাদের। দইয়ের বাজারে আপেলের কেজি গড়ে ৮০ থেকে ১১০ টাকা, ন্যাসপাতি ৬০ টাকা, আঙুর ১০০ থেকে ১১০ টাকা। করিমপুরে ফলের দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। আপেল এখানে ১২০ টাকা কেজি, ন্যাসপাতি ৮০ টাকা, আঙুর ১৫০ টাকা, নারকেল ৩০ টাকা জোড়া। অন্য দিকে নবদ্বীপে আপেলের দাম ১০০ থেকে ১১০ টাকা। মাপের অনুপাতে একটি নারকেলের দামই ২৫ থেকে ৪০ টাকা। দইয়ের বাজারের সুকুমার সাধু খাঁ কিংবা করিমপুরের নিতাই হালদারের মত ফল ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘সোমবার আর কী দাম দেখছেন? লক্ষ্মীপুজোর দিন দাম আরও বাড়বে। কী আর করব, আমাদেরও যে বেশি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে তবে পুজোর পরে দাম আবার পড়ে যাবে।’’
কোজাগরীর আগে সব্জি বাজারও কিছু কম যায় না। করিমপুরে ফুলকপি ১৫ টাকা পিস, বেগুনের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পটল ১৬ থেকে ২০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। চাপড়াতে আবার ফুলকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা পিস, বেগুনের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। নবদ্বীপে ফুলকপির দাম গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। করিমপুরের সব্জি ব্যবসায়ী গোবিন্দ রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘পুজোর কারণে কিছু সব্জির দাম বাড়লেও বেশিরভাগ সব্জির দাম আগের থেকে কিন্তু কমেছে। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে সব্জি চাষ ব্যাপক মার খেয়েছিল। বাজারে সব্জির জোগানও কমে গিয়েছিল। তখন দামও বেড়েছিল। এখন তো আবহাওয়া ভালো হয়ে গিয়েছে। বাজারে সব্জিও আসছে। ফলে দুই একটি জিনিসের দাম যা একটু বেড়েছে পুজোর পর আবার কমে যাবে।’’
করিমপুরের রুমা ঘোষ বলেন, ‘‘পুজোর আগে বাজার একেবারে আগুন হয়ে আছে। গাঁদার মালার দাম যেখানে ৩ থেকে ৪ টাকা, সেখানে আজ দাম নিল ৬ টাকা একটা পদ্মফুলের দাম ১০ টাকা। আর ফল, মুদিখানা কিংবা দশকর্মার জিনিসপত্রের দামও আকাশছোঁয়া।’’
সদ্য শেষ হল দুর্গাপুজো। বিস্তর খরচ হয়েছে সেখানে। এর পরে রয়েছে কালীপুজো, ভাইফোঁটা। সেখানেও বড় খরচের ধাক্কা। তার মধ্যে এই লক্ষ্মীপুজোর মরসুমে বাজারের যা মতিগতি, তাতে সাধারণ মানুষ সত্যিই অস্বস্তিতে পড়েছেন।
নদিয়ার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সহ সভাপতি বিধান দত্ত বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর কারণেই জিনিসপত্রের দাম এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। পুজোর পরেই আবার দাম কমে যাবে। এই মূল্যবৃদ্ধিটা কিন্তু সর্বত্র একরকম নয়। নবদ্বীপ, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর কিংবা করিমপুরে একই জিনিসের দাম কিন্তু আলাদা। কোন সামঞ্জস্যও নেই। এই সময়ে ফড়েদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদেরও বেশি দাম দিয়ে জিনিস কিনতে হচ্ছে। আশা করা যায় পুজোর পরে এই সমস্যাটা আর থাকবে না।’’ |