কাহিনির চালচিত্রে
পুজো রাজবাড়িতে
প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা। নলখাগড়ার জঙ্গলে ঘেরা খাগড়ার প্রান্তে বন্দরশহর কাশিমবাজারের খ্যাতি তখনই দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও সমুজ্জ্বল। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শহর কাশিমবাজারের রাজা কৃষ্ণনাথ ও তাঁর অকাল প্রয়াণের পরে তাঁর মামা মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর রাজ্যপাটের তখন ভরা যৌবন। পূর্ববঙ্গের পিরোজপুর থেকে ওই সময় কাশিমবাজারে ভাগ্যন্বেষণে হাজির হলেন বর্তমান ছোট রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা অযোধ্যানাথ রায়ের এক পূর্বপুরুষ। তিনি মূলত ছিলেন রেশম ব্যবসায়ী। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লক্ষ্মীঠাকুরের পৃথক মন্দির।
ওই মন্দির প্রতিষ্ঠার কাহিনি শোনালেন কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির বর্তমান রানিমা সুপ্রিয়াদেবী। তিনি বলেন, “৩০০ বছরেরও আগে কাশিমাজারে বসতি গড়া রায় দম্পতির কাছে এক দিন এক দীনহীন বালিকা খেতে চায়। একটি ঘরে বসিয়ে যত্নআত্তি করে ওই বালিকাকে অন্ন দেওয়া হয়। তার পর থেকে দ্রুত সমৃদ্ধশালী হওয়া শুরু। সেই থেকে মনে করা হয়, ওই বালিকা অতিতুচ্ছ ভিখারিনী নয়। আসলে সে দিন ভিখারি রূপে স্বয়ং লক্ষ্মীই আবির্ভূত হয়েছিলেন। যে ঘরে বসিয়ে ওই বালিকাকে অন্নভোগ দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘরটি পরবর্তীতে লক্ষ্মীর মন্দিরে রূপান্তরিত করা হয়।” কাশিমবাজারের ওই ছোট রাজবাড়িতে কোজাগরীর রাতে পাথরের থালায় জল ঢালা হয়। ওই জলের উপর কোজাগরী পূর্ণিমার প্রতিবিম্ব দর্শন রাজবাড়ির লক্ষ্মীপুজোর অন্যতম আচার।
বহরমপুর শহরের গোরবাজার এলাকায় রয়েছে মহনানন্দ আশ্রম। ওই আশ্রম লাগোয়া এলাকায় কৃষ্ণনাথ কলেজের সংস্কৃতের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কেদারেশ্বর চক্রবর্তীর বাড়ি। তাঁর বাড়িতে রয়েছে অষ্টধাতুতে গড়া কয়েকশো বছরের প্রাচীন লক্ষ্মীদেবীর বিগ্রহ। উচ্চতা মাত্র আড়াই ইঞ্চি। সংস্কৃতজ্ঞ চক্রবর্তী পরিবারের ওই দেবীকে অবশ্য উচ্চতা দিয়ে মাপা যাবে না। কয়েক পুরুষ ধরে হুগলি, বিক্রমপুর ও নোয়াখলি ঘুরে ওই বিগ্রহ বর্তমানে বহরমপুরে উকিলাবাদ রোডে মহনানন্দ আশ্রমের পাশে সংস্কৃত পণ্ডিতের বাড়িতে থিতু হয়েছেন। অমলেন্দুবাবু বলেন, “আমাদের বাড়ির লক্ষ্মীর আরাধনায় বৈদিক, তান্ত্রিক ও পৌরাণিক রীতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। আর ভোগ তৈরি হয় নারকলের কুর, চিড়ে, চিনি ও বাড়িতে তৈরি নারকেল নাড়ু দিয়ে। তাকে বলে কোজাগর ভোগ।”
তখন ১৮৯৬ সাল। বহরমপুর শহরের নতুনবাজার এলাকার ৩ নম্বর গিরিজা চক্রবর্তী লেনের জজ সাহেবের বাড়িতে বরাবরের মতো সে বারও গৃহদেবী জগদ্ধাত্রীর পুজোর আয়োজন চলছে। অবিভক্ত বাংলার সাব-জজ রাশভারি রাধাকৃষ্ণ সেনের সামনে হাজির তাঁর বালবিধবা কন্যা বিন্দুবাসিনীদেবী। বিন্দুবাসিনীদেবীর অনুরোধে ওই বছর থেকে পারিবারিক জগদ্ধাত্রীর মন্দিরে শুরু হল দেবীদুর্গা ও লক্ষ্মীঠাকুরের আরাধনা। বর্তমানে ওই পুজো পরিচলনা করেন বৃদ্ধা সবিতাদেবী। তাঁদের লক্ষ্মী পুজোর প্রকরণ ও রীতি অভিনব। সমবচ্ছর কুলুঙ্গিতে রাখা থাকে পেল্লায় সাইজের পিতলের হাঁড়ি। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আগে কুলুঙ্গি থেকে নামানো হয় সেই হাঁড়ি। সবিতাদেবী বলেন, “ওই হাঁড়িতে রাখা হয় ধান, কড়ি, চাল মাপার জন্য সামন্ত যুগে ব্যবহৃত বেতের তৈরি কাঠা, সিঁদুরগাছা, শাঁখা, পলা, লোহা, কাঁসা পিতলের তৈরি বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি। তার পর ওই হাঁড়ি লক্ষ্মীর বেদির পাশে পৃথক একটি সিংহাসনে রাখা হয়। একই সঙ্গে লক্ষ্মীর ও ওই হাঁড়ির পুজো দেওয়া হয়। ফের ভক্তিভরে ওই হাঁড়ির পুজো দেওয়া হয় ভাদ্রমাস, চৈত্রমাস ও পৌষমাসে। ওই তিনটি মাসের হাঁড়িপুজোও আসলে লক্ষ্মীরই পুজো।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.