বিজয়ার পালা সাঙ্গ লক্ষ্মীপুজোয়
ক্ষ্মী যখন আসবে ঘরে--বিজয়ার পরে আবাসনের পুজো মণ্ডপে জ্বলে থাকা সোহাগ প্রদীপে সংসারের মঙ্গলকামনায় সম্বল শুধু আন্তরিকতা আর ঘরোয়া পরিবেশ। সারা বছরের ব্যস্ততা দূরে সরিয়ে সব পরিবারের এক হয়ে যাওয়াই লালদিঘি রোডস্ আবাসনের পুজো থেকে পদ্মা হাউজিং পুলিশ আবাসনের পুজোর বিশেষত্ব। পুজোর উন্মাদনা ছিল সেচ-জলপথ আবাসনের পুজো থেকে ভাগীরথী সরকারি আবাসনের পুজোতেও। সেই মণ্ডপের কোথাও কোথাও এই দিন আসবেন লক্ষ্মী। পুজো হবে আবাসনের ঘরে ঘরেও।
পুজোর ছুটি শেষ। বুধবার থেকে সরকারি বিভিন্ন দফতর খুলে যাওয়ায় ফের শুরু জীবনের রোজকার রুটিন। তবে সামনের পুজোর জন্য দিন গোনা শুরু আজ থেকেই। বছরের অন্য সময়ে রাস্তা-ঘাটে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে ব্যস্ততার কারণে দু-দণ্ড দাঁড়িয়ে কথা বলার অবসর থাকে না অনেকেরই। পুজোর সময়ে সেই আবাসিকদের সঙ্গেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে আড্ডা। তাই বৃহস্পতিহার ভাসানের পর থেকে বিজয়ার উৎসব চলছে আবাসিকদের মধ্যে। আবাসনের এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকের চলছে বিজয়ার মিষ্টিমুখ।
প্রায় ৭ বছর আগে দুর্গাপুজোর সূচনা হয় বহরমপুরের ভাগীরথী পাড় লাগোয়া ভাগীরথী সরকারি আবাসনে। আবাসনের মহিলারাই উদ্যোগী হয়ে পুজোর প্রচলন করেন। তবে তাতে পুরুষরাও সামিল হন। পুজো প্রচলনকারীদের মধ্যে অন্যতম রত্না গুহ রায় বলেন, “পুজোর চার দিন আবাসনে অন্ধকারই থাকত। তখন আমরা আবাসনে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিই। চার দিনের মধ্যে চাঁদা সংগ্রহ করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে চমকে দিয়েছিলাম সকলকে। এখন তো গুছিয়ে, পরিকল্পনা করে পুজো চলছে।” তিনি বলেন, “আবাসনের ৪৬টি পরিবার পুজোর কয়েকটা দিন একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠেন। আবাসনের এক-এক জনের বাড়িতে বিজয়া দশমী করতে গিয়ে ভীষণই আনন্দ করতাম। সারা বছর ভালো থাকার রসদ পুজোর ওই কটা দিন সংগ্রহ করে নিয়েছি।”
পদ্মা পুলিশ আবাসনের পুজো কমিটির সদস্য থেকে পুরোহিত সকলেই পুলিশ কর্মী। পরনে পুজোর নতুন পোশাক। পুজোর মন্ত্র পড়ছেন পুলিশ, আবার পুজোর কাজে সহায়তা করছেন যিনি তিনিও পুলিশএভাবেই পুলিশ কর্মীদের মিলিত উদ্যোগে মেতে ওঠে ওই পুজো কমিটির মণ্ডপ চত্বর।
পুজো কমিটির সম্পাদক সমীরণ দে বলেন, “ডিউটি করতে করতেই পুজোর চারটে দিন কেটে যায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পুজোতে আনন্দ করার আর অবসর কোথায়? তাই ২৩ বছর আগে পুলিশ পরিবারের সদস্যদের পুজোর আনন্দ দিতেই শুরু করা হয়েছিল আবাসনের পুজো।” পুজোয় চাঁদা তোলার ক্ষেত্রে আইসি, ওসি, কনস্টেবলকোনও ভেদাভেদ নেই। আবাসনের ৩০৬টি পরিবারের সকলের কাছ থেকেই সমান চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।”
পদ্মা পুলিশ আবাসনের প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে একাদশীর দিন। তার আগে দশমীর সন্ধ্যায় পুলিশ কর্মীদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কচিকাঁচারা একক আবৃত্তি, নৃত্য, গান পরিবেশন করে। রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন পুলিশ কর্মীদের স্ত্রী-রা। এ বছর ওই পুজো কমিটির মণ্ডপ সেজেছে জমিদার বাড়ির আদলে। পৃথক চালার প্রতিমা। তাতে ছিল ডাকের সাজ। আবাসিক দেবযানী চক্রবর্তী বলেন, “সকলে মিলে আনন্দ-ফূর্তিতে কখন যে পুজোর চারটে দিন কেটে গেল, টেরই পেলাম না। পুজোর সময়ে এই আবাসন ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেও পারি না।”
লালদিঘি রোডস্ কোয়ার্টারের আবাসিকেরা ৪৩ বছর আগে চালু করেন দুর্গাপুজো। তখন বহরমপুরের লালদিঘি পাড়ায় মহা সমারোহে পুজোর আয়োজন হত। মণ্ডপে ভিড় জমাতেন ওই আবাসিকরা। কিন্তু পুজো নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হওয়ায় পূর্ত দফতরের (হাইওয়ে বিভিশন-১) ২৮টি পরিবার আলাদা করে পুজোর সূচনা করেন। সেই শুরু। পুজোকে ঘিরে চার দিন ধরে চলেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে প্রতিযোগিতা।
সেচ ও জলপথের আবাসিকেরা ২৭ বছর ধরে ম্যাগাজিন বিল্ডিং-এ পুজো করছেন। যৌথ পরিবারের মত বসে খাওয়ানোর রেওয়াজ রয়েছে ওই পুজোয়। পুজো কমিটির সদস্যদের কথায়, বাড়ির মহিলারা নিজেদের মত করে আনন্দ করতে পারেন। তাই রান্নার বন্দোবস্ত হয় মণ্ডপে। বহরমপুর লাগোয়া বানজেটিয়া সরকারি আবাসনেও মহা সমারোহে পুজো হয়েছে। আবাসনের ২৪০টি পরিবার ওই পুজোয় যোগ দেয়। ২২ বছরের ওই পুজোয় নবমীতে বসে খাওয়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। এ বছর পুজোর সূচনা হয়েছে কাদাইয়ের আশাবরী আবাসনে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.