শোকের ছায়া হলদিয়ায় মৃতদের শ্রদ্ধা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
পুরীর পথে দুর্ঘটনায় মৃত সহকর্মীদের ছবিতে মালা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন হলদিয়ার বি সি রায় হাসপাতালের কর্মী-আধিকারিকেরা।
শনিবার গভীর রাতে গাড়ি নিয়ে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন হলদিয়ার বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানের ৭ জন আধিকারিক-কর্মী। কিন্তু পুজো আর দেওয়া হয়নি। রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরিকে দ্রুতগতির গাড়িটি ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চালক-সহ আট জনের। বালেশ্বরের সোরো হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে এ দিনই ভোরে দেহগুলি পৌঁছয় মৃতদের বাড়িতে। শুধু ডেপুটি নার্সিং সুপার মীরা দত্তরায়ের দেহ আসে হলদিয়ার হাসপাতালে। উপস্থিত কর্মী-আধিকারিকেরা চোখের জলে শেষ বিদায় জানানোর পরে অন্যদের ছবিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। সোমবার দুপুরে হাসপাতালে স্মরণসভার পরে মীরাদেবীর দেহও কলকাতায় নিয়ে যান তাঁর পরিবারের লোকজন। ভাসুরপো হীরেন্দ্রকিশোর দত্তরায় বলেন, “এ রকম দুর্ঘটনার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনি আমরা। এই ভাবে নিথর দেহ নিয়ে যেতে খুব খারাপ লাগছে।” |
|
স্মরণ। বি সি রায় হাসপাতালে নিজস্ব চিত্র। |
শোকের ছায়া নেমে এসেছে সুতাহাটার বাসুলিয়া গ্রামেও। ৫ নম্বর জাতীয় সড়কে মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় মৃত চালক সৈয়দ মুর্শালিমের নিথর দেহ এ দিনই এসে পৌঁছয় রেললাইনের ধারে মাটির বাড়িতে। ১৭ জনের যৌথ পরিবারে মুর্শালিমের আয় ছিল বড় ভরসা। মৃতের স্ত্রী হালিমা বিবি একুশ দিন আগেই একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। দুর্বল শরীরে শোক সহ্য করার ক্ষমতা শেষমাত্রায় পৌঁছেছে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “সে দিন কোলাঘাট থেকে ফিরে একটু ঘুমিয়েছিল। তার পরেই পুরীর জন্য বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আমাকে সাবধানে থাকতে বলছিল। আর সাবধানে থেকেই বা কী হবে? ওকে ছাড়া এই জীবন কাটবে কী ভাবে জানি না।” বাবার মৃত্যুশোক বোঝার বয়স হয়নি বছর ছ’য়েকের প্রতিবন্ধী সন্তান মহম্মদ হারিসের। তার দিকে তাকিয়ে মুর্শালিমের দাদা সৈয়দ আক্রম আলি সজল চোখে বলেন, “আমাদের গোটা পরিবারই বড় ধাক্কা খেল। কোলাঘাট থেকে ফিরে ও যে পুরী যাবে এটা জানা ছিল না আমার।” এ দিনই বাড়ির সামনে মুর্শালিমকে কবর দেওয়া হয়। |
|