|
|
|
|
পারিবারিক লক্ষ্মীপুজো ঘিরে উৎসব গোপগড়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পারিবারিক পুজো। কিন্তু সেই পরিচয়ের বাইরে এ পুজো যেন সর্বজনীন হয়ে ওঠে। পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামে মেলা বসে। আশপাশের এলাকার মানুষ মেলায় ভিড় করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রার আসর বসে। লক্ষ্মীপুজোর ক’দিন এ ভাবেই মেতে ওঠে মেদিনীপুর শহর-লাগোয়া গোপগড় এলাকা। এ বার আবার নবকুঞ্জ উৎসব। ফলে, পুজোর আনন্দ যেন আরওই বেশি।
গোপগড়ের পাত্র-বাড়ির লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই আশপাশের এলাকায় উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দেয়। এ বারও তাই হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই লাগোয়া গ্রামের মানুষ পুজোর প্রস্তুতি দেখতে গোপগড়ে ভিড় করেছেন। বয়স্কদের হাত ধরে এসেছে ছোট-ছোট ছেলেমেয়েরাও। কেউ মেলা-প্রাঙ্গণে গিয়েছেন। কেউ বা মণ্ডপে এসেছেন।
চাষাবাদ ও চাকরি-বাকরির সূত্রে সম্পন্ন পাত্রদের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর শুরু সেই ১৯৬২ সালে। বলাই পাত্র-র উদ্যোগে পুজো শুরু হয়। পরিবারের এক সদস্য বলেন, “সেটা ’৬২ সাল। ওই বছর জমিতে চাষ ভাল হচ্ছিল না। ফলে কমবেশি এলাকার সবাই বিপদে পড়েছিল। চাষের উপর নির্ভর করেই তো গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের সংসার চলে। তখনই ঠিক হল, লক্ষ্মীপুজো হবে। সেই শুরু।” এর পর থেকে প্রতি বছরই ঘটা করে লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে এখানে। এ বার এই পুজোর সুবর্ণজয়ন্তী। |
|
সেজে উঠছে ‘বারোয়ারি’। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
সোমবার সকালে দেখা গেল, শ্রী ও সম্পদের দেবীর আরাধনার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। অদূরেই লরি থেকে নামানো হচ্ছে মেলার সরঞ্জাম। পাশে তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী দোকান। বলাইবাবুর ছোট ছেলে সুশান্তর কথায়, “পুজোর ক’দিন আনন্দের শেষ থাকে না। আত্মীয়েরা তো রয়েইছেন, আশপাশের গ্রাম থেকেও বহু মানুষ আসেন।” এ দিন আকাশ কিছুটা মেঘলা দেখে খানিক দুশ্চিন্তাতে ছিলেন সুশান্ত। তাঁর বক্তব্য, “হাতে আর সময় নেই। এই সময়ে দুর্যোগ হলে সমস্যায় পড়তে হবে।”
পাত্রদের বাড়িতে এ বার নবকুঞ্জ উৎসব হবে। ফলে পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসাহ আরও বেড়েছে। বাড়ির আশপাশে তৈরি হয়েছে ন’টি মন্দির। পুজো চলবে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত। থাকছে নাম সংকীর্তন। একপাশে স্থায়ী চালা রয়েছে। এখানে একাধিক মডেল থাকবে। যেমন, নীলাচলে মহাপ্রভু, কৃষ্ণের ননী চুরি প্রভৃতি। যা বারোয়ারি বলেই পরিচিত।
সবে দুর্গাপুজো শেষ হয়েছে। সেই পুজোয় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন বাঙালি। কিন্তু গোপগড়ে এই লক্ষ্মীপুজোর আনন্দ যেন দুর্গোৎসবের চেয়েও বেশি। আশপাশের নেপুরা, কনকাবতী এলাকার মানুষও এ পুজোর অপেক্ষায় থাকেন। কনকাবতীর এক বাসিন্দার কথায়, “পাত্রদের বাড়ির পুজোয় আমাদের এখানের সবাই মিলেই আনন্দ করি। বছরভর সবাই সে-জন্য অপেক্ষা করেন। পুজোর সময়ে যাত্রার আসর বসে। মেলা হয়। এলাকার ছেলেমেয়েদের তাই আনন্দ তো হবেই।” এক সময়ে মাওবাদী-আতঙ্কও ছায়া ফেলেছিল গোপগড়ের আশপাশের এলাকায়। এখন অবশ্য তা নেই। পুজোকে কেন্দ্র করে তাই শুধুই খুশির হাওয়া। |
|
|
|
|
|