সার নিয়ে উদ্ভূত সংকট কাটাতে দিশা খুঁজছে আরামবাগ মহকুমা প্রশাসন। আগামী সোমবার এ ব্যাপারে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী। কৃষক, সারের খুচরো বিক্রেতা, বড় ডিলার, উৎপাদক সংস্থার প্রতিনিধিদের ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
আরামবাগ মহকুমায় দু’টি অর্থকরী ফসল আমন ও আলু। মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, আমন চাষের জমির পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর। আলু চাষ হয় প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। এই দুই চাষে বিপুল পরিমাণে সার লাগে। শুধু আলুতেই বিঘা-প্রতি ৩ বস্তা ডিএপি দেন চাষিরা। ইউরিয়া দেন এক থেকে দেড় বস্তা। সামনেই আলুর মরসুম আসছে। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সার তুলে নেওয়াই এখানের চাষিদের রেওয়াজ। ধানের ক্ষেত্রেও অধিক ফলনের জন্য ইউরিয়া দরকার। কিন্তু সমস্ত রকম সারই বাজারে অমিল বলে চাষিদের অভিযোগ।
সারের অপ্রতুল জোগান, সার নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ তুলে বিচ্ছিন্ন ভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে কিছু দিন ধরে। ব্লক স্তর থেকে শুরু করে মহকুমা প্রশাসনের দরবার পর্যন্ত সেই বিক্ষোভ পৌঁছেছে। সার ব্যবসায়ীদেরও বক্তব্য, লভ্যাংশ না বাড়ালে ব্যবসা চালানো মুশকিল।
সারের কালোবাজারি রুখতে কৃষি দফতর ইদানীং ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। সরকারি নির্দেশ মতো, সারের বস্তায় লেখা এমআরপি (ম্যাক্সিমাম রিটেইল প্রাইস) অনুযায়ী সার বিক্রির কথা খুচরো ব্যবসায়ীদের। কিন্তু পরিবহণ খাতে খরচের পরে ওই দামে মাল বিক্রি করে তাঁরা প্রায় কিছুই লাভ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে মালই তুলছেন না অনেকে। কেউ কেউ সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে, কৃষি দফতরের নজর এড়িয়ে বেশি দামেই সার বিক্রি করছেন। মহকুমা ও ব্লক কৃষি দফতর অভিযান চালিয়ে গত এক মাসে প্রায় ৩০ জন সার ব্যবসায়ীকে শো-কজ করেছে। ৫ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আরামবাগ মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সারের দাম বেশি নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বস্তায় লেখা এমআরপি-ই কেবল নেওয়া যাবে। এ ছাড়া, খাতাপত্রও ঠিক রাখতে হবে। চাষিদের সই-সহ সার বিক্রির ক্যাশমেমো কাটতে হবে। প্রতি দিন মজুত মালের হিসেব এবং দাম লিখে দেওয়ালে ঝোলাতে হবে।”
সরকারি দরে কেন সার বিক্রি করা যাচ্ছে না?
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এই মহকুমায় সারের বড় ডিলার আছেন ২৮ জন। পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতা মিলিয়ে আছেন ১২০০ জন। খুচরো বিক্রেতাদের সংগঠন ‘হুগলি জেলা কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী সমিতি’-র খানাকুল ১ ব্লক সভাপতি দেবীপ্রসাদ পাল, আরামবাগ ব্লক সভাপতি নারায়ণ রায়দের বক্তব্য, বস্তা-পিছু মাত্র ৩-৫ টাকা লাভ থাকছে। আবার কখনও লোকসানও হচ্ছে। তাঁরা বলেন, “আমরা সরকারি নির্দেশ মানতে চাই। কিন্তু তা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে। আমাদের দাবি, অন্তত ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হোক বস্তা-প্রতি।” দেবীপ্রসাদবাবু বলেন, “পরিকাঠামো ঠিকঠাক না করে সরকারি ঘোষণা হওয়ায় আমাদের ভুল বুঝছেন মানুষ। তাঁরা ভাবছেন, আমরা কালোবাজারি করার জন্য সারের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করেছি। আমরা লোকসানের ভয়ে বাধ্য হয়ে মাল তুলছি না।” মহকুমার বড় ডিলারদের পক্ষে কামারপুকুরের শ্যামাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নতুন সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত। কিন্তু তা কার্যকর করতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। শুধু প্রশাসনিক স্তরে হুল্লোড় চলছে। কাউকে সাসপেন্ড করছে, কাউকে শো-কজ করছে।” তিনি বলেন, “আমরা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি, এমআরপি অনুযায়ীই মাল দেব। কিন্তু ব্যবসাটা বাঁচানোর জন্য লভ্যাংশ চাই। আমরা খুচরো বিক্রেতাকে মাল দিচ্ছি বস্তা-পিছু ১/২ শতাংশ হারে। এ ভাবে চলে!”
মহকুমা কৃষি দফতরের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ নিতাই হাজারি বলেন, “সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, উৎপাদক সংস্থা মাল পৌঁছে দেবে খুচরো বিক্রেতাদের হাতে। ব্যবসায়ীদের পরিবহণ খরচ গুণতে হবে না। সারের বস্তার সঙ্গে অনুখাদ্য জোর করে গছিয়ে দেওয়া হত বলে খুচরো ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ করছেন। এখন সরকারি নির্দেশে, তা আর তাঁদের নিতে হবে না।” সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যাবে বলে মনে করছেন মহকুমাশাসক। |