রুইয়া নয়, নতুন মালিক চান ডানলপ শ্রমিকরা
ডানলপে পবন রুইয়া অধ্যায়ের অবসান চাইছেন শ্রমিকেরা।
হুগলির সাহাগঞ্জের বন্ধ ওই কারখানার শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, অবিলম্বে বর্তমান মালিককে সরিয়ে দক্ষ কোনও শিল্পপতির হাতে কারখানার ভার তুলে দেওয়া হোক।
ডানলপকে সামনে রেখে এক মঞ্চে চলে এসেছে তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন। তিনটি সংগঠন মিলিত ভাবে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ গড়ে কারখানার পূর্ব দিকের গেটের সামনে ধর্না-মঞ্চে সোমবার থেকে অবস্থান শুরু করেছে। সকাল থেকেই মঞ্চে কারখানার শ্রমিক এবং শ্রমিক-নেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
মহাকরণে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে কারখানার মালিক পক্ষের কী আলোচনা হয়, তা জানার কৌতূহল ছিল সকলেরই। কিন্তু তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন, এক দিনের আলোচনাতেই কোনও সমাধানসূত্র বেরোবে না। মঞ্চ থেকে কোনও ঘোষণা করা না হলেও, প্রতিটি সংগঠনের নেতারাই জানিয়েছেন, তাঁরা কারখানা চালানোর জন্য বর্তমান মালিক পবন রুইয়ার পরিবর্তে নতুন শিল্পপতি চান।
সিটু অনুমোদিত ‘ডানলপ ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক বিতান চৌধুরী বলেন, “শ্রমিকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন পবন রুইয়া। কারখানা চালানোর মতো দক্ষ এক জন শিল্পপতি জরুরি। বর্তমান সরকার যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে। আমরা চাইব, সরকার আরও একটু কঠোর হয়ে বর্তমান মালিক পক্ষকে সরিয়ে দিক।”
কারখানার গেটে শ্রমিকদের ধর্না। নিজস্ব চিত্র
একই সুরে হুগলি জেলা আইএনটিইউসি নেতা তানাজি দাশগুপ্ত বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলছেন। অথচ, নিজেরাই লোক ঢুকিয়ে শ্রমিক আবাসন ভাঙছেন। জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এটা দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজ্য সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, অনেক হয়েছে। আর নয়। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর উপরে আমাদের যথেষ্ট ভরসা আছে।”
আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের দাবি, “হয় সদর্থক ভাবে ডানলপ চালানো হোক। না হলে অন্য পথ খোঁজা হোক।”
এই মুহূর্তে সাহাগঞ্জের কারখানায় ৮৭২ জন স্থায়ী এবং ৪৫০ জন অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন। অনেকেই তাঁদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি তাঁরাও কারখানার মালিক পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। ৩২ বছর ধরে কারখানার ‘হোস’ বিভাগে কাজ করছেন রামেশ্বর সিংহ। তাঁর কথায়, “বাবাও এখানে কাজ করতেন। এমন অবস্থা কখনও হয়নি। বর্তমান মালিকের কাছ থেকে আমরা কিছু আশা করছি না। সরকার কী করে এখন সেটাই দেখার।” ‘ওটিআর’ বিভাগের কর্মী অরবিন্দ হালোরাই বলেন, “বর্তমান মালিকের পক্ষে এই কারখানা চালানো
সম্ভব নয়। এখন ধারে চলছি। এর পরে আর ধারও পাব না। অন্য কারও হাতে কারখানার দায়িত্ব দেওয়া হোক।” একই বক্তব্য তাঁর সহকর্মী অশোক অধিকারীরও।
শ্রমিক সংগঠনগুলি তাদের দাবি ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তুলে ধরবে। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ দিন ধর্না-মঞ্চে কোনও সংগঠনেরই কোনও ঝান্ডা ছিল না। কারখানার জিটি রোডের গেটের দিকে ‘ডানলপ বাঁচাও কমিটি’র স্থায়ী মঞ্চ আছে। সেখানেও ভিড় করেন শ্রমিকেরা। এর মধ্যেই এ দিন সকাল থেকে জিটি রোডের দিকের গেটের কাছে কিছু লোককে কারখানার একটি নির্মাণের একাংশ ভাঙতে দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, রীতিমতো তাঁবু খাটিয়ে প্রতিদিনই ভাঙার কাজ চলছে। মাটি খুঁড়ে ইট তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং শ্রমিকেরা যে কারখানার বর্তমান মালিকের অপসারণ চাইছেন, সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাঁরা ওই দাবিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, যে কেউ নিজের বক্তব্য জানাতেই পারেন। এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। প্রতি মাসে ৩ কোটি টাকা করে খরচ হচ্ছে। সরকারকে জানানো হয়েছে, কারখানা চালানোর মতো পুঁজি নেই। কোনও ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করলে সরকার যাতে মধ্যস্থতা করে, সে ব্যাপারে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। উৎপাদন শুরু হলে শ্রমিকদের বকেয়া মেটানো যাবে। কারখানায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ার জন্যও সরকারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
রুইয়া গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র বলেন, “ওখানে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা রয়েছে। তিন মাসেও নতুন সরকার ব্যবস্থা নেয়নি। শ্রমমন্ত্রীও বৈঠকে সমস্যাটির মান্যতা দিয়েছেন। নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার নিশ্চয়তা দিক। কারখানা খোলার ব্যাপারে আমাদের ম্যানেজিং কমিটি যা সিদ্ধান্ত নেবে তা সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.