ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী-অধ্যুষিত এলাকার পঞ্চায়েতগুলির উন্নয়নে আধিকারিক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগে আর্থিক সাহায্য করবে কেন্দ্র। এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশের দু’দিনের সফর শেষে কেন্দ্রের কাছ থেকে এই ‘আশ্বাস’টুকু আদায় করতে সফল হয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় মাওবাদী-দৌরাত্ম্যের দাওয়াই হিসেবে প্রযুক্তিবিশারদ দক্ষ আধিকারিকেরাই ‘ভরসা’ হয়ে উঠতে পারেন বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজেও মেনে নিয়েছেন।
এমনিতে, ঝাড়খণ্ডে ১০০ দিনের কাজের শ্লথ গতি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিছুটা অসন্তুষ্ট। ঝাড়খণ্ডের পরিস্থিতি বোঝাতে আরও দু’টি মাওবাদী-প্রভাবিত রাজ্য ছত্তীসগড় ও অন্ধ্রপ্রদেশের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন রমেশ। তিনি বলেন, “১০০ দিনের কাজের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় তহবিলের অনেকটাই নিজের সুবিধায় ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছে ছত্তীসগড় ও অন্ধ্রপ্রদেশ। অন্ধ্র ১২ হাজার কোটি টাকা ও ছত্তীসগড় ৩০০০ কোটি টাকা খরচা করতে সফল। সেখানে ঝাড়খণ্ডের কাজের দৌড় মাত্র ১৫৫৮ কোটি টাকা।” ১০০ দিনের কাজের দূর্নীতি ও এই কাজের প্রসারে যুক্ত সমাজকর্মীদের খুনের ঘটনায় এ বছরে লাতেহার ও বোকারো জেলায় সাময়িক ভাবে এ কাজের অনুদান বন্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্র। তবে ঝাড়খণ্ডের প্রতি কেন্দ্রের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ মনোভাবের অভিযোগ অমূলক বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী। শুধু এ রাজ্য নয়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশে ১০০ দিনের কাজের গতি নিয়ে কেন্দ্র খুশি নয়।
তবে ঝাড়খণ্ডে উন্নয়নের পথে এখনও মাওবাদীরা যে অন্তরায় তা মেনে নিচ্ছেন রমেশ। লাতেহার, সিমডেগা, লোহারডাগা, গুমলার মতো জেলায় মাওবাদীদের লেভি দিতে গিয়েই ঠিকাদারেরা সড়ক নির্মাণের কাজে পিছু হটছেন বলে রমেশ মন্তব্য করেন। মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঝাড়খণ্ডকে খোলা মনে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ঝাড়খণ্ডের কমিশনার অজয় কুমার সিংহ অবশ্য মনে করেন রাজ্যে সদ্য গঠিত পঞ্চায়েতগুলির ‘অপ্রস্তুত’ দশার ফলেই গ্রামে উন্নয়নের গতি এতটা শ্লথ। তিনি বলেন, “উন্নয়ন কার্যকর করতে অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির প্রয়োগ দরকার হয়। বিভিন্ন পঞ্চায়েতে গড়ে ওঠা প্রজ্ঞা কেন্দ্রগুলিকে যাবতীয় প্রশাসনিক ভার বহনের উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে। ১০০ দিনের কাজের খতিয়ান রাখা থেকে শুরু করে গ্রামবাসীদের কাজের মজুরি দেওয়া—সব প্রজ্ঞা কেন্দ্র থেকেই হওয়ার কথা। কিন্তু এই কাজে কিছু সমস্যা হচ্ছে।”
অজয়ের দাবি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঝাড়খণ্ডের এই ‘সমস্যা’র দিকটা বুঝেছেন। সেটা বুঝেই তিনিও রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলিতে উন্নয়ন-সংক্রাম্ত আধিকারিক বা ডেভলেপমেন্ট অফিসার নিয়োগে সায় দিয়েছেন। কম্পিউটারে সড়গড় প্রযুক্তিতে দক্ষ আধিকারিক নিয়োগেও কেন্দ্র রাজ্যের পাশে দাঁড়াচ্ছে। অজয় বলেন, “মন্ত্রী যা বলছেন, পঞ্চায়েতের জন্য দরকারি আধিকারিক নিয়োগের শতকরা ৭৫ ভাগ খরচ দিল্লি বহন করবে। এই সাহায্য মিললে পঞ্চায়েতগুলিতে উন্নয়নের কাজে গতি আসবে।” |