গুজরাতে লোকায়ুক্ত নিয়োগের মামলায় একমত হতে পারল না হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ। ফলে অব্যাহত রইল রাজনৈতিক চাপান-উতোরও।
কংগ্রেস বিষয়টিকে নরেন্দ্র মোদীর পরাজয় হিসেবে দেখাতে চাইলেও বিজেপির দাবি, এ ক্ষেত্রে কোনও পক্ষেরই হারজিত হয়নি। কারণ, মামলাটি এ বার যাবে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে। রাজ্যে লোকায়ুক্ত পদটি শূন্য ছিল প্রায় আট বছর। রাজ্যপাল কমলা বেনিওয়াল কিছু দিন আগে প্রাক্তন বিচারপতি আর এ মেহতাকে ওই পদে নিয়োগ করতেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে তীব্র আপত্তি জানায় বিজেপি। সেই সঙ্গে এই নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হয় মোদী সরকার। সেই মামলায় আমদাবাদ হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ আজ পরস্পরবিরোধী রায় দেওয়ায় গোটা বিষয়টি জটিল আকার নিল। বেঞ্চের এক সদস্য, বিচারপতি আকিল কুরেশি লোকাযুক্ত নিয়োগের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে মত দিয়েছেন। কিন্তু অন্য বিচারপতি সনিয়া গোকানি খারিজ করে দিয়েছেন ওই নিয়োগকে। ফলে নিষ্পত্তির জন্য মামলাটি এখন তিন সদস্যের বেঞ্চে যাবে।
গুজরাত সরকারের দাবি, রাজ্য মন্ত্রিসভার পরামর্শ ছাড়া রাজ্যপাল এই নিয়োগ করতে পারেন না। বিচারপতি গোকানি এই বক্তব্যের পক্ষে মত দিলেও বিচারপতি আকিল কুরেশি জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে রাজ্য বা মন্ত্রিসভার পরামর্শ নেওয়া হলে, সেটাই বরং অসাংবিধানিক কাজ হত। বিচারপতি কুরেশির বক্তব্যের সূত্র ধরে কংগ্রেস এ দিনের রায়কে মোদীর পরাজয় বলে দাবি করলেও বিজেপি তা মানতে নারাজ। তাদের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরের বক্তব্য, “রাজনৈতিক ভাবে আজকের সিদ্ধান্ত সমর্থনযোগ্য নয়। তবে হাইকোর্ট স্পষ্ট কোনও নির্দেশ দেয়নি। সুতরাং কোনও পক্ষেরই হার বা জিত হয়নি। তা ছাড়া সংবিধানের ১৬৩ ধারা অনুযায়ী মন্ত্রিসভার পরামর্শ শুনে চলার কথা রাজ্যপালের। যা এ ক্ষেত্রে হয়নি।” যদিও রায় জানার পরেই বিজেপিকে আক্রমণ করে কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “বিজেপি দিল্লিতে লোকপাল বিল ও সমস্ত রাজ্যে লোকায়ুক্তের নিয়োগ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়। কিন্তু বিজেপি-শাসিত রাজ্যে লোকায়ুক্ত স্বাধীন ভাবে নিয়োগ বা কাজ করতে গেলেই তাদের সমস্যা হয়। সব সময় ওই পদে নিজেদের লোক বসিয়ে রাখতে চায় বিজেপি।”
বিজেপি এখন বিষয়টি আদালতের হতে ছেড়ে দিলেও, নতুন লোকায়ুক্ত নিয়োগের পরই মোদী অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্য সরকারের পরামর্শ ছাড়াই শুধুমাত্র কংগ্রেসের ইচ্ছেয় ওই ব্যক্তিকে নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল বেনিওয়াল। কর্নাটকের মতো গুজরাতেও বিজেপি সরকারকে বিব্রত করতেই ‘ঘোষিত ভাবে মোদী সরকারের বিরোধী’ ওই ব্যক্তিকে লোকায়ুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতিরও দ্বারস্থ হন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল পাটিলের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন, মোদীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতেই কংগ্রেস ওই ব্যক্তিকে নিয়োগ করেছে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি লিখে রাজ্যপালের পদ থেকে কমলা বেনিওয়ালকে সরানোর দাবি জানান। |