জীবনে ষষ্ঠ বারের জন্য কাল রথে চড়তে চলেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। তার আগে বর্ষীয়ান এই বিজেপি নেতার যাত্রার ‘প্রকৃত উদ্দেশ্য’ নিয়েই আজ প্রশ্ন তুলে দিলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁদের প্রশ্ন, এই যাত্রার কারণ কি দুর্নীতি দমন না প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আকাঙ্খা পূরণ?
কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির কথায়, “রথ যাত্রায় বেরিয়ে যে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়, তা বাস্তব। আর তাই যদি হয়, তা হলে কর্নাটক বা উত্তরাখণ্ডের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকেই যাত্রা শুরু করতে পারতেন লালকৃষ্ণ আডবাণী!” তাঁর ব্যাখ্যা, “নেপথ্য কারণটা অন্য। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাধ ফের জেগেছে আডবাণীর। তাই দেশে অস্থিরতা তৈরি করে ভোট এগোতে চাইছেন।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, রথযাত্রার আগে আডবাণীর ‘রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা পূরণের’ বিষয়টি নিয়েই মূলত কেন কটাক্ষ করতে উদ্যত কংগ্রেস?
কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, দুর্নীতির বিষয়টি নিয়েই এখন সরগরম গোটা দেশের রাজনীতি। আর সেটাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যেই ফের রথে চড়তে চলেছেন আডবাণী। কংগ্রেস নেতারা তো বটেই, বিজেপি নেতাদেরও মনে সংশয় নেই যে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য শেষ চেষ্টা করে দেখতে চাইছেন এই প্রবীণ নেতা। এ নিয়ে বিজেপি-র অন্দরেই টানাপোড়েন চরমে। রথযাত্রায় বেরিয়ে আডবাণী যখন দুর্নীতি প্রসঙ্গে কংগ্রেস তথা কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারকে বিঁধতে চাইবেন, তখন প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী সংক্রান্ত প্রশ্নে জেরবার হতে হবে তাঁকেও। আডবাণীর উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্ক যত খুঁচিয়ে তোলা হবে, ততই পাল্টা জবাব দিতে চাইবে বিজেপি। আর তাতেই প্রকাশ্যে এসে পড়বে বিজেপি-র ভিতরের কোন্দল। আর তা প্রকট হলে লাভ কংগ্রেসের। রথযাত্রার পূর্ব সন্ধ্যায় আজ বিতর্কের সেই সুরটাই বেঁধে দিতে চেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সকালে আডবাণীর সাংবাদিক বৈঠক দেখে বিকেলে জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। পরে দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, তাঁরা আডবাণীর রথযাত্রা নিয়ে রোজ দিল্লি থেকে প্রতিক্রিয়া জানাবেন না। কেন না সে ক্ষেত্রে আডবাণীর যাত্রা বেশি গুরুত্ব পাবে, যা কাম্য নয়। তবে যে রাজ্যে আডবাণীর রথ যাবে, সেখানকার রাজ্য নেতৃত্ব প্রতিক্রিয়া জানাবে।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড এমন কৌশল নিলেও বিক্ষিপ্ত ভাবে দলের কোনও কোনও নেতা কিন্তু আজ চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন আডবাণীর যাত্রাকে। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “বাবা রামদেব, অণ্ণা হজারে, লালকৃষ্ণ আডবাণী সবাই এখন রথ যাত্রায় বেরোচ্ছেন! আর এই সব যাত্রায় মদত দিয়ে মোটা চাঁদা তুলছে আরএসএস। তা দিয়ে তাদের পকেট ভরছে!” তবে কংগ্রেসের এক নেতা জানান, দিগ্বিজয়ের এই মন্তব্য মোটা দাগের মনে হলেও যথেষ্ট কৌশলী। তা হল, অণ্ণা, রামদেবের সঙ্গে আডবাণীকে একই পংক্তিতে ফেলতে চেয়েছেন দিগ্বিজয়।
রথযাত্রায় বেরনোর আগে আজ আডবাণী জানান, কেন্দ্রে মনমোহন সিংহ সরকারের পতনই এখন তাঁদের লক্ষ্য। সেই প্রসঙ্গে দুর্নীতি, লোকপাল-সহ একাধিক প্রসঙ্গ তোলেন। জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “কেন্দ্রে ছ’বছর শাসন করেছে বিজেপি তথা এনডিএ। তখন উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আডবাণী। তখন কালো টাকা উদ্ধারে কী পদক্ষেপ করেন তিনি?” মণীশের প্রশ্ন, “এখন রথ যাত্রায় বেরোলেই কি কালো টাকা উদ্ধার হবে, নাকি নির্বাচনী সংস্কার হবে? বরং সে জন্য যে সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রয়োজন, তা কেন্দ্রে ইউ পি এ সরকারই করছে।”
সব মিলিয়ে আডবাণীর এ বারের রথযাত্রা নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিশেষ উদ্বেগ নেই কংগ্রেসের। বরং তাঁরা মনে করছেন, নব্বইয়ের দশক আর ২০১১ এক নয়। তবে এ সবই হল যাত্রা শুরুর আগের ভাবনা। রথযাত্রায় সাড়া পড়লে, অবধারিত ভাবেই নতুন কৌশল ভাবতে হবে কংগ্রেসকে। |