দু’দশক আগে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথের যাত্রাভঙ্গ করে রাতারাতি বিহারের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কাছে ‘মসিহা’ হয়ে উঠেছিলেন লালুপ্রসাদ।
আজ আবার সেই আডবাণীর ‘রথ’-কে আঁকড়েই বিহার রাজনীতিতে ভেসে উঠতে চাইছেন লালুপ্রসাদ। আরজেডি শিবিরের আশা, ফের আডবাণীর রথযাত্রাকে হাতিয়ার করেই রাজ্য-রাজনীতিতে নিজের প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ করতে পারবেন লালুপ্রসাদ।
জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মস্থান সিতাব দিয়ারা। সেখান থেকেই আডবাণী তাঁর জনচেতনা যাত্রা শুরু করছেন। সিতাব দিয়ারা থেকে সিওয়ান জেলার দরোন্দার দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। জেডিইউ বিধায়ক জগমাতো দেবীর মৃত্যুতে ওই আসনে আগামী ১৩ অক্টোবর উপ-নির্বাচন। লড়াই মূলত জগমাতো দেবীর পুত্রবধূ কবিতা সিংহের সঙ্গে আরজেডি প্রার্থী পরমেশ্বর সিংহের। গত কয়েক দিন ধরে সেখানেই ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছেন লালুপ্রসাদ। দিনভর দরোন্দায় পরমেশ্বরের হয়ে প্রচারে লালু বলছেন, “আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন আডবাণী সোমনাথ থেকে অযোধ্যা যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেই যাত্রা বিহারে আমিই থামিয়েছিলাম। আর আজ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নীতীশ কুমার সেই আডবাণীর রথেরই সূচনা করছেন বিহারের মাটি থেকে!” |
আরজেডি-র এক শীর্ষ নেতার দাবি, “দরোন্দার উপ-নির্বাচন থাকায় লালুজির পক্ষে আরও সুবিধে হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের সংখ্যালঘু জনতার কাছে অযোধ্যার ঘা এখনও দগদগে। তাই আডবাণীর রথযাত্রা ভাবলেই তাঁদের ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা মনে পড়ে যায়। লালুজি সেটাই মনে করাচ্ছেন।” আরজেডি শিবির সূত্রে খবর, আগামী কাল সরকার-বিরোধী ‘রাজভবন চলো’ অভিযানে রেকর্ড ভিড় জড়ো করার নির্দেশ দিয়েছেন লালু। দলের সব বিধায়ক-সাংসদদের ওই অভিযানে সামিল হতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দলের রাজ্য সভাপতি রামচন্দ্র পূর্বের কথায়, “কাল জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মদিন। নীতীশ কুমার সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের ঐতিহাসিক মহামিছিলও কাল। আমরা কোনও মতেই আডবাণীকে এ রাজ্যে এসে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াতে দেব না।”
শুধু আরজেডি-ই নয়, আডবাণীর রথযাত্রা থেকে ফয়দা তুলতে ময়দানে নেমে পড়েছে বিহারের সব বিরোধী দলই। কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপম ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন: আডবাণীর যাত্রাপথে কংগ্রেস কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাবে। অন্য দিকে, সিপিআই-এমএলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, রথযাত্রার পথে তারাও বিজেপি-বিরোধী সভা-সমাবেশ করবে।
তবে জেডিইউ-বিজেপি শিবিরের অবশ্য পাল্টা দাবি: লালুর এ সব প্রচার এখন আর ধোপে টিকবে না। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সি পি ঠাকুরের কথায়, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই রথযাত্রা। এর বিরোধিতা করা মানে তো দুর্নীতিকে সমর্থন করা। বিহারের মানুষ এ সব ভালই বোঝেন।” অন্য দিকে, জেডিইউ নেতা শিবানন্দ তিওয়ারি বলছেন, “লালুজি এখন দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। লালুজির সংখ্যালঘু-প্রেম আসলে যে কী তা বিহারের মানুষ বুঝে গিয়েছেন। তা ছাড়া, এখন সারা দেশের মানুষ দুর্নীতিতে জেরবার। তাঁরাও এর থেকে রেহাই চান। তাই লালুজির সাম্প্রদায়িক উস্কানি কাজে দেবে না।”
শিবানন্দ তিওয়ারিরা এই দাবি করলেও, জেডিইউয়ের মধ্যে যে এই নিয়ে উদ্বেগ বা আশঙ্কা একেবারে নেই, এমন নয়। সামনেই উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন। সে কথা মাথায় রেখে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বা কলরাজ মিশ্ররা ইতিমধ্যেই রথযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুত্ব নিয়েও কথা বলতে শুরু করেছেন। জেডিইউ শিবিরের আশঙ্কা, বিহার থেকে বেরিয়ে আডবাণীর রথা উত্তরপ্রদেশে পৌঁছেই সুর পাল্টে ফেললে মুশকিলে পড়বেন নীতীশই। আর তাতে আখেরে লাভ হবে লালুরই।
|