বিতর্কিত টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) রিপোর্ট ফের একবার বিশদে পরীক্ষা করতে চাইছে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)। সিএজি রিপোর্টে জানিয়েছিল, টু জি স্পেকট্রাম নিলাম না করে ‘আগে এলে আগে পাবে’র ভিত্তিতে বিক্রি হওয়ায় সরকারের প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছিল। ঠিক কী পদ্ধতি প্রয়োগ করে সিএজি ওই টাকার অঙ্কে পৌঁছেছিল, তা জানতে চায় পিএসি।
সে জন্য আগামী বৈঠকে প্রাক্তন ডিজি আর পি সিংহ-কে (ডাক ও টেলিযোগাযোগ) ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পিএসি চেয়ারম্যান মুরলীমনোহর জোশী। সূত্রের খবর, সিএজি বিনোদ রাই নিজেই কমিটির সামনে হাজির হয়ে হিসেবের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করার ইচ্ছে জানিয়েছেন এক চিঠিতে। কমিটির সামনে হাদির হবেন সহকারী সিএজি রেখা গুপ্তও।
১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার হিসেব নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে এসেছে কংগ্রেস শিবির। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, গোটা অঙ্কটিই অনুমানসাপেক্ষ। এমনকী কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বল একটি সাংবাদিক বৈঠকে দাবিও করেন, টু-জি বণ্টনে সরকারের ক্ষতি হয়নি বললেই চলে। যদিও সরকারের সেই যুক্তিকে নস্যাৎ করে সিএজি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে গত এক বছর ধরে টানা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছে বিরোধী দলগুলি। এই মামলায় ইতিমধ্যেই জেলে গিয়েছেন তৎকালীন টেলিকমমন্ত্রী এ রাজা। বিতর্কের আঁচ থেকে বাঁচতে পারেননি তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। তাঁর ভাগ্য এখন সুপ্রিম কোর্টের হাতে।
এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি তথ্যের অধিকার আইনে জানা যায়, তৎকালীন ডিজি আর পি সিংহ একটি নোটে জানিয়েছেন, টু-জি বণ্টনে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হিসাবে যে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা আসলে প্রায় ২৬৪৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। যদিও সে সময়ে তাঁর ওই বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করা হয় বলে অভিযোগ। টু-জি-তে ক্ষতির অঙ্ক নিয়ে সিএজি-র মধ্যেই মতপার্থক্য প্রকট হওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে কংগ্রেস শিবিরও। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “যে পরিমাণ টাকা ক্ষতির কথা সিএজি বলে আসছিল, তা নির্ণয়ের পদ্ধতি নিয়ে আমাদের মধ্যে সন্দেহ ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে সিএজি-এরই এক পদস্থ কর্তার হিসাবে ওই অঙ্কের পরিমাণ ভিন্ন।”
বিষয়টি সামনে আসার পরেই পিএসি চেয়ারম্যান জোশীকে চিঠি লেখেন কংগ্রেস সাংসদ তথা পিএসি কমিটির সদস্য সঞ্জয় নিরুপম। চিঠিতে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী সিএজি-র শীর্ষ কর্তারা টু-জি রিপোর্ট বানানোর সময়ে আর পি সিংহের মতো অধস্তন কর্মচারীর বক্তব্য অগ্রাহ্য করেছেন। তাই সঞ্জয়ের দাবি, অবিলম্বে সিএজি-র শীর্ষ কর্তাদের কমিটির সামনে ডাকা হোক। কেন দু’পক্ষের হিসেবে অঙ্কের গরমিল হল, তা বিশদে জানান তাঁরা। অধস্তন কর্মচারীর বক্তব্য কেন শোনা হয়নি, সে বিষয়েও সিএজি- কর্তাদের বক্তব্য জানতে চান তিনি। পিএসি সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেসের ওই সাংসদের দাবি মেনে নিয়েছেন জোশী। আগামী বৈঠকে প্রাক্তন ডিজি আর পি সিংহকে সাক্ষী হিসাবে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। নিরুপমের চিঠি সংবাদমাধ্যমে আসার পরে বিনোদ রাই নিজেই কমিটির সামনে আসার জন্য চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
শুধু পিএসি নয়, সিএজি-র গণনা পদ্ধতি নিয়ে স্পেকট্রাম তদন্তে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) বৈঠকেও ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সদস্যরা। ফলে জেপিসি-ও ওই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
|