কয়লা শিল্পে ৫টি শ্রমিক সংগঠনের সংযুক্ত কমিটির ডাকা ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের জেরে সোমবার কাজ হয়নি পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জ ও ঝাড়খণ্ডের অধিকাংশ খনিতেই।
রানিগঞ্জের মাত্র ১১টি কোলিয়ারিতে শ্রমিক-কর্মীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থার সদর দফতরে ১৫ শতাংশ কর্মী উপস্থিত থাকলেও কোনও কাজ হয়নি। প্রথম শিফ্টেই প্রায় ২০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ধানবাদে কোল ইন্ডিয়া ও তার অন্তর্গত বিভিন্ন খনি কার্যত ছিল শুনসান। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অসম, ওড়িশার খনিতেও ধর্মঘট সফল বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।
পুজোর বোনাস ১৭ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার করা, ঠিকা শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ-সহ ১৬ দফা দাবিতে দেশ জুড়ে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এআইটিইউসি, আইএন টিইউসি, সিটু, এইচএমএস এবং বিএমএস-কে নিয়ে গঠিত সংযুক্ত কমিটি। ইসিএলের তরফে অবশ্য শ্রমিকদের মধ্যে একটি হ্যান্ড বিল বিলি করে জানানো হয়েছে, সংস্থার উৎপাদন, আর্থিক লাভের কথা মাথায় রেখে প্রতি বছর পিএলআর (উৎপাদন ভিত্তিক অনুদান) , বোনাস ইত্যাদি দেওয়া হয়। ২০০৯-’১০ এবং ২০১০-’১১ আর্থিক বর্ষে উৎপাদন প্রায় একই রকম ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষে উৎপাদনের হার সে রকম নয়। সেই হিসেবে পিএলআর দেওয়া হয়েছে। ১৭ হাজার টাকা বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসিএলের সিএমডি রাকেশ সিংহ লিখিত আবেদনে শ্রমিকদের জানিয়েছিলেন, কোল ইন্ডিয়া জনস্বার্থ পরিষেবার অন্তর্গত। তাই কর্মীরা ধর্মঘটে সামিল হলে আইন অনুযায়ী আট দিনের বেতন কেটে নেওয়া হতে পারে। শ্রমিক সংগঠনগুলিকে সিএমডি-র তরফে পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখার অনুরোধও জানানো হয়। |
ধর্মঘটে কাজ থমকে ধানবাদে ইস্টার্ন কোলফিল্ডসের কোলিয়ারিতে। ছবি: চন্দন পাল। |
কিন্তু এর পরেও সোমবার ইসিএলের ১০৯টি খনির মধ্যে মাত্র ১১টি চালু ছিল। সেগুলির বেশির ভাগই রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া এলাকায়। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র তরফে রবিবার ধর্মঘটের বিরোধিতা করে শ্রমিকদের কাজে নামার অনুরোধ করা হয়েছিল। আইএনটিউসি-র কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুণ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, আইএনটিটিইউসি এখনও কয়লা শিল্পে শ্রমিক সংগঠনগড়ার অনুমোদন পায়নি। তাপেতেই তারা সংস্থার হয়ে কথা বলেছে। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কয়লা খাদানশ্রমিক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিংহ অবশ্য বলেন, “আমাদের নেত্রী ধর্মঘটে বিশ্বাস করেন না। তাই এমন সিদ্ধান্ত।”
এ দিকে, বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র ট্রেড ইউনিয়ন একজোট হয়ে কয়লা ক্ষেত্রে ধর্মঘট ডাকাটা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্ত। সিপিআই সাংসদ গুরুদাসবাবু বলেন, “যে-কর্মচারীদের জন্য সংস্থার লাভ হয়, তাঁদেরই কম বোনাস দেওয়ার প্রতিবাদে এই ধর্মঘটে বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের ট্রেড ইউনিয়ন সামিল হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের কাছ থেকেখবর পেয়েছি, কোল ইন্ডিয়া ধর্মঘটীদের আট দিনের বেতন কেটে নেবে বলেছে। তা যদি করা হয়,তা হলে আরও বড় আন্দোলনেরপথ তৈরি হবে।” |