সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরে নতুন চেহারা নিতে যাচ্ছে জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির দিঘি। আগাছায় ভরা স্তূপীকৃত জঞ্জাল, ভেঙে যাওয়া দিঘির পাড়, শুকিয়ে যাওয়া বাগানের বর্তমান হতশ্রী চেহারা ছেড়ে ঝকঝকে মোড়কের অপেক্ষায় রয়েছে শতবর্ষ পুরোনো এই দিঘি। দিঘির উপরে একটি সুসজ্জিত ভাসমান হোটেল হবে। উপর দিয়ে যাতায়াত করবে রোপওয়ে। নিচে থাকবে ঝুলন্ত সেতু। জলাশয় ঘিরে হবে হাইটেক বিনোদন পার্ক। সন্ধ্যায় হবে লেসার শো। একপাশে থাকবে কেতাদুরস্ত সাংস্কৃতিক মঞ্চ। সঙ্গে সভাঘর, কাফেটেরিয়া, বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি ভবন-সহ আরও কত কিছু। ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ি পুরসভার উদ্যোগে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণে এগিয়ে এসেছে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রথম সারির একটি বিনোদন পার্ক সংস্থা। কলকাতা-সহ ভুবনেশ্বরে সংস্থার একাধিক বিনোদন পার্ক দেশের মধ্যে খ্যাতনামা। সংস্থার সঙ্গে জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি দিঘিতে তাঁরা বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর, বিজয়া দশমীর পরের দিন সংস্থার কর্তারা জলপাইগুড়িতে গিয়ে পুরসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দীঘির পাড়ও পরিদর্শন করেন। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাজ শেষ হতে মোটামুটি এক বছর সময় লাগবে। পুর-চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। পুরসভার যে বিনিয়োগ হবে তার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রকল্পের কাজও শুরু করে দিয়েছে পুরসভা। আগামী এক বছরের মধ্যে জলপাইগুড়ি শহরের পর্যটনের নকশাই বদলে দেবে এই প্রকল্প।” দিঘি এবং পাড়-সহ প্রায় ৯ একর জায়গা রয়েছে জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি পাড়ার এই এলাকায়। একসময়ে দিঘির পাড় বাঁধিয়ে সংস্কার করা হলেও জমিটি জলপাইগুড়ির রাজ পরিবারের মালিকানায় থাকায় সরকারি প্রকল্পে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় সৌন্দর্যায়নের বদলে ঝোপজঙ্গলে ভরে গিয়ে আসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয় এলাকাটি। গত মাসেই জলপাইগুড়ি পুরসভা দিঘি সহ গোটা এলাকার মালিকানা গ্রহণ করে। তারপরেই নতুন প্রকল্পটি তৈরি করে পুরসভা। প্রকল্পের নকশাও তৈরি করে ফেলেছে পুরসভা। কী থাকছে প্রকল্পে? দিঘিতে তৈরি হবে ভাসমান একটি হোটেল, যা অনেকটা প্যাগোডার মতো দেখতে হবে। বিলাসবহুল এই হোটেলে রাত্রিবাসের ব্যবস্থাও থাকবে। দিঘির পাড়ে গড়ে উঠবে হাইটেক বিনোদন পার্ক। বিভিন্ন রাইড থাকবে পার্কে। দিঘির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করবে রোপওয়ে। দিঘির দু’প্রান্ত জুড়ে দেবে একটি ঝুলন্ত সেতু। প্রতি সন্ধ্যায় থাকবে লেসার শোয়ের আয়োজন। বড় অনুষ্ঠানের জন্য থাকবে সাংস্কৃতি মঞ্চ, যা কিনা দিল্লির পুরানো কেল্লার মঞ্চের আদলে তৈরি হবে। এ ছাড়াও সামুদ্রিক মাছের আকোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ফুড পার্ক, বিয়ে বাড়ি, সভাগৃহ সবই তৈরি হবে গোলাকার রাজবাড়ির দিঘির নানা প্রান্তে। দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি হচ্ছে সামুদ্রিক মাছের একটি পেল্লায় আকোরিয়াম এবং বাহারি বাগান। পাশাপাশি দিঘি সংলগ্ন রাজবাড়ি সিংহদুয়ারের একপ্রান্তে তৈরি হবে প্রজাপতি উদ্যান। পুর চেয়ারম্যান বলেন, “যা কথা হয়েছে তাতে আগামী এক বছরের মধ্যে গোটা প্রকল্প তৈরি হয়ে যাবে। প্রকল্পটি তৈরি হলে জলপাইগুড়িতে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। উত্তরবঙ্গের বিনোদন মানচিত্রের শীর্ষে যাবে জলপাইগুড়ি।” |