নিষ্ঠা সহকারে লক্ষ্মী পুজো করলে গ্রামে একদিন না একদিন অভাব ঘুচবে। সেই বিশ্বাসেই লক্ষ্মী পুজো শুরু হয়েছে সাঁইথিয়ার কৃষি নির্ভর গ্রাম দেড়িয়াপুরে।
গ্রামে একাধিক দুর্গাপুজো হলেও কোনও লক্ষ্মী পুজো ছিল না। এই গ্রামের ফসল বলতে বছরে একবার ধান হত। ধানের বাজারদরও তেমন ছিল না। ফলে অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোকে ঘিরে যখন বাংলার মানুষজন আনন্দে মেতে থাকেন তখন এ গ্রামের অধিকাংশ লোকজনের চোখে-মুখে লেগে থাকত দুশ্চিন্তার ছাপ। সে প্রায় ৫৫-৬০ বছর আগেকার কথা। অভাব ঘোচাতে গ্রামে একদিন বৈঠকে বসেন বাসিন্দারা। এবং ঠিক হয় নিষ্ঠা সহকারে লক্ষ্মী পুজো করলে একদিন না একদিন মা লক্ষ্মী নিশ্চই গ্রামের অভাব ঘোচাবেন। সেই থেকে সারারাত ধরে পুজো করে আসছেন দেড়িয়াপুর গ্রামের লোকজন।
প্রবীণ বাসিন্দা কামাক্ষ্যা পাল, উত্তম মণ্ডল, তরুণ সিংহরা বলেন, “আমাদের গ্রামে নিত্য সঙ্গী ছিল অভাব-অনটন। বছরে এক বারের বেশি চাষ হত না। তাই গ্রামের অভাব ঘোচাতে বাবা-কাকারা বৈঠক করে গ্রামে লক্ষ্মী পুজো শুরু করেন। যাঁরা এই পুজো শুরু করেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। বাবা-কাকাদের পরে আমরা পুজো চালাতাম। বর্তমানে গ্রামেরই ক্লাব আদর্শ যুব সঙ্ঘের হাতে পুজো পরিচালনার ভার দেওয়া হয়েছে।” তাঁদের বিশ্বাস, “লক্ষ্মী পুজো করে গ্রামের অভাব অনেকটাই দূর হয়ে গিয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ জমি থেকে বছরে দু-তিনবার ফসল ওঠে। ধান ও অন্যান্য ফসলের বাজারদরও আগের চেয়ে অনেক ভাল।”
বাসিন্দারা জানান, গ্রামে লক্ষ্মী পুজো বলতে একটাই। দুর্গা পুজোর মতোই ধুমধাম করে হয়। সারারাত ধরে চার প্রহরে চারবার পুজো হয়। প্রথা মেনে গ্রাম ও আশপাশ এলাকার হাজার তিনেক লোককে খিচুড়ির ভোগ খাওয়ানো হয়। গ্রামের অধিকাংশ মহিলা উপোস করেন। গৃহবধূ ভাগ্যবতী পাল, তনিমা মণ্ডলদের কথায়, “হাজার কাজ থাকলেও লক্ষ্মী পুজোর দিন আমরা গ্রামে থাকি, উপোস করি।” ক্লাবের সভাপতি মাধব বাগদি, সম্পাদক উৎপল সিংহ বলেন, “ময়ূরাক্ষী নদীর উত্তরপাড় ঘেঁষা আমাদের গ্রাম। খুবই উর্বর মাটি। তা সত্বেও একবারের বেশি ফসল হত না। যাই হোক মা লক্ষ্মীর কৃপায় এখন ভাল ফসল হচ্ছে।” |