দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পরে মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। ব্যতিক্রম রাজনগরের লাউজোড় গ্রাম। দুর্গা পুজোর তুলনায় লক্ষ্মী পুজোয় ধুমধাম অনেক বেশি ওই গ্রামে। তাই দুর্গা পুজো চলে গেলেও মন খারাপ করেন না ওই গ্রামের বাসিন্দারা। বরং লক্ষ্মী পুজোর সময় আরও চার দিন চুটিয়ে আনন্দ করতে পারবেন ভেবে খোশ মেজাজে থাকেন সকলে।
বাসিন্দারা জানান, গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের শতাব্দী প্রাচীন ৬টি লক্ষ্মী পুজো আছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি পারিবারিক পুজো ও একটি সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজো। লক্ষ্মী পুজোর দিন থেকে চার দিন প্রতিমা থাকে। বিজয়ার দিন গ্রামের সামনের মাঠে মেলাও বসে। গ্রামের সব প্রতিমাকে মেলা প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। শুধু লাউজোন গ্রামের বাসিন্দারা বা তাঁদের অত্মীয়সজনরা নন, পুজোর দিনগুলোয় এবং মেলার মজা নিতে লাউজোড় গ্রামে উপস্থিত হন আশপাশের ৮-১০টি গ্রামের মানুষ। এমনকী লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মানুষজনও এখানে আসেন।
সোমবার সকালে লাউজোড় গ্রামে গিয়ে দেখা গেল লক্ষ্মী পুজোর প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমার কাজ সম্পূর্ণ না হলেও রঙের কাজ শেষ। চলছে সর্বজনীন পুজোর মণ্ডপ তৈরির কাজ। প্রায় সাড়ে চার হাজার বাসিন্দা বিশিষ্ট গ্রাম যেন আনন্দে মাততে তৈরি। এই প্রস্তুতি পর্ব দেখলে সত্যিই বোঝা যাবে এই গ্রামের গ্রামবাসীরা দুর্গাপুজোর চেয়ে লক্ষ্মী পুজোয় কতটা আনন্দ করেন! |
গ্রামের চক্রবর্তী পরিবার, মালি পরিবার, মণ্ডল পরিবার, ভাণ্ডারী পরিবারের পুজোগুলি গ্রামের আদি ও শতাব্দী প্রাচীন পুজো। পাশাপাশি বাউরি পরিবারের লক্ষ্মী পুজোরও তোড়জোড় চলছে। লাউজোড় গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে, একই প্রতিমাশিল্পী সমস্ত পারিবারিক পুজোর প্রতিমা তৈরি করেন। এই পুজোর জন্য গ্রামে ৮-১০ জনের ঢাকির দল আসে ঝাড়খণ্ডের খেজুরি গ্রাম থেকে। তাঁরা সমস্ত পুজো মণ্ডপেই ঢাক বাজান। গ্রামের সর্বজনীন পুজো কমিটির সম্পাদক সুনীল মালি বলেন, “লক্ষ্মী পুজোর সন্ধ্যার সময় এই গ্রামে আসুন। দেখবেন গ্রামের মানুষ কী ভাবে আনন্দে মাতছে।” প্রায় একই সুর শোনা গেল প্রাচীন পুজো চালিয়ে আসা পরিবারের সদস্যদের গলায়। চক্রবর্তী পরিবারের টোটন চক্রবর্তী, পাল পরিবারের মেয়ে রাসমনী মণ্ডল, মণ্ডল পরিবারের সদস্য সারদাশঙ্কর মণ্ডল ও জয়ন্ত ভাণ্ডারীদের কথায়, “দুর্গা পুজো গ্রামে একটাই হয়। তবে লক্ষ্মী পুজোর মতো এত আনন্দ হয় না। তাই সকলে অপেক্ষা করি লক্ষ্মী পুজোর জন্য। পরিবারের যে সব সদস্য বাইরে থাকেন তাঁরা যেমন এই সময়ে গ্রামে আসেন তেমনি প্রত্যেকের বাড়িতে আত্মীয়স্বজনরা ভিড় জমান এই গ্রামের লক্ষ্মী পুজো দেখার জন্য।”
এখনও প্রতিমা তৈরি হয়নি কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বাসিন্দারা বলেন, “পুজোর দিন এক বেলার মধ্যে সব কিছু তৈরি হয়ে যাবে।”
গ্রামবাসী বাপ্পা মালি, ঝিলিক মণ্ডলরা বলেন, “লক্ষ্মী পুজো চলে চার দিন ধরে। সেই সময়টায় আনন্দ তো হয়ই। তবে বিজয়ার দিন মেলা ও বিসর্জনকে ঘিরে যে আনন্দ হয় সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। কমপক্ষে ৮-১০ হাজার লোকের সমাগম হয় ওই দিন।” |