প্রাথা মেনে শুক্লা চতুর্দশীতে তারাপীঠে পালিত হয় মা তারার আবির্ভাব উৎসব। সোমবার মা তারার আবির্ভাব উৎসবকে ঘিরে তারাপীঠে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রথা অনুযায়ী এই তিথিতে মায়ের আবির্ভাব উৎসব উপলক্ষে মায়ের শিলামূর্তি মূল মন্দির থেকে লাগোয়া বিরাম কক্ষে নিয়ে আসা হয়। রাত তিনটে নাগাদ মূর্তিটি নিয়ে আসা হয়। ভোরে স্নান করানোর পরে মা তারাকে নতুন কাপড়ে রাজেশ্বরী বেশে সাজানো হয়। বছরে এই এক দিন মা তারাকে মন্দিরের বাইরে এনে পশ্চিম দিকে মুখ করে রাখা হয়। অন্য সময় মা তারা মূল মন্দিরে উত্তর দিকে মুখ করে থাকেন। তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “কথিত আছে ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার মলুটি গ্রামে মা মৌলিক্ষা মাতা থাকেন। মৌলিক্ষা মাতাকে লোকে মা তারার বোন বলে জানেন। মলুটি গ্রাম তারাপীঠের পশ্চিমে অবস্থিত। বোন মৌলিক্ষাকে দেখার জন্য এই দিন মাকে মূল মন্দির থেকে বাইরে এনে পশ্চিম দিকে মুখ করে রাখা হয়। এ ছাড়া অনেকে বলেন, তারাপীঠের মহাশ্মশান, দ্বারকানদ মন্দিরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। সেই জন্য মায়ের আবির্ভাব তিথিতে পশ্চিম মুখে মা তারাকে রাখা হয়।” |
শুক্লা চতুর্দশীতে প্রাচীন রীতি মেনে তারাপীঠ লাগোয়া বিভিন্ন এলাকার পারিবারিক দুর্গাপুজোর শরিকেরা পুজো দিতে আসেন। সেই জন্য এ দিন মায়ের স্নান দেখতে পূণ্যার্থীরা ভোর থেকে ভিড় জমান। এ দিন তারাপীঠে প্রতিদিনের মতো মায়ের অন্নের ভোগ হয় না। বেশিরভাগ সেবাইতের বাড়িতে রান্না হয় না। সন্ধ্যার আরতির পরে মা তারাকে মূল মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মা তারাকে স্নান করানোর পরে রাতে ভোগ নিবেদন করা হয়।
আগে তারাপীঠে চতুর্দশীর মেলা বসত। গরুর গাড়ি করে আশপাশ এলাকার মানুষ ওই মেলায় ভিড় করতেন। কেউ আবার হেঁটে তারাপীঠে আসতেন মেলা দেখতে। তখন মেলায় মাটির হাঁড়ি, লোহার কড়াই, কাঠের জিনিস বিক্রি হত। বর্তমানে তারাপীঠে লজ ও অন্য দোকানের আধিক্যে মেলা বসে না। গ্রামীণ মেলার নাগোরদোলা, তেলে ভাজার দোকান আর বসে না। এলাকার বাসিন্দা প্রীতিময় চট্টোপাধ্যায়, উমাকান্ত চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, “যে ভাবে আমরা তারাপীঠে মেলা বসতে দেখেছি। সেটা আর নেই। মনে হচ্ছে তারাপীঠ তার জৌলুস হারিয়েছে।” |